ঢাকা, বুধবার   ১৪ মে ২০২৫

মিয়ানমারের লজ্জা হওয়া উচিত: জাতিসংঘ কমিশন 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৬:৩১, ৫ জুলাই ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশনের প্রধান জায়েদ রাদ আল হোসেন তার দায়িত্ব ছাড়ার আগে মিয়ানমারের তীব্র সমালোচনা করেছেন। তার শেষ প্রতিক্রিয়ায় চার বছরের দায়িত্ব পালনকালে তার দেখা নিপীড়নের মধ্যে রোহিঙ্গাদের ওপর সংঘটিত মানাবাধিকার অপরাধকে স্বতন্ত্র বৈশিষ্টসম্পন্ন আখ্যা দিয়েছেন তিনি। রাখাইনে সংঘটিত নিপীড়ন হত্যাযজ্ঞসহ যাবতীয় ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধে সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরে তিনি মিয়ানমারের উদ্দেশ্যে বলেছেন তাদের লজ্জা হওয়া উচিত।  

মিয়ানমার সেনাবাহিনী গত ২৫ আগস্ট রাখাইনের কয়েকটি নিরাপত্তা চৌকিতে হামলার পর পূর্ব-পরিকল্পিত ও কাঠামোবদ্ধ সহিংসতা জোরালো করে। সন্ত্রাসবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের নামে শুরু হয় নিধনযজ্ঞ। হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত হতে থাকে ধারাবাহিকভাবে। পাহাড় বেয়ে ভেসে আসতে শুরু করে বিস্ফোরণ আর গুলির শব্দ। পুড়িয়ে দেওয়া গ্রামগুলো থেকে আগুনের ধোঁয়া এসে মিশতে থাকে মৌসুমী বাতাসে।

মানবাধিকার সংগঠনের স্যাটেলাইট ইমেজ, আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন আর বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, মায়ের কোল থেকে শিশুকে কেড়ে শূন্যে ছুড়তে থাকে সেনারা। কখনও কখনও কেটে ফেলা হয় তাদের গলা। জীবন্ত পুড়িয়ে মারা হয় মানুষকে। এমন বাস্তবতায় নিধনযজ্ঞের বলি হয়ে রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে পালিয়ে আসতে বাধ্য হয় অন্তত সাত লাখ রোহিঙ্গা। সে কারণেই সম্ভবত; অনেক কষ্ট সত্ত্বেও মিয়ানমারের চেয়ে এ শিবিরকেই নিরাপদ জায়গা মনে করেন রোহিঙ্গারা।

মিয়ানমার সরকারের দাবি আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মির (আরসা) হামলার কারণেই রোহিঙ্গা সংকটের উদ্ভব। সম্প্রতি তারা আরসার বিরুদ্ধে ওঠা মানবাধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠনের ঘোষণা দিয়েছে। রাদ আল হুসেইন হাই কমিশনার হিসেবে মানবাধিকার কাউন্সিলে দেওয়া তার শেষ বক্তব্যে মিয়ানমারের শীর্ষ এক কর্মকর্তার দাবির সত্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলেন।

ওই কর্মকর্তা দাবি করেছিলেন, মিয়ানমার সরকার কেবল একটি একক জনগোষ্ঠীর নয়, সবার অধিকারের সুরক্ষা দিচ্ছে। এদিকে বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে রাখাইনে জাতিসংঘের স্বাধীন তদন্ত দাবি করা হলেও মিয়ানমার এতে রাজি হয়নি। মিয়ানমারের সেই কথিত স্বাধীন তদন্তের প্রশ্নে বলতে গিয়ে রাদ আল হুসেইন মন্তব্য করেন, ‘চার বছর হাই কমিশনারের দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে বহু উদ্ভট দাবি আমি শুনেছি। তবে ইতোমধ্যে মিয়ানমারের যে দাবির কথা বললাম, ভ্রান্ত ধারণা হিসেবে তা একেবারে নতুন ধারার। কিছু লজ্জাতো থাকা উচিত স্যার, কিছুটা হলেও। আমরা বোকা নই।

মানবাধিকার পরিষদের ৩৮তম অধিবেশনের পর আর কোনও বৈঠক হচ্ছে না। দায়িত্ব ছাড়ার আগে এটাই জায়েদ হোসেনের শেষ বক্তব্য। তিনি বলেন, জাতিসংঘের যদি কোনও সদস্য রাষ্ট্র যদি তিনদিনের সহিংসতায় ৭ লাখ মানুষকে তাড়িয়ে দিতে সক্ষম হয় এবং তাতে কোনও আন্তর্জাতিক চাপ না আসে, তবে এই রুমে থাকা বাকিরাও এমনটা করতে পারে।

সর্বশেষ পরিস্থিতি তুলে ধরতে গিয়ে একটি উদাহরণ টেনে হাই কমিশনার বলেন, জানুয়ারি থেকে এপ্রিলের মাঝে ৫৮ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমারে ফেরত গেছে এবং তাদের বিভিন্ন অভিযোগে আটক করা হয়েছে। এরপর রাষ্ট্রপতি তাদের ক্ষমা করলেও বুথিয়াডং কারাগারে পাঠানো হয় তাদের। তবে একে বলা হয় ‘রিসিপশন সেন্টার’।

জাতিসংঘ মহাসচিবের বাংলাদেশ সফর শেষ হওয়ার একদিনের মাথায় কমিশন থেকে এসব মন্তব্য আসলো।

চূড়ান্ত অর্থে রোহিঙ্গাদের নিরাপদ, স্বেচ্ছামূলক এবং মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসনে ভূমিকা রাখতেই জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস শনিবার (৩০ জুন) দিবাগত রাতে ঢাকায় আসেন। সোমবার (২ জুলাই) তিনি কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শিবির পরিদর্শনে যান। সেখানে থাকা অবস্থায় দুপুর ১২টার দিকে তার অফিসিয়াল টুইটার অ্যাকাউন্ট থেকে এ সংক্রান্ত একটি পোস্ট দেওয়া হয়। টুইটারে গুতেরেস লেখেন: ‘বাংলাদেশের কক্সবাজারে এসে আমি মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের কাছ থেকে হত্যা ও ধর্ষণের যে বর্ণনা শুনলাম, তা অকল্পনীয়। তারা ন্যায় বিচার ও নিরাপদে দেশে ফিরতে চায়।’

এসি  

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি