ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

মহাভারত থেকেই ইন্টারনেট: ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:১৮, ১৮ এপ্রিল ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

মহাভারত থেকেই নাকি ইন্টারনেট আবিষ্কার হয়েছে বলে দাবি করেছেন ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব। তার এ দাবি রাজনৈতিক মহলে হাসি-তামাশার খোড়াক যুগিয়েছে বলে জানিয়েছে ভারতীয় গণমাধ্যমগুলো।

যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় যে ইন্টারনেট কবে আবিষ্কৃত হয়েছিল, তাহলে আপনি বোধহয় উত্তর দেবেন আশির দশকে ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ওয়েব আবিষ্কৃত হয়। কিন্তু ষাটের দশক থেকেই ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কম্পিউটারগুলোর সংযুক্তিকরণের জন্য ওয়াইড এরিয়া নেটওয়ার্ক নিয়ে চিন্তাভাবনা বা গবেষণা শুরু হয়েছিল।

ভারতীয় জনতা পার্টি ও রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সংঘের নেতা মি. বিপ্লব দেবের মতে, "মহাভারতে সঞ্জয় যেভাবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে অবস্থান করেও ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন, তা থেকেই বোঝা যায় সেই যুগেও ইন্টারনেট ছিল, স্যাটেলাইট ছিল। না হলে চোখ দিয়ে তিনি অতদূর দেখতে পেতেন কী করে!"

তাঁর মতে, "মাঝখানের সময়কালে অনেক কিছুই বদলে গেছে। বিদেশিরা দাবী করছে, যে ইন্টারনেট বা স্যাটেলাইট তাদের আবিষ্কার।"

মহাভারতে সঞ্জয় যেভাবে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে বহুদূরে অবস্থান করেও ধৃতরাষ্ট্রকে যুদ্ধের বর্ণনা দিয়েছেন, তা থেকেই বোঝা যায় সেই যুগেও ইন্টারনেট ছিল, স্যাটেলাইট ছিল। না হলে চোখ দিয়ে তিনি অতদূর দেখতে পেতেন কী করে!
বিপ্লব কুমার দেব, ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রী
"এটা সেই দেশ, যেখানে লাখো বছর আগে থেকেই বিজ্ঞান আর প্রকৌশল রয়েছে," আগরতলা শহরে একটি কর্মশালার উদ্বোধন করতে গিয়ে এমন মন্তব্য করেন তিনি।

`মহাভারত` আদতে একটি মহাকাব্য বা এপিক। খ্রীষ্টপূর্ব চতুর্থ শতক থেকে দ্বিতীয় শতক পর্যন্ত সমাজের বর্ণনা পাওয়া যায় ঠিকই, কিন্তু সেখানে বর্ণিত প্রতিটি বাক্যই যে বৈজ্ঞানিক সত্য, তা মনে করার কোনও কারণ নেই।

ইন্টারনেট আবিষ্কার নিয়ে ত্রিপুরার মুখ্যমন্ত্রীর এই `নতুন তথ্য` নিয়ে কলকাতার বিজ্ঞান লেখক ও প্রবীণ সাংবাদিক পথিক গুহ বলেন, "এগুলো নিয়ে মন্তব্য করা মানেই বেশী গুরুত্ব দেয়া।"

তবে বিজেপি নেতাদের কাছ থেকে এই প্রথম `নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য` জানা গেছে, তা নয়। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী থেকে শুরু করে তাঁর সরকারের মন্ত্রী বা নানা রাজ্যের বিজেপি নেতারা গত কয়েক বছরে এমন অনেক `নতুন বৈজ্ঞানিক তথ্য` দিয়েছেন, যেগুলো সামাজিক মাধ্যম থেকে শুরু করে বৈজ্ঞানিক মহলে হাসির উদ্রেক ঘটিয়েছে।

• প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী ২০১৪ সালের অক্টোবরে বলেছিলেন যে নিশ্চয়ই সেই যুগে এমন কোনও প্লাস্টিক সার্জন ছিলেন, যিনি হাতির মাথা গণেশের শরীরে লাগিয়েছিলেন।

• কেন্দ্রীয় কৃষিমন্ত্রী রাধা মোহন সিং ২০১৫ সালে `যোগভিত্তিক কৃষিকাজ` কী, তা ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছিলেন যে ওই পদ্ধতিতে বীজের মধ্যে ধণাত্মক শক্তি প্রবেশ করানো হবে। যেন পরমাত্মা শক্তির মাধ্যমে বীজগুলিকে উজ্জীবিত করা যায়।

• ভারতীয় ঋষিরা যোগবিদ্যা সাধনার ফলে `দিব্যদৃষ্টি` অর্জন করতেন, সেটাই টেলিভিশন আবিষ্কারের গোড়ার কথা। একটি বইয়ের মুখবন্ধে লিখেছিলেন মি. মোদী।

• উত্তরখন্ড রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী ও বিজেপি নেতা রমেশ পোখরিয়াল নিশাঙ্কর কথায়, লাখো বছর আগেই কনাদ ঋষি পারমানবিক বিস্ফোরনের পরীক্ষা করেছিলেন।

• রাজস্থানের মন্ত্রী বাসুদেব দেভনানী মন্তব্য করেছিলেন গরুই হচ্ছে একমাত্র প্রাণী, যারা নিশ্বাস নেওয়ার সময়েও অক্সিজেন নেয়, এবং প্রশ্বাস ছাড়ার সময়েও অক্সিজেনই ছাড়ে।

• কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সত্যপাল সিং এ বছর জানুয়ারিতে মন্তব্য করেছিলেন যে ডারউইনের বিবর্তনবাদ বা থিওরি অফ ইভোলিউশন` একটি ভুল মতবাদ। সেটা স্কুল কলেজে পড়ানোই উচিত নয়।

কেন হিন্দুত্ববাদী নেতা-মন্ত্রীরা এধরণের অবৈজ্ঞানিক কথা বারে বারে বলছেন?

বিজ্ঞান লেখক পথিক গুহর মতে, "জনগনকে মিথ্যা জ্ঞান বিতরণ করার অধিকারেরই আরেক নাম ক্ষমতা। মানুষ সেইজন্যই ক্ষমতা পেতে চায়। আর কিছু বলা বোধহয় নিষ্প্রয়োজন।"

 

সূত্র: বিবিসি বাংলা

এমজে/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি