ঢাকা, শনিবার   ১৯ জুলাই ২০২৫

কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় শার্শার বেগুন চাষিরা হতাশ 

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৭:২৯, ২৯ জানুয়ারি ২০২০

Ekushey Television Ltd.

চলতি মাসে যশোরের শার্শা উপজেলায় বেগুন চাষে ব্যাপক লোকসান গুনছেন চাষিরা। উৎপাদন বেশি হলেও বাজারে কাঙ্খিত দাম না পাওয়ায় চরম ভাবে হতাশায় পড়েছেন তারা। এছাড়া চলতি মৌসুমে বেগুনে পোকার আক্রমণের সাথে সাথে অপরিকল্পিত কীটনাশক ব্যবহার করায় খরচ ও লোকসানের ভাগ বেশি হওয়ায় আর্থিক ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়েছে বেগুন চাষিরা।   
   
সাদা পোকা (হোয়াইট ফ্লাই) পাতার রস শুষে নেওয়ায় পাতা কুঁকড়ে গাছ নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। নলি পোকা বেগুনের মধ্যে ছিদ্র করে ঢুকে পড়ছে। এই অবস্থায় লোকসানের আশঙ্কায় যথেচ্ছ  কীটনাশক ব্যবহার করছেন অধিকাংশ চাষি। আর তাতে মানুষের শরীরে রোগ দেখা দেওয়ার ব্যাপক ভাবে আশঙ্কা বাড়ছে বলে মনে করেন বিশেষজ্ঞরা ।

এই মুহূর্তে বাজারে যে কীটনাশকগুলো বিক্রি হয় সেগুলি কতটা বিষাক্ত তা তার কৌটার গায়ে লাল, নীল, হলুদ ও সবুজ হীরক চিহ্ন দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে। লাল হীরক চিহ্ন মানে সেটির ব্যবহার সীমাবদ্ধ। তারপর হলুদ, নীল, সবুজ মানে সেটি নিরাপদ। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রে চাষিরা লোকসানের আশঙ্কায় ভয়ঙ্কর বিষাক্ত কীটনাশকগুলোই ব্যবহার করেন ফসলের দ্রুত রোগমুক্তির আশায়।

এই ধরনের কীটনাশকের বিষক্রিয়া বেগুন ও অন্য সব্জির মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ৬ সপ্তাহ থাকে। এই সময়ের মধ্যে সেই সব্জি বাজারে বিক্রি করলে, তা খেয়ে অসুস্থ হতে পারেন লোকজন।

এলাকার সব্জি চাষিরা বলেন, আমরা কী করব? চাষি শুধু দেখবে তার ফসল উঠে বাজারে গেল কি না। কীটনাশকে কত বিষ, তা নিয়ে গবেষকরা ভাবুক। এখন বেগুনে পোকার আক্রমণ তার মধ্যে বাজারে তিন দিন আগে বেগুন পাইকারী ভাবে তিন থেকে চার টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। 
বুধবার (২৯ জানুয়ারি) স্থানীয় বাজারে পাইকারি বিক্রি হয়েছে ছয় থেকে ৮ টাকা কেজিতে। কীটনাশক ব্যবহারে অনেক খরচ। সব মিলিয়ে আমরা খুব হতাশায় পড়েছি। 

চাষিরা জানায়, এই বেগুন খোলা বাজারে ১৫ থেকে ২০ টাকা কেজিতে বিক্রি হলেও আমরা পাচ্ছি মাত্র ৬ থেকে ৮ টাকা। আমাদের কাছ থেকে কিনে নিয়ে তারা হাটে নিয়ে উচ্চমুল্যে বিক্রি করছে। অথচ মাথার ঘাম পায়ে ফেলে আমরা সবজি উৎপাদন করে লসের মধ্যে পড়ে আছি। ন্যায্য দামটুকু পাচ্ছি না। 
   
শার্শা উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ সৌতম কুমার শীল বলেন, কীটনাশক ব্যবহার নিয়ে যতটা অজ্ঞতা সবজি চাষে আছে, তা অন্য কোনও চাষে নেই। এই নিয়ে চাষিরা সচেতন না হলে ফসলের রোগ আটকাতে গিয়ে মানুষের শরীরে ভয়ঙ্কর বিষ ছড়াবে এটা, এখনও বহু চাষি বুঝতে চায় না।

সর্বাধিক কীটনাশক দেওয়া হয় বেগুনে। কড়া কীটনাশক ছড়িয়ে পরদিনই বিক্রি করে দিচ্ছে চাষি এমনও দেখা যায়। ওই রাসায়নিক রক্তের সঙ্গে মিশলে কিডনি, লিভারে জমা হয়। দীর্ঘমেয়াদী ফল খুব খারাপ, বললেন উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. অশোক কুমার সাহা।
 
কীটনাশক বিক্রির দোকানগুলো কার্যত হাতুড়ে চিকিৎসকের চেম্বারে পরিণত হয়েছে। যেমন ইচ্ছে পরিমাণে কড়া কড়া ওষুধ দিতে বলা হচ্ছে চাষিদের। অতিরিক্ত অ্যান্টিবায়োটিক খেলে যেভাবে আর যথাযথ ওষুধে কাজ হয় না, সেভাবে অতিরিক্ত কীটনাশক ব্যবহারের ফলে আর কাজ হচ্ছে না ঠিক কীটনাশকেও। বেশি মাত্রার কীটনাশক ব্যবহারে নতুন প্রজাতির পোকার আক্রমণও বাড়ছে। 

তবে রাসায়নিক কীটনাশকের চাইতে পরিবেশবান্ধব উপায়ে পোকার উপদ্রব আটকানো যায়। সাধারণত বেগুন, টমেটো বা ফুলকপিতে পাতার নীচে পোকাগুলি ডিম পাড়ে। প্রথম থেকেই নিয়মিত চাষিরা যদি নজর রাখেন, তাহলে ওই পাতাগুলি ছিঁড়ে পা দিয়ে থেঁতলে দিলে পোকার বংশবৃদ্ধি আটকানো যায়।
 
কৃষি কর্মকর্তা আরও বলেন, শীত মৌসুমে বাজারে শীতকালীন প্রচুর সবজির উপস্থিতি থাকে সেই ক্ষেত্রে বেগুনের একটু চাহিদা ও দাম কমে যেতে পারে। এছাড়া বিষযুক্ত বেগুন কিনে বাড়িতে ফুটানো পানিতে লবন মিশিয়ে ১৫ থেকে আধাঘন্টা ভিজিয়ে রাখলে প্রায় ৯০ শতাংশ বিষমুক্ত হতে পারে। চলতি মৌসুমে যশোরের শার্শায় ২শ ৫০ হেক্টর জমিতে বেগুনের আবাদ হয়েছে। 

কেআই/এসি
 
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি