তিতাস নদী দখল করে ইমারত নির্মাণ
প্রকাশিত : ১৩:৩১, ২২ সেপ্টেম্বর ২০২১

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার তিতাস নদীর ইতিহাস আর ঐতিহ্য থাকলেও ভূমিদস্যুদের থাবা থেকে কোনভাবেই মুক্তি মিলছে না এ নদীর। দিনদিন ভূমিদস্যুদের থাবায় নদী দখল হয়ে যাচ্ছে। আর দখলের কারণে তিতাস নদী ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে আসছে।
তিতাস নদীর কূল ঘেঁষে জনমানুষের বসবাস দীর্ঘকালের বলেই নদীটির সঙ্গে তাদের সখ্যতা রয়েছে। তবে অনেকেই আবার নদীর পাড় দখল করে কৃষি জমি হিসেবে চাষ করে জীবন জীবিকা নির্বাহও করছেন। অনেকে আবার নিজ দখলে থাকা নদীর পাড়টি কৃষি জমি দেখিয়ে স্থায়ী ব্যবহারের জন্য ইউনিয়ন ভূমি অফিসে বন্দোবস্তের আবেদন করেই স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করছেন।
সরেজমিনে দেখা যায়, রসুলপুর গ্রামের মৃত আবদুল হাই’র ছেলে সৌদী প্রবাসী আবদুল কাদির তিতাস নদীর ১৪ শতক জায়গা দখলে রেখেছেন। জায়গাটি স্থায়ীভাবে পাওয়ার জন্য ২০১৯ সালের ২০ অক্টোবর নাটঘর ইউনিয়ন ভূমি অফিসে আবেদন করেন। তবে আবেদনটি মঞ্জুর হয়েছে কি না তার কোন তোয়াক্কা না করেই নদীর প্রায় ৪ শতক জায়গায় স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করেন।
এরকম একাধিক ব্যক্তিই নদীর জায়গা দখল করে স্থায়ী ইমারত নির্মাণ করে দীর্ঘবছর ভোগদখল করে আসছেন। এর মাঝে আবদুল কাদিরের আপন চাচাতো ভাই মৃত মোবারক সর্দারের ছেলে প্রবাসী ইয়াকুব মিয়াও সাড়ে তিন শতাংশ জায়গা দখল করে ইমারত তুলেছেন। একই গ্রামের মৃত মন্তা মিয়ার ছেলে ইলু মিয়া নদীর ২ শতক জায়গায় তিনতলা ইমারত করে দীর্ঘ ১০ বছর যাবত বসবাস করছেন।
এ বিষয়ে প্রবাসী আবদুল কাদিরের স্ত্রী রিমা বেগম সত্যতা স্বীকার করে বলেন, আমার স্বামী দীর্ঘদিন থেকে বিদেশে থাকেন। আমরা এ জায়গাটি অনেকদিন থেকেই কৃষি চাষে ব্যবহার করছি। দুই বছর হলো এখানে বিল্ডিং করা হয়েছে, এ পর্যন্ত কেউ এসে বাঁধা দেয়নি। ইয়াকুব মিয়ার ছোট ভাই প্রবাসী আরফান আলী জানান, আমাদের জায়গা অধিগ্রহণ করে তিতাসের উপর ব্রিজ নির্মাণ করা হয়েছে। আমার ভাই এখানে জায়গা খালি পেয়ে ৩ বছর আগে বিল্ডিং নির্মাণ করেন।
নদী নিরাপত্তার সামাজিক সংগঠন ‘নোঙর’-এর ব্রাহ্মণবাড়িয়া সভাপতি শামীম আহমেদ বলেন, আমরা যতটুকু জানতে পেরেছি জায়গাটি ১নং খতিয়ান অন্তর্ভুক্ত। যদি তাই হয় তবে এখানে স্থায়ী স্থাপনা তৈরির কোন সুযোগ নেই। বিষয়টি নোঙর’র পক্ষ থেকে পানি উন্নয়ন বোর্ডকে অবহিত করার পর নির্বাহী প্রকৌশলী মৌজা ম্যাপ ও খতিয়ান সংগ্রহ করে লিখিত আবেদন করতে পরামর্শ দেন।
তিনি আরও বলেন, নদী সীমানা নির্ধারণ, সীমানা পিলার স্থাপন, দখল-উচ্ছেদের দাবি দীর্ঘদিনের। দুঃখজনক হলেও সত্য এই ধরনের কার্যক্রম তিতাস নদীতে পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তিতাস নদীর তীর অবৈধ দখলমুক্ত করতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি কামনা করেন তিনি।
এ বিষয়ে নাটঘর ইউনিয়ন ভূমি কর্মকর্তা নায়েব সালেহ আহমেদ বলেন, আমি গত এক বছর আগে এখানে বদলী হয়ে এসেছি, বিস্তারিত বলতে পারবো না। তবে আমি জানি এ জায়গাটি রসুলপুর মৌজার ১নং খতিয়ানের ৮৮৫ দাগের ৭ শতক ও ৮৭৩ দাগের ৭ শতক খাস জমি ভিটি দেখিয়ে স্থায়ীভাবে ব্যবহারের জন্য আবদুল কাদির গত দুই বছর পূর্বে আবেদন করেন, যা এখনও মঞ্জুর হয়নি।
নবীনগর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. মোশারফ হোসেন বলেন, নদীর জমি বন্দোবস্ত দেয়ার কোন সুযোগ নেই। কিভাবে ইমারত নির্মাণ করা হয়েছে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে। যদি নদী দখল করে ইমারত নির্মাণ করা হয়, তাহলে এ বিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে জানান তিনি।
এএইচ/
আরও পড়ুন