ঢাকা, শুক্রবার   ০২ মে ২০২৫

সন্তান প্রসবের ভয়াবহ বর্ণনা দিলেন হালিমা

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৫:৪৫, ২৩ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ২১:৫৬, ২৪ সেপ্টেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

মিয়ানমার থেকে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গা নারী হামিদা (৩০)। ছয় সন্তানের মা। সুন্দর এ পৃথিবীর আলো দেখতে তাঁর গর্ভে অপেক্ষা করছে সপ্তম সন্তান। মোটামুটি ভালোই চলছিল গর্ভকালীন জীবন। কিন্তু সন্তান প্রসবের সময় যখন কাছাকাছি আসল তখনই শুরু হলো তাদের গ্রামে সেনাবাহিনীর তাণ্ডব। আর এই সেনাবাহিনীর তাণ্ডব থেকে নিজেকে ও সন্তানকে রক্ষা হলে তাকে অবশ্যই পালাতে হবে।

সম্প্রতি ডেইলি মেইলের সাথে এক সাক্ষাৎকারে উঠে এসেছে সন্তান প্রসবের সময় বেদনাদায়ক সেই করুণ চিত্র। হালিমা বলেন, ‘সেদিন সেনাবাহিনীর লোকেরা  আমাদের গ্রামে হামলা চালায়। তারা আমাদের দিকে রকেট লঞ্চার দিয়ে বোমা ছুড়ছিল। এমনকি পালানো অবস্থায়ও আমাদের গুলি করে মারা হচ্ছিল। পুরো গ্রামটা তারা জ্বালিয়ে মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দিয়েছিল। এমন সময় এ সময় হঠাৎ আমার প্রসব বেদনা উঠল। জঙ্গলের মধ্যে চিকিৎসক তো দূরের কথা, সন্তান প্রসবের যন্ত্রণার সময় হাত ধরে রেখে বুকে সাহস জোগানোর মতোও কেউ নেই। এমনকি ছিল না এক টুকরা ছেঁড়া কাপড়ও।

সেই পরিস্থিতির মধ্যেই যন্ত্রণার সঙ্গে তিন ঘণ্টা যুদ্ধের পর সন্তান জন্ম দেন হালিমা। এমন সময় শুনতে পান সেনাবাহিনীর গুলির শব্দ ও হট্টগোল। যেকোনো সময়ই এসে পড়তে পারে তাদের কাছে। তাহলে মৃত্যু নিশ্চিত।

এদিকে প্রসবের পর তখনো সন্তানের নাড়ি কাটা হয়নি। সেই অবস্থায় আবার দৌড়াতে শুরু করেন হালিমা। কোলে সদ্যজাত সন্তান আর সারা শরীরে তীব্র যন্ত্রণা ও ক্লান্তি। প্রাণ বাঁচাতে আর কিছুই করার ছিল না বলে জানান হালিমা।

হালিমা বলেন, ‘কী করতাম সে সময়? তারা আমাদের তাড়া করে বেড়াচ্ছিল। সৈন্যরা ধরতে পারলে আমাকে ও আমার বাচ্চাকে মেরে ফেলত। অনেক যন্ত্রণা হচ্ছিল। অনেক কষ্ট হচ্ছিল। কিন্তু কিছুই করার ছিল না আমার।’

নবজাতককে কোলে নিয়ে কতক্ষণ দৌড়েছিলেন মনে করতে পারেন না হালিমা। তিনি জানান, একপর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে পড়লে একটু জিরিয়ে নিতে বসেন তাঁরা। তখন নজরে এলো সন্তানের সঙ্গে তাঁর নাড়ি তখনো যুক্ত রয়েছে। তাঁর স্বামী তখন এক টুকরা বাঁশের ছিলকা কেটে আনেন। বাঁশ ছিলকা দিয়ে কাটা হলো নাড়ি।  

এরপর আরো তিনদিন আশ্রয়ের উদ্দেশে পালিয়ে বেড়িয়েছে হালিমার পরিবার। নেই কোনো আশ্রয়, কোনো খাবার। শুধু পানি খেয়েই তাঁরা কাটিয়েছেন এ কয়দিন। এরই মধ্যে নবজাতকের দেওয়া হয়েছে একটি নাম। হোসেন সাহেব।

হালিমারা শুনেছে, বাংলাদেশে গেলে সেনাবাহিনীর বন্দুকের গুলি থেকে বাঁচতে পারবেন। তাই সেদিকেই রওনা দিলেন আবার। আরো দুদিনের হাঁটা পথ। দুদিন পর পৌঁছালেন বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের নাফ নদীর তীরে।

হালিমাদের করুণ অবস্থা থেকে তাদের নদী পার করে দিয়ে বাংলাদেশে নিয়ে আসেন এক বাঙালি মাঝি। নিজের বাড়িতে নিয়ে গিয়ে যেটুকু পারেন খাবার তুলে দেন ক্ষুধার্ত এই পরিবারটির মুখে। তারপর তাদের নিয়ে যান কক্সবাজারের ঘুমধুম সীমান্তের কাছের একটি শরণার্থী শিবিরে।

সীমান্তের কাছের ওই শরণার্থী শিবিরে ৫০ হাজার রোহিঙ্গার বাস। সেখানেই বাঁশ আর ত্রিপল দিলে মাথা গোঁজার ঠাঁই বানালেন হালিমার স্বামী। তারপর সেই মাঝির দেওয়া কম্বল আর হাড়ি-পাতিল দিয়ে শুরু হলো তাদের অনিশ্চিত এক জীবন। রোহিঙ্গাদের এই অবমাননাকর অবস্থার শেষ কোথায়।

সূত্র:ডেইলি মেইল

এম/ডব্লিউএন

 

 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি