ঢাকা, মঙ্গলবার   ০১ জুলাই ২০২৫

‘শিশুদের শিক্ষা দিতে হবে আনন্দের সঙ্গে’

কাজী ইফতেখারুল আলম

প্রকাশিত : ১৬:১০, ২২ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:২৩, ৩ আগস্ট ২০২৩

ড.সালেহা কাদের

ড.সালেহা কাদের

Ekushey Television Ltd.

নিরলস পরিশ্রম, প্রবল আত্মবিশ্বাস, আর অসীম সাহসিকতার অপূর্ব মেলবন্ধনে মোহনীয় ব্যক্তিত্বের অনন্য উদাহরণ ড. সালেহা কাদের। তিনি একাধারে শিক্ষাবিদ ও  শিক্ষা উদ্যোক্তা, সমাজসেবক। নিজ প্রচেষ্টায় রাজধানীর মিরপুরে গড়ে তুলেছেন আন্তর্জাতিক মানের চেরি ব্লসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল।  স্বনামধন্য এই শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটি তার স্বকীয় শিক্ষা পদ্ধতি এবং আধুনিকতার কারণে ইতোমধ্যেই অভিভাবক মহলে ভূয়সী প্রশংসা কুড়াতে সক্ষম হয়েছে। এই বিশাল কর্মযজ্ঞের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তিনি নিজেই। শুধু এখানেই সীমাবদ্ধ নন তিনি, সমাজের পিছিয়ে পরা জনগোষ্ঠীর কল্যাণে নিজেকে নিয়োজিত রেখেছেন অবিরাম। শিক্ষা বিস্তারে এবং সমাজ সেবাই বিশেষ অবদানের জন্য পেয়েছেন সম্মানসূচক জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পুরস্কার। তিনি ‘চ্যালেঞ্জেস অ্যান্ড প্রসপেক্টস অব ইংলিশ মিডিয়াম এডুকেশন ইন বাংলাদেশ’ বিষয়ে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেন।

তিনি মনের করেন, দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুদের পরিপূর্ণ মানসিক বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষা প্রদান করতে না পারলে শিশুরা তা গ্রহণ করতে চায় না উল্লেখ করে তিনি বলেন, দেশের প্রচলিত শিক্ষা ব্যবস্থা শিশুদেরকে অসুস্থ্য করে তুলছে। শিশুদের খেলাধুলার সময় না দিয়ে লাগাতার লেখাপড়ার চাপ দেওয়াতে তাদের মধ্যে পড়াশুনার বিষয়ে এক ধরনের ভীতি তৈরি হচ্ছে। শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিক ও যুগোপযোগী করে তোলার বিষয় নিয়ে খ্যাতিমান এই শিক্ষাবিদ একুশের টেলিভিশন অনলাইনের মুখোমুখি হয়েছেন। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন কাজী ইফতেখারুল আলম তারেক

 

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: একজন নারী হয়ে কীভাবে স্কুল প্রতিষ্ঠা করলেন?

ড. সালেহা কাদের: আমি ১৯৯১-৯৫ সাল পর্যন্ত একটি সংস্থায় অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে কাজ করেছি। এখানে কম্পিউটার প্রগ্রামিংয়ে দক্ষতা অর্জনের সুযোগ পেয়েছি। এ সময় একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল প্রতিষ্ঠার স্বপ্ন দেখি। মিরপুরে কিন্ডারগার্টেন স্কুল থাকলেও তখনও কোনো ইংরেজি মাধ্যম স্কুল গড়ে ওঠেনি। ১৯৯৬ সালে শুরু হয় আমার স্কুলের কার্যক্রম। মূলত এর সূচনা তারও এক-দেড় বছর আগে থেকেই ছিল। সে সময় অফিস থেকে ফিরে সন্ধ্যায় ও ছুটির দিনগুলোতে প্রতিবেশী ও পরিচিতজনদের সঙ্গে স্কুল প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে পরামর্শ নিতাম। আমার বাবা তখন চাকরি থেকে অবসরে যাওয়ায় সংসারের খরচ চালাতে তার ওপর কোনো অতিরিক্ত চাপ পড়ুক এটা আমি কোনোভাবেই চাইনি। যে কারণে বাড়ির নিচতলা থেকে যে ভাড়া পেতেন সেই ভাড়াতেই তার কাছ থেকে স্কুলের জন্য ভাড়া নিয়েছিলাম। সাড়ে সাত কাঠার ওপরে নির্মিত আমাদের এই দ্বিতল বাড়িটি। আমার স্বামীও তার কিছুদিন পরে চাকরি থেকে অবসরে যায়। কম্পিউটার ও স্পোকেন ইংলিশ শেখানো থেকে সঞ্চিত অর্থ ও চাকরির মাধ্যমে অর্জিত পুঁজি দিয়েই স্কুল শুরু করি। স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীদের আসা-যাওয়ার জন্য একটা বাস কিনতে গিয়ে ছোট বোনের কাছ থেকে ব্যক্তিগত ঋণ করতে হয়েছে। শুরুর বছর ছাত্র-ছাত্রী ছিল ৬০ জন। ছয় মাসের মধ্যেই ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা ১০০ তে গিয়ে দাঁড়ায়। তখন শিক্ষকের সংখ্যা ছিল ১০-১২ জন। পল্লবীর বিভিন্ন বাসায় গিয়ে আমি নিজেই স্কুলের প্রচার করেছি। শুরুতে প্লে গ্রুপ থেকে স্ট্যান্ডার্ড ফাইভ পর্যন্ত ছিল স্কুলের কার্যক্রম। ছাত্র-ছাত্রী বেড়ে যাওয়ায় ১৯৯৯ সালে স্কুল স্থানান্তরের প্রয়োজন হয়ে পড়ে। পৈতৃক ভিটার কাছেই মিরপুর ১০ নম্বর বেনারসি পল্লীতে অবস্থিত ছয় কাঠার ওপর নির্মিত একটি বাড়ির দ্বিতীয় ও তৃতীয়তলা ভাড়া নিই। দুটি ফ্লোরের মাসিক ভাড়া ছিল ৪০ হাজার টাকা। অ্যাডভান্স ছিল চার লাখ টাকা। এত ব্যাপক টাকার সংকুলান করতে না পেরে লন্ডন প্রবাসী আমার ছোট বোনের কাছ থেকে কিছু টাকা ধার নিই। সে সময় শিক্ষকদের বেতন ছিল সর্বনিম্ন তিন হাজার এবং সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা। স্কুলের মাসিক ব্যয় ছিল প্রায় এক লাখ টাকা। আয়ও ছিল তার কাছাকাছি। স্কুল সময়ের বাইরে ছাত্র-ছাত্রীদের ফক্সপ্রো  প্রোগ্রামিং ও স্পোকেন ইংলিশ শিখিয়ে বাড়তি আয়ের জন্য ধীরে ধীরে স্কুলের জন্য তিনটি কম্পিউটার কিনি। সেই আয়ও স্কুলে বিনিয়োগ করেছি। স্কুল থেকে লভ্যাংশ নেওয়ার চিন্তা করিনি। এরই মধ্যে শিক্ষক সংখ্যা বেড়ে হলো ১৮-২০ জন। এরি মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ চুকিয়ে জুনিয়র শিক্ষক হিসেবে এই স্কুলেই যোগদান করে একমাত্র মেয়ে। এখন আমার ছাত্র-ছাত্রী বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫০ জন। এছাড়া ২০০৩ সালে ইউকে থেকে প্রথম ‘ও’ লেভেল পর্যন্ত ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির অনুমতি পাই। দিনের পর দিন বাড়ি ভাড়া উত্তরোত্তর বেড়ে যাওয়ায় ব্যাংকঋণ নিয়ে স্কুলের জন্য একটি আলাদা ভবনের চিন্তা মাথায় আসে। মিরপুর ৬ নম্বর সেকশনে সাত কাঠা জমির ওপর নির্মিত একটি সাড়ে চারতলা বাড়ির সন্ধান পাওয়া গেল। সুদের হার ও সময় বাড়িয়ে ডাউনপেমেন্ট কমিয়ে প্রথম ইনস্টলমেন্ট ২২ লাখ টাকা নির্ধারণ করে একটা লিজিং কোম্পানির কাছ থেকে ঋণের ব্যবস্থা হলো। কিন্তু লিজিং কোম্পানি থেকে পাওয়া সেই ঋণ এখনও পরিশোধ করে চলেছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: দেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে গতিশীল ও যুগোপযোগী করার জন্য আধুনিকায়নের প্রয়োজন কতটুকু?

ড. সালেহা কাদের: আমার মতে শিক্ষা ব্যবস্থাকে আধুনিকায়নের প্রয়োজনীয়তা শতভাগ। পড়াশোনার মানোন্নয়নের জন্য বর্তমানে এর বিকল্প নেই। এক্ষেত্রে ক্লাসটিউন  কতটুকু গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। আধুনিকায়নের ক্ষেত্রে ক্লাসটিউন একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। এটি এমন একটি স্কুল ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার যেটির মাধ্যমে এখন আমাদের শিক্ষক, শিক্ষার্থী আর অভিভাবকদের মধ্যে একটি সেতুবন্ধন তৈরি হয়েছে। সবার সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখা সম্ভব হচ্ছে। সবাই স্কুলের যেকোনো ব্যাপারে নিয়মিত আপডেট পাচ্ছে। মাসিক অভিভাবক সভাগুলো এখন প্রতিদিনকার সভায় রূপ নিয়েছে।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আধুনিকায়নের দিক থেকে চিন্তা করলে চেরি ব্লোসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল কতটা আধুনিক? শিক্ষাদান পদ্ধতি কেমন হওয়া উচিত বলে মনে করেন?

ড. সালেহা কাদের: বর্তমান সরকার ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণের লক্ষে সব সেক্টরে ডিজিটালাইজেশন করছে। সেই ধারাবাহিকতায় শিক্ষাখাতও পিছিয়ে নেই। আমরা প্রযুক্তিকে ব্যবহার করে দক্ষ মানবসম্পদ গড়ে তুলতে বদ্ধ পরিকর। এই ক্ষেত্রে আধুনিকতার কথা যদি বলেন তাহলে আমি বলব চেরি ব্লুসমস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল অনেকটাই এগিয়ে কিন্তু তারপরও আমার মনে হয় আমরা মাত্র ৬০ শতাংশ আধুনিকতা অর্জন করতে পেরেছি। আমার মনে হয় আমাদের আরও অনেক পথ এখনো যেতে হবে। শুধু আমরাই নয়, দেশের সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোকেই আরও বেশি আধুনিক করে গড়ে তুলতে হবে। শিক্ষাদান পদ্ধতিতে শিক্ষকদেরকে আরও মোলায়েম হতে হবে। উদারচিত্তে জ্ঞান বিতরণের মধ্য দিয়েই শিক্ষকদের প্রমাণ করতে হবে যে তারা সেরা। নচেৎ আমাদের আগামী  প্রজন্মের বাংলাদেশের স্বপ্নের জায়গাগুলো শক্তিশালী হবে না।  

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষাকে আনন্দময় করে তুলতে আপনার পরামর্শ কি?

ড. সালেহা কাদের: শিক্ষা আমাদের সবার অধিকার। শিশুদের বইমুখী করতে হলে আনন্দময়ী করা ছাড়া বিকল্প কোন পথ নেই। শিশুরা তো অবুঝ। পড়াশোনার ব্যাপারে তাদেরকে চাপ দেওয়া উচিত না। পড়াশোনাকে তাদের কাছে এমনভাবে উপস্থাপন করতে হবে যেন তারা এটিকে আনন্দদায়ক একটি বিষয় বলে মনে করে। আনন্দ দেওয়ার মাধ্যমে শিক্ষাদান করলেই শিশুদের কাছে সেটি সহজ মনে হবে। আর আধুনিক যুগে এর অনেক পদ্ধতি আমাদের সামনে রয়েছে। যেকোনো বিষয়কেই আমাদের ব্যবহারিকভাবে শিক্ষা দেওয়া উচিত। যেমন সাইক্লোন বা ঘূর্ণিঝড় কি এটা একটা শিশুকে বই পড়ে বোঝালে সে যতটুকু বুঝবে একটা ছবি বা ভিডিও দেখালে সেটা তার বুঝতে আরও অনেক বেশি সহজ হবে। আবার ভূমিকম্পের সময় আমাদের কি করণীয় সেগুলো যদি আমরা ব্যবহারিকভাবে বা প্রামাণ্যচিত্র প্রদর্শনীর মাধ্যমে শেখাতে পারি তাহলে সেটা আরও বেশি কার্যকরী হবে। ক্লাসরুমে প্রোজেক্টর ব্যবহার করে আমরা এগুলো দেখাতে পারি। এছাড়া অনেক সময় অসুস্থতা বা অন্য কোন কারণে শিক্ষার্থীরা ক্লাসে উপস্থিত হতে পারে না। তাদের জন্য এ লেকচারগুলো যদি বাসায় বসে করার কোন উপায় বের করা যায় তাহলে খুব ভালো হবে। কারণ আমাদের মনে রাখতে শিক্ষা শুধু সনদ অর্জন করার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। একজন সুনাগরিক হতে হলে তাকে অবশ্যই মানবিক ও সমাজবান্ধব হতে হবে। একজন শিক্ষিত মানুষের পক্ষেই কেবল তার চারপাশ আলোকিত করা সম্ভব বলে মনে করি। আর এই ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রধান হাতিয়ার।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: অন্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় চেরি ব্লুসমস কেন আলাদা মনে করছেন?  

ড. সালেহা কাদের: দেখুন ‘ও’ এবং ‘এ’ লেভেলে চেরি ব্লোজমস-এর ছাত্র-ছাত্রীরা বেশ সফলতা অর্জন করছে। স্কুলটি নিয়মিত অ্যাওয়ার্ড পাচ্ছে। বিভিন্ন বিষয়ে ব্যাপক সহযোগিতা পেয়েছি অভিভাবকদের তরফ থেকে। অনেক প্রতিষ্ঠানের ভীরে আমাদের স্কুল বরাবরের মতই সাফল্য ধরে রেখেছে। আর সাধারণ পরিবারের সামর্থ্যের কথা মাথায় রেখে শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি ধার্য করা হয়েছে। এই ব্যাপারে আমি কমিটেট। এছাড়া বাণিজ্যিক কোন চিন্তা চেতনা থেকে আমি মুক্ত রয়েছি কারণ এটি ভালো লাগার জায়গা। শিক্ষাকে সেবার মাধ্যমেই সবার কাছে পৌঁছে দিতে দেওয়ায় আমার ব্রত। আমি নিজেই অনগ্রসর শিক্ষার্থীদের বৃত্তি দিয়ে থাকি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: আপনি সামাজিক কার্যক্রম করছেন সে সঙ্গে অনেকগুলি পুরুস্কার আপনার সাফল্যের জুড়িতে এই প্রসঙ্গে শুনতে চাই?

ড. সালেহা কাদের: আমি সব সময় মানুষের জন্য কিছু করতে চেয়েছি। মানুষের কষ্ট আমাকে দারুণভাবে আমাকে তাড়িত করে। স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধে সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টিতে কাজ করছি। এ ছাড়া অনগ্রসর শিশুদের জন্য শিক্ষাবৃত্তিসহ সামাজিক ও মানবিক কাজ করার প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছি। এসব কাজের স্বীকৃতি হিসেবে ওয়ার্ল্ড এডুকেশন কংগ্রেস গ্লোবাল অ্যাওয়ার্ড, মাদার তেরেসা অ্যাওয়ার্ডসহ আরও বেশ কিছু পুরস্কার পেয়েছি।

একুশে টেলিভিশন অনলাইন: শিক্ষা নিয়ে কাজ শুরু করার ভাবনা এলো কেন? এই পথে কাজ করতে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলেন?

ড. সালেহা কাদের: যেহেতু একাধিক সুযোগ থাকার পরেও আমি পারিবারিক, সামাজিক প্রতিবন্ধকতার কারণে এসব পেশায় যেতে পারিনি,তাই চিন্তা করলাম আমি শিক্ষক হব। সমাজে শিক্ষার পরিবেশ গড়ে তুলবো। নারী পুরুষের ভেদাভেদ দূর করতে মানুষকে সচেতন করব। এরপর থেকে এই পথে আমি কাজ শুরু করি। আর এই জন্য আমি প্রাণি বিজ্ঞানের পাশাপাশি এডুকেশনেও মাস্টার্স করেছি। মাস্টার্স শেষে কম্পিউটার প্রোগ্রামিং শিখি।

স্কুল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শেষ-অবধি প্রথম স্থান আমার দখলে ছিল। বিয়ের সময় মায়ের কাছ থেকে পাওয়া গয়না বিক্রি করে এক লাখ টাকা দিয়ে কম্পিউটার কিনি। এ কারণে সে সময় বাসায় বেশ বকুনিও খেতে হয়েছিল। দূর-দূরান্ত থেকে ছাত্র-ছাত্রীরা বাসায় এসে কম্পিউটার ও স্পোকেন ইংলিশ শিখত।

একুশের টেলিভিশন অনলাইন: আপনার সম্পর্কে যদি বলেন?

ড. সালেহা কাদের: মধ্যবিত্ত পরিবারে আমার বেড়ে উঠা। বাবা ছিলেন বিটিএমসির উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। তিন বোন ও এক ভাইয়ের মধ্যে সবার বড় আমি। আশির দশকের দিকে সামাজিক প্রেক্ষাপটে নারীদের অধিক পড়াশোনাকে তেমন উৎসাহিত করা হতো না। আমার পরিবারও এর ব্যতিক্রম ছিল না। পড়ালেখা অবস্থায় আমাকে বিয়ের পিড়িতে বসতে হয়েছে। স্বামীর সঙ্গে বয়সের ব্যবধান ছিল বেশ। এরই মধ্যে এককন্যা সন্তানের জননী হলেও নিজের প্রচেষ্টায় বদরুন্নেসা কলেজ থেকে পাস করে মিটফোর্ড মেডিক্যাল কলেজ ও ঢাকা ডেন্টালে ভর্তির সুযোগ পেয়েছিলাম। তখনকার প্রেক্ষাপটে পরিবার থেকে চিকিৎসাশাস্ত্রে পড়াটাকে অনুৎসাহিত করা হতো। এরপরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াকালে পুত্র সন্তানের জননী হই। এর মধ্যেই ১১তম বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে অ্যাডমিন ক্যাডারে যোগদানের সুযোগ পাই। কিন্তু বদলি চাকরির কারণে পারিবারিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে ভেবে সরকারি চাকরিতে যোগ দেওয়া হলো না। পরে অবশ্য বেসরকারি সংস্থায় অপেক্ষাকৃত উচ্চ বেতনে যোগদান করি। আমি অনেক কষ্ট করে এই জায়গায় এসেছি। গত বছরের জুলাই মাসে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়ে আমার একমাত্র ছেলে মোজাক্কির হোসেন খান মিশু মারা যায়। সে নৌ-বাহিনীর লেফটেন্যান্ট কমান্ডার ও একজন অভিজ্ঞ হেলিকপ্টার প্রশিক্ষক ছিলেন। এছাড়া আমার মেয়ে বর্তমানে স্কুলের ভাইস প্রিন্সিপাল হিসেবে আমাকে সহযোগিতা করছে। ছেলের মৃত্যু শোক কাটিয়ে ওঠার জন্য পড়াশোনা ও কাজের মধ্যে অধিকতর ব্যস্ত থাকার চেষ্টা করছি।

এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি