শেরপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের পানিতে ৬ ইউনিয়ন প্লাবিত
প্রকাশিত : ২০:৩৫, ১৮ জুলাই ২০২০

পুরাতন ব্রহ্মপুত্র নদের পানি বৃদ্ধি পেয়ে শেরপুরের ৬টি ইউনিয়ন প্লাবিত হয়েছে। ফলে ওই ইউনিয়নগুলোর প্রায় শতাধিক ঘর-বাড়ি, পাট, আউশ-আমন বীজতলা, সবজী ক্ষেত সম্পূর্ণ পানিতে তলিয়ে গিয়েছে। প্লাবিত এলাকার প্রায় ৩০ হাজার লোক বিভিন্ন স্কুল ও বন্যা আশ্রয়ন কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছে। প্লাবিত ইউনিয়নগুলো হল, শেরপুর সদর উপজেলার কামারেরচর, চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়া, বলাইরচর, চরশেরপুর ও গাজির খামার ইউনিয়ন।
সরেজমিন শনিবার দুপুরে গিয়ে দেখা গেছে, চরপক্ষীমারী ইউনিয়নের কুলুরচর বেপারীপাড়া, খাসপাড়া টাকীমারী, বাঘলদি, ডাকপাড়া, চুনিয়ারচরসহ ১৭ গ্রাম, চরমোচারিয়া ইউনিয়নের হরিনধরা, চরভাবনা, মুন্সীর চর, নলবাইদ, ধাতিয়াপাড়াসহ ওই ইউনিয়নের ৯০ ভাগ, কামারেরচর ইউনিয়নের ৬ ও ৭নং চর, চর সাহাব্দী, বাঘেরচরসহ ইউনিয়নের অধিকাংশ গ্রাম পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে। আকস্মিক বন্যায় আউশ আবাদ, সবজি ক্ষেত ও পাট আবাদ পানিতে তলিয়ে গেছে।
শনিবার দুপুরে হুইপ আতিউর রহমান আতিক নৌকাযোগে বেপারীপাড়ায় বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ মানুষদের দেখতে যান। এসময় তিনি তিন শতাধিক মানুষের হাতে খাবার তুলে দেন। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, “কোন চিন্তা করবেন না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আপনাদের পাশে আছেন। সরকার করোনার পাশাপাশি বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থদের সব রকমের সহযোগিতা করবে।” এসময় তাঁর সাথে সদর ইউএনও, স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান ও আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
এদিকে পানি বৃদ্ধির ফলে শেরপুর-জামালপুর মহাসড়কের নন্দীরবাজার পোড়ার দোকান ডাইভারশনের উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হওয়ায় শেরপুর থেকে উত্তর বঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে।
পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) সূত্রে জানা যায়, ব্রহ্মপুত্র নদের জামালপুর ঘাট পয়েন্টে বিপদ সীমা ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হচ্ছে। এতে নদসংলগ্ন সদর উপজেলার চরপক্ষীমারী, চরমোচারিয়া ও কামারেরচর ইউনিয়নের ১৭টি গ্রাম প্লাবিত হয়। সেই সঙ্গে ভোগাই নদীর ঢলের পানি নিন্মাঞ্চলে নেমে আসায় উপজেলার গাজীরখামার ইউনিয়নের ৩টি গ্রাম প্লাবিত হয়। ওই সব গ্রামের প্রায় ১০ হাজার মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে।
সদর উপজেলার হরিণধরা গ্রামের প্রান্তিক কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ৫ শতাংশ জমিতে তিনি আমন বীজতলা করেছেন। বন্যার পানিতে সব তলিয়ে গেছে। মুন্সীরচর গ্রামের কৃষক সমেজ মিয়া ৭০ শতাংশ জমিতে বাদাম লাগিয়ে ছিলেন। আবাদও ভালো হয়েছে। কিন্তু আকস্মিক বন্যার পানি আসার ফলে তিনি আবাদ ঘরে তুলতে পারলেন না বলে জানান। পানি সরে গেলে সরকার থেকে সহায়তা না দিলে আর আবাদ করা সম্ভব হবে না।
চরপক্ষীমারী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আকবর আলী বলেন, বন্যার পানিতে তার ইউনিয়নের কুলুরচর ব্যাপারীপাড়া, নতুন ভাগলগড়, চুনিয়ারচর, টাকিমারী, ডাকপাড়া ও জঙ্গলদী গ্রামের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়েছে। বিপুলসংখ্যক মানুষ পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। চরপক্ষীমারী ইউপি’র ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সদস্য জাফর আলী বলেন, বন্যাকবলিত কুলুরচর ব্যাপারীপাড়া গ্রমের প্রায় দেড়শ পরিবার জামালপুর শহর রক্ষা বাঁধ ও কুলুরচর ব্যাপারীপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে আশ্রয় নিয়েছে।
সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা পিকন কুমার সাহা জানান, বন্যায় ১২০ হেক্টর জমির আমন বীজতলা ও ৩০ হেক্টর জমির সবজির আবাদও ২০ হেক্টর আউস আবাদ পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
জামালপুর পানি উন্নয়ন বোর্ডের পানি পরিমাপক মো. মোস্তফা মিয়া বলেন, শেরপুর সদর উপজেলার ব্রহ্মপুত্র সেতু পয়েন্টে নদের পানি বিপদ সীমার ১ সেন্টিমিটার উপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ পানি আরও বাড়বে বলে তিনি জানান।
কেআই/
আরও পড়ুন