ঢাকা, রবিবার   ০৪ মে ২০২৫

সিঙ্গাপুরের নির্বাচনে ভূমিধস জয় পেল শাসক দল

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৩:১৩, ৪ মে ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বহুদিন ধরে ক্ষমতায় থাকা সিঙ্গাপুরের শাসক দল (পিএপি) শনিবারের নির্বাচনে বিপুল ব্যবধানে জয়লাভ করেছে। এর মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রী লরেন্স ওং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার মধ্যেও দেশ পরিচালনার জন্য স্পষ্ট জনমত পেয়ে গেলেন।

সিঙ্গাপুর থেকে এএফপি জানায়, ৯৭ আসনের একক কক্ষবিশিষ্ট সংসদে পিপল’স অ্যাকশন পার্টি (পিএপি) ১০টি আসন ছাড়া সবগুলোতেই জয় পেয়েছে। প্রায় ২৪ লাখ ভোটারের মধ্যে ৬৫.৫৭ শতাংশ ভোট পেয়ে ধনাঢ্য দ্বীপ রাষ্ট্রটির নির্বাচনে এই ফল অর্জন করে দলটি।

"সিঙ্গাপুরবাসী পিএপিকে শক্তিশালী শাসনের ম্যান্ডেট দিয়েছেন," ফল ঘোষণার কয়েক ঘণ্টা পর এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন লরেন্স ওং।

তিনি বলেন, 'এই ফলাফল সিঙ্গাপুরকে অস্থির বিশ্ব পরিস্থিতি মোকাবেলায় ভালো অবস্থানে নিয়ে যাবে। এটা জনগণের আস্থা, স্থিতিশীলতা ও সরকারের ওপর বিশ্বাসের স্পষ্ট বার্তা।'

এটি ছিল ওংয়ের জন্য বড় প্রথম পরীক্ষা, যেখানে তাকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল উজ্জীবিত এক বিরোধী দলের। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ঘোষিত কঠোর শুল্কনীতির ফলে সৃষ্ট বৈশ্বিক অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তার প্রেক্ষাপটে তিনি ভোটারদের কাছে জোরালো সমর্থন কামনা করেছিলেন।

দীর্ঘদিনের ক্ষমতায় থাকা পিএপি দেশকে অর্থনৈতিক সমৃদ্ধির পথে নিয়ে গেলেও মত প্রকাশের স্বাধীনতা রুদ্ধ করার জন্য তাদের সমালোচনা হয়ে থাকে। তারপরও দলটির সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখা প্রায় নিশ্চিতই ছিল।

বিগত কয়েক বছর ধরে কিছুটা জনপ্রিয়তা হারালেও এবারের নির্বাচনে দলটির জনপ্রিয়তা ২০২০ সালের তুলনায় বেড়েছে।

করোনাভাইরাস মোকাবেলায় নেতৃত্ব দিয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়া ওং গত বছর সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের স্থলাভিষিক্ত হন।

লি সিয়েন লুং ছিলেন সিঙ্গাপুরের প্রতিষ্ঠাতা প্রধানমন্ত্রী লি কুয়ান ইউ-এর ছেলে। ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়া থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর থেকেই দেশ শাসন করেছে লি পরিবারের নেতৃত্বাধীন দলটি।

নির্বাচনের আগে ওং হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন, ট্রাম্পের শুল্কনীতি কার্যকর হলে সিঙ্গাপুর তা তীব্রভাবে টের পাবে এবং সেই প্রেক্ষিতে দেশকে উন্মুক্ত ও প্রতিযোগিতামূলক রাখতে হবে।

তিনি আরও বলেন, এসব অস্থিরতা মোকাবেলায় সিঙ্গাপুরের অর্থনীতিতে বড় ধরনের পুনর্গঠন প্রয়োজন হতে পারে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও প্রবীণ সাংবাদিক পি.এন. বলজি বলেন, 'প্রধানমন্ত্রী ওং ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুংয়ের তীব্র প্রচারণা এবং ট্রাম্পের শুল্ক-ভীতির প্রভাব ভোটারদের মধ্যে বড় ভূমিকা রেখেছে।'

ভোট-পরবর্তী এক সমাবেশে সাদা পোশাক পরিহিত এবং দলীয় প্রতীক লাল বজ্রচিহ্ন খচিত পতাকা হাতে পিএপি-সমর্থকেরা উপস্থিত ছিলেন।

সেখানে ১৮ বছর বয়সী ছাত্র আরহাম এএফপিকে বলেন, 'পিএপি সরকারেই দেশ চলে এবং বেশিরভাগ সময়ই সব কিছু ঠিকঠাক চলে এসেছে। আমার কাছে পিএপি একটি নির্ভরযোগ্য দল।'

সিঙ্গাপুরে পিএপি-র বিশাল সংখ্যাগরিষ্ঠতা বহুদিন ধরেই একটি রাজনৈতিক বাস্তবতা। তবে এবারের নির্বাচন সামনে রেখে দলটি নানা বিতর্কের মুখে পড়ে।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী লি সিয়েন লুং-এর সঙ্গে তার ভাই লি সিয়েন ইয়াংয়ের তিক্ত বিরোধ প্রকাশ্যে আসে। লি সিয়েন ইয়াং এখন ব্রিটেনে রাজনৈতিক আশ্রয়প্রার্থী এবং খোলাখুলি বিরোধীদলের পক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন।

এ বিরোধের কেন্দ্রে রয়েছে এক পারিবারিক বাসভবনের ধ্বংসের ইস্যু, যা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে—লি কুয়ান ইউ-এর ঐতিহ্যকে ব্যবহার করার চেষ্টা করছেন লি সিয়েন লুং, যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন।

গত বছর দুর্নীতির অভিযোগে সাবেক পরিবহনমন্ত্রী এস. ইসওয়ারানকে কারাবরণ করতে হয়। ২০২৩ সালে সংসদের স্পিকার ও এক সংসদ সদস্য ‘বেমানান সম্পর্ক’-এর কারণে পদত্যাগ করেন।

এদিকে, তরুণ ভোটাররা বিকল্প রাজনৈতিক মতামতের প্রতি আগ্রহী হয়ে উঠছেন। ২০২০ সালে বিরোধী দল ওয়ার্কার্স পার্টি (ডব্লিউপি) ঐতিহাসিক সাফল্য পায়—৯৩ আসনের মধ্যে তারা ১০টি দখল করে নেয়, যা আগের চারটি আসনের তুলনায় অনেক বেশি।

এবার তারা আরও ভালো ফলের আশায় তারকা আইনজীবীসহ একঝাঁক নতুন মুখ নিয়ে মাঠে নামে এবং বড় বড় সমাবেশ করে। কিন্তু আগের নির্বাচনের মতোই ব্যাপক জনসমাগম সত্ত্বেও তারা খুব একটা সাফল্য পায়নি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি