রামুতে শত বছরের সম্প্রীতির বন্ধন ছিন্ন করতে পারেনি দুস্কৃতিকারীরা
প্রকাশিত : ১৫:৩২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৯

কক্সবাজারের রামুতে সকল ধর্মাবলম্বি মানুষের শত বছরের সম্প্রীতির বন্ধন নষ্ট করতে পারেনি দুস্কৃতিকারীরা। ২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেইসবুকের মাধ্যমে গুজবের জের ধরে দুস্কৃতিকারীরা বৌদ্ধ পল্লীসমূহে বর্বরোচিত হামলা চালিয়ে ভাঙ্গতে পারেনি এ সম্প্রীতির বন্ধন। রামু ট্র্যাজেডির ৭ বছর শেষে আজ ৮ম বছর শুরু হয়েছে। তবে এখনও অটুট রয়েছে সম্প্রতির বন্ধন।
ঐ ঘটনার বিচার কাজ নিয়ে কিছুটা হতাশা থাকলেও সকল ধর্মের মানুষের মধ্যে ছন্দপতন ছাড়াই সহবস্থান রয়েছে। একই সঙ্গে রামু ট্র্যাজেডির মতো আর কোন ঘটনাই যেন না ঘটে এ জন্য তৎপর রয়েছে জেলার আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী।
জানা যায়, ধর্মীয় উস্কানিমূলক মিছিল নিয়ে ২০১২ সালের এ দিনে বৌদ্ধ পল্লীতে হামলা চালিয়ে মন্দিরে অগ্নিসংযোগ, ভাংচুর ও লুটপাট চালায় দুবৃত্তরা। এতে কক্সবাজার সদর, রামু, উখিয়া ও টেকনাফে ১৯টি বৌদ্ধ বিহার এবং ৩০ টি বসতবাড়ী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে সরকারি পৃষ্টপোষকতায় নান্দনিকভাবে নির্মিত এসব বৌদ্ধ বিহার গত ২০১৩ সালের ৩ সেপ্টেম্বর উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
ঘটনার ৮ বছরে এসে সে ঘটনা ভুলে গেছেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের মানুষ। তারা বিশ্বাস করেন রামুতে আগের মতো সম্প্রীতি ফিরে এসেছে। তবে ঐ ঘটনার কঠোর বিচার হবে এমনটিই প্রত্যাশা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিদের। রামুর বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের সাধারণ মানুষ বলছেন, সেই ভয়াল ঘটনা এখনও বিচলিত করে।
সম্প্রীতি রক্ষায় এ ঘটনার অপরাধীদের বিচার দাবী করেছেন অন্য ধর্মাবলম্বিরা। রামু উপজেলা ইমাম সমিতির সভাপতি মাওলানা নুরুল হাকিম বলেন, ‘ইসলাম অন্য ধর্মালম্বীদের উপর হামলার সমর্থন করে না। এ ঘটনায় প্রথম থেকেই আমরা নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে আসছি। দোষীদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী করছি।’ বাংলাদেশ বুড্ডিষ্ট ডেভেলপমেন্ট কক্সবাজার শাখার চেয়ারম্যান সুরেশ বড়ুয়া বাঙ্গালী বলেন, ‘আমরা এখনও সুষ্ঠু বিচারের অপেক্ষায় আছি। প্রকৃতপক্ষে যারা এ ঘটনায় জড়িত তাদের এখনও চিহ্নিত করা যায়নি। আমরা চাই খুব দ্রুত সময়ের মধ্যে তাদের বিচারের আওতায় নিয়ে আসা হোক।’
রামু কেন্দ্রীয় সীমা বিহারের আবাসিক ভিক্ষুক প্রজ্ঞানন্দ ভিক্ষু বলেন, ‘২০১২ সালে যে ঘটনা ঘটেছে তার পুনরাবৃত্তি বাংলাদেশের কোন অঞ্চলেই চাই না। রামুর ঘটনায় যে মামলাগুলো হয়েছে এতে কোন সাধারণ মানুষ যেন হয়রানির শিকার না হন সে দিকে নজর রাখতে হবে।’
কক্সবাজার জেলা পুলিশ সুপার এবিএম মাসুদ হোসেন বলেন, ‘২০১২ সালে রামুর বৌদ্ধ বিহারগুলোতে বর্বরোচিত হামলার পরবর্তীতে ২০১৭ সালে রাখাইন থেকে এদেশে রোহিঙ্গারা আসার পর বৌদ্ধ সম্প্রদায় কিছুটা আতংকের মধ্যে ছিলেন বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বিরা। পরে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সতর্কতায় বিষয়টি স্বাভাবিক হয়। বৌদ্ধ বিহারসহ সব বৌদ্ধ পল্লিতে নিরাপত্তা জোরদার অব্যাহত রয়েছে।’
উল্লেখ্য, রামুর বৌদ্ধ বিহারে হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছিল ১৯টি। এর মধ্যে পুলিশ বাদী হয়ে ১৮টি মামলা করে। অপর মামলাটি করেন বৌদ্ধ সম্প্রদায়ের এক ব্যক্তি। সে মামলায় পরবর্তীতে বিবাদীর সঙ্গে আপোষনামা করে আসামী খালা পেয়েছেন। সাক্ষী না থাকায় ১৮টি মামলার বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে দীর্ঘসূত্রিতা।
এমএস/
আরও পড়ুন