অসামাজিক কার্যকলাপে দর্শনার্থী কমছে নন্দন পার্কে

ভ্রমন বিলাসী ও বিনোদন প্রেমীদের এক সময়ের প্রিয় বিনোদন পার্ক হিসেবে জনপ্রিয় হয়ে উঠেছিলো আশুলিয়ার বাড়ইপাড়ার 'নন্দন পার্ক'।সবুজের শ্যামল ছায়ায় পার্কটি প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর।ফলে সব বয়সী বিনোদন প্রেমীদের পছন্দের শীর্ষে ছিলো পার্কটি।তবে দীর্ঘদিনের এ সুনাম এখন ধরে রাখা নন্দন পার্ক কর্তৃপক্ষের কঠিন হয়ে পড়েছে। নানা অনিয়ম, স্বেচ্ছাচারিতা আর পার্কের অভ্যন্তরে অসামাজিক কর্মকান্ডের কারণে দর্শনার্থীদের আগমনে ভাটা পড়েছে। 

পার্কের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০০৩ সালের অক্টোবরে আশুলিয়ার বাড়ইপাড়া এলাকায় ৩৩ একর জমির মধ্যে যাত্রা শুরু করে বিনোদন কেন্দ্র ‘নন্দন পার্ক’। প্রাকৃতিক পরিবেশের সমারূহে গঠিত পার্কটি শুরু থেকে বেশ জমজমাটভাবেই শহুরে মানুষদের নিকট পরিচিতি লাভ করেছেলো।কিন্তু ২০১৮ সালের জুন মাসে পার্কের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও) হিসেবে লে.কর্ণেল(অবসরপ্রাপ্ত)তুষার বিন ইউনুস দায়িত্বভার গ্রহণের পর থেকেই এর জৌলুসে ভাটা পরতে থাকে।অব্যবস্থাপনা, স্টাফদের সাথে অসৌজন্যমূলক আচরণ,পার্কের রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপ, রাতের আধারে পার্কে তাবু টানিয়ে বিভিন্ন পার্টি, পার্কে মাদকদ্রব্যের ব্যবহারসহ নানা কারণে দর্শনার্থী কমতে শুরু করে পার্কটিতে।এরই মধ্যে তার এসব কর্মকান্ডের প্রতিবাদ করায় পার্কের কয়েকজন স্টাফ ও কর্মকর্তাকে বদলিসহ চাকুরীচ্যুত করেছেন তিনি।

এরই মধ্যে নন্দন পার্কের ডেপুটি ম্যানেজার আল-মামুন ও সিনিয়র এক্সিকিউটিভ অফিসার(একাউন্টস) পলাশকে নন্দন পার্কের ঠাকুরগাঁও প্রজেক্টে এবং সহকারি ব্যবস্থাপক(মার্কেটিং) মাসুদ রানাকে নন্দন পার্কের রাজধানীর মিরপুরের কর্পোরেট অফিসে শাস্তিমূলক বদলি করেন।
 
কাষ্টমার এডমিন (তথ্যকেন্দ্র) আবু হানিফ ও অপারেটর আব্দুর রহিমকে চাকুরি থেকে অব্যাহতি দিয়েছেন।সেই সঙ্গে বর্তমানে পার্কে যারা কর্মরত রয়েছেন তারা সিইও'র এসব কর্মকান্ডে প্রতিবাদ করলে চাকুরীচ্যুত করার ভয় দেখান বলেও নাম প্রকাশ না করার শর্তে সংবাদকর্মীদের জানিয়েছেন একাধিক কর্মকর্তা-কর্মচারী।  

এছাড়া পার্কে ঘুরতে আসা দর্শনার্থীদের নানাভাবে হয়রানি ও বাজে প্রস্তাব দেয়ার ঘটনাও রয়েছে সিইও এর হয়ে কাজ করা তার নিজস্ব লোকজনের বিরুদ্ধে। রাতের আধারে তিনি পার্কের মধ্যে তাবু টানিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ ও পার্টি করে থাকেন। ওইসব পার্টিতে অংশগ্রহণ করে উঠতি বয়সের ছেলে-মেয়ে, যাদের অধিকাংশই হচ্ছে বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। এসব পার্টিতে চলে মাদক সেবনও। তবে এসব পার্টি রাতের আধারে হওয়ার ফলে প্রশাসনের ধরা ছোয়ার বাইরেই থেকেছে দীর্ঘ দিন। 
গত ১৩ সেপ্টেম্বর গাজীপুর জেলা ডিবি ও কালিয়াকৈর থানা পুলিশের যৌথ অভিযানে পার্কের অভ্যন্তরে 'নন্দন ভিলেজ' রিসোর্ট থেকে অসামাজিক কার্যকলাপের অভিযোগে তিন নারী ও তিন পুরুষকে আটক করেন। 

এসব কর্মকান্ডে পার্কে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও এলাকাবাসীর মধ্যে চরম ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। প্রশ্ন উঠে পার্কটির পরিচালকদের কর্মকান্ড নিয়েও।আর প্রধান নির্বাহী(সিইও)এসব কর্মকান্ডগুলো ব্যক্তি স্বার্থের জন্যই নন্দন পার্ক ব্যবহার করছেন বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।
  
এসব কর্মকান্ডে গত ২৬ সেপ্টেম্বর এলাকাবাসীর সঙ্গে ও মালিক পক্ষের যৌথ একটি সভা হয়। এই সভায় নন্দন পার্কের বর্তমান অবস্থা ও পার্কের অভ্যন্তরে অসামাজিক কার্যকলাপ এবং মাদকের বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। 
সভায় নন্দন পার্কের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকতা (সিইও) লে. কর্ণেল (অবসরপ্রাপ্ত) তুষার বিন ইউনুস এর বিষয়টি উত্থাপন করা হয়। মালিক পক্ষ বিষয়গুলো সমাধানের আশ্বাস দেন। 
ওই সভায় মালিকপক্ষের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কোম্পানীর সচিব ইঞ্জিনিয়ার হাসিনুর, নন্দন পার্কের পরিচালক এনামুল হক চৌধুরী। 
এলাকাবাসির পক্ষে উপস্থিত ছিলেন,মুক্তিযোদ্ধা আলী হোসেন সিকদার, সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের বন ও পরিবেশ বিষয়ক সম্পাদক মজনুল বারী সিকদার(সজিব),গাজীপুর জেলা পরিষদের সদস্য ফালাক উদ্দিন মৃধা, আটাবহ ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান এমএ আলীম,বর্তমান চেয়ারম্যান (ভারপ্রাপ্ত)গনিসহ স্থানীয় বিভিন্ন নেতৃবৃন্দ।
 
এ ব্যাপারে নন্দন পার্কের বর্তমান প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা(সিইও) লে. কর্ণেল(অবসরপ্রাপ্ত) তুষার বিন ইউনুস মোঠোফোনে জানতে চাইলে বলেন, সম্প্রতি নন্দন পাকর্রে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে শীঘ্রই সাংবাদিকদের নিয়ে একটি সংবাদ সেম্মলনের মাধ্যমে সব কিছু জানাবো।বর্তমানে পার্কের সব কিছুই সচল রয়েছে বলেও তিনি জানান। 
নন্দন পার্কের পরিচালক এনামুল হক চৌধুরী বলেন, সিইও এর বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ এসেছে, আমি বোর্ডকে বিষয়টি লিখিতভাবে জানিয়েছি। বোর্ড আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নিবে।
নন্দন পার্কের ভিতরে রিসোর্টে অসামাজিক কার্যকলাপের ব্যাপারে জানতে চাইলে তিনি আরও বলেন, পার্কের ভেতর এধরনের কর্মকান্ড পরিচালিত হউক আমরা চাইনি। এই ঘটনার জন্য পার্কের ম্যানেজারকে বরখাস্ত করা হয়েছে। ভবিষ্যতে এধরনের ঘটনার পুনরাবৃত্তি যতে না ঘটে সেদিকে কড়া নজর রাখা হচ্ছে। 
কেআই/