ঢাকা, মঙ্গলবার   ২২ জুলাই ২০২৫

সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২২:০০, ২১ জুলাই ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

কিংস অ্যারেনায় অনুষ্ঠিত সাফ অনূর্ধ্ব-২০ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে আজ সোমবার রাতে চূড়ান্ত ম্যাচে মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ ও নেপাল। ড্র করলেই চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সমীকরণ ছিল বাংলাদেশের সামনে। তবে গোল বন্যা বইয়ে দিয়ে লাল-সবুজের মেয়েরা শিরোপা নিজেদের করে নেয়।

বাংলাদেশ ৪-০ গোলে জয়ী হয়, আর সব গোলই করেন ফরোয়ার্ড সাগরিকা। প্রথমার্ধে একটি এবং দ্বিতীয়ার্ধে হ্যাটট্রিকসহ মোট চার গোল করে ম্যাচের সেরা পারফরমার হয়ে উঠেন তিনি।

প্রসঙ্গত, এই নেপালের বিপক্ষেই আগের ম্যাচে লাল কার্ড দেখে তিন ম্যাচের নিষেধাজ্ঞায় পড়েছিলেন সাগরিকা। অপরাধের তুলনায় তার শাস্তিটা অনেক বেশিই হয়ে ছিল সেদিন। ৩ ম্যাচ পরে সেই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে মাঠে নেমে নিজে একাই চার গোল দিয়ে বাংলাদেশকে ৪-০গোলে জিতিয়ে হয়ত প্রতিশোধ নিলেন।

ম্যাচজুড়েই নেপালের রক্ষণভাগকে চাপে রেখেছেন বাংলাদেশের আক্রমণভাগ, যার মূল চালিকাশক্তি ছিলেন সাগরিকা। তাঁর গতি, বল কন্ট্রোল এবং গোল শট ম্যাচটিকে একতরফা করে তোলে।

এই জয়ের মধ্য দিয়ে টুর্নামেন্টে অপরাজিত থেকেই চ্যাম্পিয়ন হলো বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-২০ নারী দল।

এ নিয়ে পঞ্চমবার এই প্রতিযোগিতায় চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ।

‎‎নিষেধাজ্ঞায় বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব–২০ দলের আগের তিনটি ম্যাচে সাগরিকা ছিলেন দর্শক। তাকে ছাড়া সেই ম্যাচগুলো বাংলাদেশ জিতেছে ঠিকই কিন্তু আক্রমণে দুর্বলতা চোখে পড়েছে প্রকটভাবে। নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে আজ সেই সাগরিকা নেমেই দেখালেন পায়ের জাদু। ম্যাচটাকে যেন নিজের করে নিয়েছেন ১৭ বছর বয়সী এই ফরোয়ার্ড।

‎এমন ম্যাচে গোল করেও হয়তো আফসোস থেকে গেছে সাগরিকার। হয়তো ম্যাচের পর মনে হয়েছে ইশ্‌! যদি ছয়টি ম্যাচই খেলা যেত। তবু কম কীসে, তিন ম্যাচ খেলেই ৮ গোল করলেন যার মধ্যে আবার দুই হ্যাটট্রিকও। ৭১ মিনিটে অফসাইডে না পড়লে পঞ্চম গোলটিও পেয়ে যেতেন সাগরিকা। তারপরও এক ম্যাচেই যেন সব দায় শোধ করে দিলেন সাগরিকা।

প্রথম গোলের পর সাগরিকাপ্রথম গোলের পর সাগরিকা

ঘরের মাঠে ম্যাচের ৫১ মিনিটে রীতিমতো ম্যাজিক দেখান সাগরিকা। উমেলা মারমার বুদ্ধিদীপ্ত পাস ধরতে দারুণ মুনশিয়ানা দেখান তিনি। প্রতিপক্ষ দুই খেলোয়াড়কে ড্রিবল করে নিশানা ভেদ করেন ঠাকুরগাঁওয়ের মেয়ে। ৫৮ মিনিটে আরও একবার সাগরিকার ঝলক দেখেন দর্শকেরা। বাংলাদেশ অর্ধ থেকে লম্বা শট নেন জয়নব বিবি। বাতাসে ভাসতে থাকা বল লুফে নিয়ে সোজা নেপাল গোলকিপারের মাথার ওপর দিয়ে জালে পাঠিয়ে সতীর্থদের নিয়ে হ্যাটট্রিকের আনন্দে মাতেন সাগরিকা। ৭৭ মিনিটে আরও একবার নেপালের জাল ছুঁয়ে উদ্‌যাপনে মাতেন তিনি। এর আগে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে তিন গোল, নেপালের সঙ্গে প্রথম দেখায় এক গোল করেছিলেন সাগরিকা।

‎নেপালের বিপক্ষে শিরোপা নির্ধারণী ম্যাচে আজ প্রথম একাদশে চার ফরোয়ার্ড নবীরণ খাতুন, উমেলা মারমা, সাগরিকা ও পূজা দাসকে নিয়ে একাদশ সাজান বাংলাদেশ কোচ পিটার বাটলার। মাঝমাঠে বরাবরের মতো আস্থা রাখা হয় মুনকি আক্তার ও স্বপ্না রানীর ওপর। দুজনের সঙ্গে শান্তি মার্ডি এবং ঐশী খাতুনকেও রেখেছেন খেলা তৈরির জন্য। মাঠের লড়াইয়েও সেই ছাপ স্পষ্ট দেখা যায় প্রথম দশ মিনিটে। এই সময়ে আশা জাগানিয়া চারটি সুযোগ তৈরি করে বাংলাদেশ। যার একটি থেকে আসে সফলতাও।

জয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উল্লাসজয়ের পর বাংলাদেশের খেলোয়াড়দের উল্লাস

‎‎সাত মিনিটে স্বাগতিকদের এগিয়ে দেন সাগরিকা। মাঝমাঠে বলের দখলটা নিজেদের মধ্যে রেখে গুছিয়ে আক্রমণ করে বাংলাদেশ। পূজা দাসের বাড়ানো বল নেপালের গোলমুখে বাড়ান স্বপ্না রানী। আর সেই বল ধরে দারুণ প্রচেষ্টায় প্রতিপক্ষের ডিফেন্ডারদের চোখ ফাঁকি দিয়ে জালে জড়ান সাগরিকা। ১২ মিনিট পর ম্যাচে সমতা ফেরানোর সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি নেপাল। গোলকিপার মিলি আক্তারের হাত ফসকে যাওয়া বলে শট নেন পূর্ণিমা রাই। কিন্তু সেই শট রুখে দেন বেরসিক গোলপোস্ট। পোস্ট থেকে ফিরে আসা বলে হেড নেন নেপালের আরেক ফুটবলার। এবার আর মিস করেননি মিলি, সেই হেড সহজেই গ্লাভসবন্দী করেন বাংলাদেশ গোলকিপার।

‎এক গোলের লিড নেওয়া বাংলাদেশ প্রথমার্ধের বাকি সময় একটু সতর্ক ফুটবল খেলে যায়। নেপালও চেষ্টা করে গোল শোধ করতে। কিন্তু বাংলাদেশের চৌকস রক্ষণের কারণে তাদের সেই চেষ্টা আর সফলতা দেখেনি৷ উল্টো ৪৪ মিনিটে আরও একবার নেপালের বুকে কাঁপন ধরিয়ে দেন সাগরিকা। ডান পাশ দিয়ে আক্রমণে ওঠা বাংলাদেশের নাম্বার টেনকে কোনোমতে আটকান নেপাল গোলকিপার সুজাতা তামাং৷

পুরো ম্যাচটাই ছিল বাংলাদেশের এমন উদ্‌যাপনের

‎‎২০২২ সালের পর এবারের সাফেও ছিল না কোনো ফাইনাল। ডাবল লিগ পদ্ধতিতে যে দল বেশি পয়েন্ট পাবে তারাই চ্যাম্পিয়ন। সে হিসেবে আজকের ম্যাচটি হয়ে যায় অলিখিত ফাইনাল। যেখানে নেপালকে উড়িয়ে সর্বোচ্চ ১৮ পয়েন্ট নিয়ে শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। নেপালের পয়েন্ট ১২।

‎‎গত অক্টোবরে সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জেতার পর দেশের নারী ফুটবল অনেক উত্থান-পতনের মধ্যে দিয়ে এগিয়েছে। কোচের বিরুদ্ধে ফুটবলারদের বড় এক অংশের বিদ্রোহ ঘোষণা করে। সেই ঝড়ঝাপটা পেরিয়ে নতুন করে দল গোছান পিটার বাটলার। এরপর র‍্যাঙ্কিংয়ে এগিয়ে থাকা দলগুলোকে কাবু করে চমক দেখায় বাংলাদেশ। সবশেষ মিয়ানমারে ইতিহাস গড়ে প্রথমবারের মতো এশিয়ান কাপেও জায়গা করে নেয় তাঁরা৷ সবই যেন স্বপ্নের মতো ছিল। বড়দের সাফল্যের পথ ধরে এবার ঘরের মাঠে ছোটরাও ধরে রাখলেন বিজয়ের কেতন।

মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়া ম্যাচের আগেমাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের ভবনে বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় নিহতদের স্মরণে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়া ম্যাচের আগে

‎‎আগের পাঁচ আসরে চারবার চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। ২০১৮ সালে শুরু হওয়া বয়সভিত্তিক এই টুর্নামেন্ট ২০২১ থেকে নিয়মিত হচ্ছে। প্রথমবার নেপালকে হারিয়ে শিরোপা জেতে আঁখি-স্বপ্নারা। দুই বছর পরও শ্রেষ্ঠত্বটা ধরে রাখে বাংলাদেশ। তৃতীয় আসরে বাংলাদেশকে হারিয়ে ট্রফি ঘরে রাখে ভারত। এরপর ২০২৩ সালে আবার নেপালকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশের মেয়েরা। গতবার ঢাকায় হওয়া এই টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ ও ভারত যৌথভাবে শিরোপা জিতেছিল। মোট ছয় আসরের মধ্যে এ নিয়ে দ্বিতীয়বার ডাবল লিগ পদ্ধতিতে শিরোপা ফয়সালা হয়েছে। এর আগে ২০২২ সালে ভারতের মাটিতে বাংলাদেশ ও ভারতের পয়েন্ট সমান ৯ হয়, এরপর মুখোমুখি ফল, গোলপার্থক্য এবং গোল স্কোরও সমান হওয়ায় টুর্নামেন্টের গোল ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ভারতকে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয়।

‎‎১১ দিনের প্রতিযোগিতায় ছয় ম্যাচের ছয়টিই জিতেছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে ৯-১ গোলে উড়িয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করেছিল মেয়েরা। দ্বিতীয় ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারে নেপাল। এরপর টানা দুবার ভুটানকে হারায় স্বাগতিকেরা। লঙ্কানদের সঙ্গে দ্বিতীয় দেখায় বাংলাদেশ জেতে ৫-০ গোলে।

এসএস//


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি