ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৪ মে ২০২৪

বেনাপোল ষ্টেশনে ‘করোনাভাইরাস’ সনাক্তের গুজবে তোলপাড়

বেনাপোল (যশোর) প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৯:১৭, ২০ ফেব্রুয়ারি ২০২০

বেনাপোল ষ্টেশনে ‘করোনাভাইরাস’ সনাক্তের গুজবে তোলপাড়

বেনাপোল ষ্টেশনে ‘করোনাভাইরাস’ সনাক্তের গুজবে তোলপাড়

ভারত থেকে আসা কলকাতা-খুলনাগামী বন্ধন এক্সপ্রেস ট্রেনে জহিরুল ইসলাম নামে বাংলাদেশী পাসপোর্টযাত্রী ‘করোনাভাইরাসে’ সনাক্ত হয়েছে গুজব ছড়িয়ে পড়ায় ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েছে সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীসহ এলাকার লোকজন। 

‘করোনাভাইরাসে’ আক্রান্ত শুনে এলাকার কোন সংবাদকর্মীও ভয়েতে ঘটনাস্থলে যেতে সাহস পায়নি। পরে বিভিন্ন মাধ্যমে খবর নিয়ে জানা যায়, বিষয়টি সম্পূর্ণ গুজব। তবে এই যাত্রী গত জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি চীন থেকে দেশে আসে বলেও জানা যায়। 

গত সোমবার বেলা ১২টার সময় বেনাপোল কাস্টমস কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী তার ফেসবুক স্ট্যাটাসে বাংলাদেশী এক পাসপোর্টযাত্রী ‘করোনাভাইরাসে’ আক্রান্ত রোগী বেনাপোল রেলষ্টেশনে সনাক্ত হয়েছে এমন খবরে এলাকার সাধারণ লোকজন আতঙ্কিত হয়ে পড়ে।  

তাৎক্ষণিক এমন খবরে কাস্টমস-এর সহকারী কমিশনার উত্তম চাকমা ও আকরাম হোসেন বিষয়টি যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে অবহিত করেন। 

‘করোনাভাইরাসের’ গুজব ওঠা পাসপোর্টযাত্রী হলো- কুমিল্লা জেলার জয়নাল আবেদিনের ছেলে জহিরুল ইসলাম ও রাজবাড়ী জেলার সুমিত ভৌমিক। পরে তাদের বিশেষ ব্যবস্থাপনায় বেনাপোল ও শার্শার মেডিকেল টিম সেখানে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাদের শরীরে কোনও ‘করোনাভাইরাসে’র লক্ষণ পাওয়া না যাওয়ায় তাদের ছেড়ে দেয়া হয়। তার আগে ঘটনাটি ছড়িয়ে পড়ে দেশের সর্বত্র।

শার্শা উপজেলা স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ডাক্তার আজিম উদ্দিন বলেন, এ ধরনের সংবাদে আমরা জহিরুল ইসলাম ও সুমিত ভৌমিক নামে দুইজনকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করি। তাদের শরীরে এ ধরনের কোনও ভাইরাসের সিমটম পাওয়া যায়নি। এরপর আমরা ঢাকায় উচ্চ পর্যায়ে কথা বলে তাদের ছেড়ে দেই। 

তবে ওই দুইজন পাসপোর্টযাত্রী ব্যবসায়ী। তারা চীনের সঙ্গে ব্যবসায় যুক্ত। প্রায় ২৫ দিন আগে তারা চীন থেকে বাংলাদেশে আসে বলেও জানান তিনি।
 
এদিকে, এই সংবাদে বেনাপোল কাস্টমের কমিশনার বেলাল হোসাইন চৌধুরী ফেসবুকে ‘করোনাভাইরাসে’র ব্যাপারে নিশ্চিত করে জানান, ভারত থেকে আসা ‘বন্ধন এক্সপ্রেস’ থেকে একজন ‘করোনাভাইরাসে’র রোগী সনাক্ত করা হয়েছে। কাস্টমস কর্মকর্তারা রেলের নিয়মিত দায়িত্ব পালনকালে একজন বিশ্বস্ত সূত্রে গোপন সংবাদ পায় এবং রোগীকে সনাক্ত করে। তাৎক্ষণিকভাবে এসি উত্তম চাকমা ও আকরাম হোসেন বিষয়টি যশোর সিভিল সার্জন অফিস ও উপজেলা স্বাস্থ্য অফিসকে জানায় এবং সংশ্লিষ্ট গোয়েন্দা সংস্থাগুলোরও নজরে আনে! সনাক্তকৃত রোগীর নাম জহিরুল ইসলাম। বাড়ি কুমিল্লায়। তিনি চীন থেকে ভারতে আসেন! ভারতীয়রা বিষয়টি সম্ভবত বুঝতে পেরে তাকে টিকিট ছাড়াই ট্রেনে তুলে দেন। তিনিও আত্মগোপন করেছিলেন। 

স্ট্যাটাসে আরও বলা হয়, বিস্ময়কর হলেও বেনাপোল কাস্টম হাউস কর্মকর্তাদের তৎপরতায় এ অঞ্চলে প্রথম ‘করোনাভাইরাস রোগী দেশে ঢোকার আগেই ধরা পড়ে।

পরে বেলা ১টা ৪০মিনিটের সময় কাস্টমস কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করে ফেসবুক স্ট্যাটাসে বলেন, চিকিৎসকের পরীক্ষায় জহিরুল ইসলামকে ‘করোনাভাইরাস’মুক্ত বলা হয়েছে। আমরা নিজেদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা করি। 

ভারতীয় রেল গার্ড মেনিফেস্ট দিতে গিয়ে বেনাপোল কাস্টমস টিমের রাজস্ব কর্মকর্তাকে (আর.ও) বলেন,  “ট্রেনে ৬৫ জন যাত্রী, একজন অনুপস্থিত ও একজন করোনা রোগী আছে”! তাৎক্ষণিক চেকপোস্টের ডাক্তার আজিমউদ্দিন আসেন এবং তার পাসপোর্ট দেখে তাকে সম্ভাব্য রোগী হিসেবে আলাদা করে নেন। প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করেন।

গার্ডের বক্তব্য, ডাক্তারের করোনা সন্দেহযুক্ত যাত্রী খুঁজে পাওয়া ও যাত্রীর ভাবভঙ্গী থেকে তাকে আমাদের টিম সন্দেহবশত: করোনা রোগী বলেছে। এ বিষয়ে কোনও সংশয় তৈরী হলে আমরা আন্তরিকভাবে দু:খিত!
 
তিনি বলেন, সবাই সতর্ক থাকুন, সচেতন থাকুন নিরাপদে থাকুন। আমরা সচেতনতার জন্য পোস্ট দেই। সংশয়ের জন্য নয়। দয়া করে কেউ আতংক ছড়াবেন না। কাস্টমস চেকপোস্টে সচেতনতার জন্য আমরা গত ২৯ জানুয়ারি তারিখে করোনা সচেতনতা সেমিনার করি। স্বাস্থ্যকর্মকর্তাদের প্রদর্শিত নির্দেশনার আলোকে কাস্টমস টিম দায়িত্বের অংশ হিসেবে রোগীকে আলাদা করে স্বাস্থ্যকর্মীদের কাছে হস্তান্তর করেন বলে তিনি জানান।
 
বেনাপোল রেল ষ্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, ষ্টেশনে এ ধরনের একজন রোগীর ব্যাপারে কাস্টমস কর্তৃপক্ষ ‘করোনাভাইরাস’ আক্রান্ত রোগী বলে সন্দেহ করেছিল। পরে স্বাস্থ্য পরীক্ষায় কোন কিছু পাওয়া যায়নি। তাদের ছেড়ে দেয়া হয়েছে। এটা একটি নিছক গুজব ছড়িয়েছে। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি