সংস্কারে ইউনূস সরকারকে সমর্থন ইইউর, নির্বাচন নিয়ে চাপ নেই
প্রকাশিত : ১৪:৫১, ৫ মে ২০২৫

বাংলাদেশের চলমান সংস্কার কার্যক্রম শেষ না হওয়া পর্যন্ত নির্বাচনের জন্য তাড়া না দিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পক্ষ থেকে পরামর্শ এসেছে। তারা সংস্কারের জন্য বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারকে ‘পর্যাপ্ত’ সময় দেয়ার পক্ষে। এমনটাই জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত ইইউ ডেলিগেশন প্রধান মাইকেল মিলার।
সোমবার (৫ মে) সকালে রাজধানীর জাতীয় প্রেস ক্লাবে কূটনৈতিক রিপোর্টারদের সংগঠন ডিকাবের সঙ্গে মতবিনিময় অনুষ্ঠানে (ডিকাব টক) এসব কথা জানান মাইকেল মিলার।
তিনি জানান, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের সংস্কারের প্রতি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। নির্বাচনের আগে সুশাসন, জবাবদিহিতা ও প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কারই ইইউ’র কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন কখন হতে পারে? উন্নয়ন অংশীদার হিসেবে ইইউ কি চায়? নির্বাচন কমিশন, সরকার এবং অন্য স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে আলোচনায় ইইউ কী বুঝতে পেরেছে? এমন এক গাদা প্রশ্নের সমন্বিত জবাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে কখন পরবর্তী জাতীয় নির্বাচন হওয়া উচিত-সে বিষয়ে বাংলাদেশই সিদ্ধান্ত নেবে। তবে তার আগে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া শেষ হওয়া উচিত, কারণ এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারের সংস্কার কার্যক্রমে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অকুণ্ঠ সমর্থন রয়েছে।
মাইকেল মিলার বলেন, ‘রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষিতে সংস্কার এখন বড় সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগাতে হবে।’ নির্বাচনের আগে সংস্কার চেয়ে ইইউ দূত বলেন, ‘এখানে আমি একটি বিষয় স্পষ্ট করতে চাই, তা হলো নির্বাচন নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের ওপর আমাদের (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) পক্ষ থেকে কোনো চাপ নেই।’ আগামীর বাংলাদেশ বিনির্মাণে চলমান সংস্কার প্রক্রিয়া সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশের বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার এবং রাজনৈতিক দলগুলো একত্রে কাজ করবে বলে দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেন উন্নয়ন বন্ধু ইইউ’র রাষ্ট্রদূত।সেই সঙ্গে তিনি জুলাই-আগস্ট হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত প্রত্যেকের বিচার স্বচ্ছতা ও দ্রুততার সঙ্গে সম্পন্ন হওয়ার আশা করেন।
জাতীয় প্রেসক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে অনুষ্ঠিত ডিকাব টকে অপর প্রশ্নের উত্তরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘বাংলাদেশে একটি অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন সমর্থন করে ইইউ। এমন কাঙ্ক্ষিত নির্বাচনে সহায়তা দিতে আগ্রহী ইউরোপীয় ইউনিয়ন।’
রাখাইনে মানবিক করিডর নিয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘করিডর ইতিবাচক উদ্যোগ। উভয় পাশেই ভুক্তভোগীদের জন্য মানবিক সহায়তা প্রয়োজন। সবাই যেন সমানভাবে ত্রাণ সহায়তা পায়, সেটা নিশ্চিত করতে হবে।’
উন্মুক্ত সেশনে এক প্রশ্নের জবাবে মাইকেল মিলার বলেন, ‘ইউরোপে পাচার হওয়া অর্থ যদি বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ফেরত আনতে চায়, তবে এ নিয়ে রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে যথাযথ তথ্য-উপাত্ত নিয়ে যোগাযোগ করতে হবে। এই প্রক্রিয়াটি শেষ হতে ৩-৪ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।’
ইইউ’র আমন্ত্রণে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ডা. শফিকুর রহমানের নেতৃত্বাধীন দলটির ৫ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দলের ব্রাসেলস সফর বিষয়ে জানতে চাইলে রাষ্ট্রদূত মাইকেল মিলার বলেন, ‘দলটির আগ্রহে আমরা জামায়াতের প্রতিনিধি দলকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলাম। বিএনপি, এনসিপি বা অন্য যেকোনো রাজনৈতিক দলের জন্য ইউরোপীয় ইউনিয়নের হেডকোয়ার্টারের দরজা ওপেন। চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতিতে দলগুলোর মতামত এবং জনগণের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততার বিষয়ে আমরা স্ব স্ব দলের ভাষ্য শুনতে আগ্রহী।’
নারী সংস্কার কমিশন নিয়ে চলমান বিতর্কের বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে ইইউ দূত বলেন, ‘এটি একান্তই বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। তবে হ্যাঁ, আমরা নারী-পুরুষ সমান অধিকারে বিশ্বাসী, দুনিয়াজুড়ে এটি আমরা প্রমোট করি। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় বাংলাদেশের নারীদের উন্নয়ন ও অগ্রগতি দেখতে চাই আমরা।’
ডিকাব সভাপতি এ কে এম মঈনুদ্দিনের সঞ্চালনায় অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা দেন সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক আরিফুজ্জামান মামুন।
এমবি//
আরও পড়ুন