ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নদী ভাঙ্গনে বিলীনের পথে ২৬ গ্রাম

বগুড়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:৫৫, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২০

বগুড়ার ধুনট বাঙালি নদীর তীব্র ভাঙনে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন নদী পাড়ের বাসিন্দারা। অব্যাহত নদী ভাঙ্গনের ফলে বগুড়া জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে উপজেলার ২৬টি গ্রাম। ইতিমধ্যে ওইসব গ্রামের বসতবাড়ি, আবাদি জমিসহ বেশকিছু স্থাপনা নদী গর্ভে বিলীন হয়েছে।

জানা গেছে, উপজেলার উত্তর-পশ্চিম পাশ দিয়ে বয়ে যাওয়া বাঙালি নদীর উত্তরে সাতবেকি গ্রাম থেকে দক্ষিণে পেঁচিবাড়ী গ্রাম পর্যন্ত প্রায় ৪০ কিলোমিটার এলাকার নদীর দুই পাড়ের ২৬টি গ্রাম পড়েছে ভাঙ্গনের মুখে। ভাঙ্গনকবলিত গ্রামগুলো হলো সাতবেকি, পিরাপাট, ধামাচামা, জয়শিং, নান্দিয়ারপাড়া, নাংলু, ফরিদপুর, নিমগাছি, বেড়েরবাড়ী, বিলচাপড়ি, হেউডনগর, হাসাপোটল, রামনগর, রাঙ্গামাটি, বিলনোতাল, ডেকরাঘাট, ঝাঝর, শৈলমারী, নলডেঙ্গী, বরইতলী, নবীনগর, বথুয়াবাড়ী, বিলকাজুলী, চকধলী, শাকদহ ও পেঁচিবাড়ি।

এলাকাবাসী জানান, ২৬টি গ্রামের মানুষ গত দুই যুগের বেশি সময় ধরে বাঙালি নদীর ভাঙ্গা গড়ার খেলার মধ্যেই জীবন জীবিকা নির্বাহ করে আসছে। বর্তমানে জয়শিং, নিমগাছি, পেঁচিবাড়ি, রামনগর, ফরিদপুর গ্রাম ভয়াবহ নদী ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। এতে করে এসব গ্রামের কমপক্ষে ২০০টি পরিবারের বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।

ফরিদপুর গ্রামের নদী ভাঙ্গনের শিকার আনিচুর রহমান ও মামুনুর রশিদ জানান, ‘বাঙালি নদী বছরের বেশির ভাগ সময় পানি শূন্য থাকে। কিন্তু ভরা বর্ষায় নদী কানায় কানায় ভরে ওঠার পর পাড় ভাঙ্গন শুরু হয়। বর্ষা মৌসুমের জোয়ার ভাটার নীলা খোলায় টানা ২/৩ মাস চলে নদী ভাঙ্গনের তাণ্ডব। গত কয়েক বছরে বাঙালির পেটে গেছে গ্রামের অধিকাংশ এলাকা।

ফলে ভিটে মাটি হারিয়ে শতশত মানুষ হয়েছেন নিঃস্ব। জয়শিং গ্রামের ফরহাদ হোসেন জানান, ‘বাঙালি নদীর ভাঙ্গনে জয়শিং সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও একটি পাকা মসজিদসহ পুরো গ্রাম পড়েছে ঝুঁকিরমুখে। ভাঙ্গনরোধ করা না গেলে পুরো গ্রামই নদীগর্ভে বিলীন হবে। নদী ভাঙ্গনের ফলে বগুড়া জেলার মানচিত্র থেকে মুছে যেতে চলেছে ধুনট উপজেলার ২৬ গ্রামের নাম।’

নিমগাছি ইউনিয়ন চেয়ারম্যান আজাহার আলী পাইকার বলেন, ‘বাঙালি নদীর ভাঙ্গনের ঝুঁকিতে রয়েছে তার ইউনিয়নের প্রায় ১০টি গ্রাম। ভাঙ্গনকবলিত এসব এলাকা রক্ষার জন্য একাধিকবার বগুড়া পাউবোর কাছে ধর্না দিয়েও কোন প্রতিকার পাওয়া যায়নি।’

বথুয়াবাড়ি গ্রামের সাবেক ইউপি সদস্য বেদার উদ্দিন বলেন, ‘বর্তমানে বাঙালি নদীর পানি কমতে থাকায় প্রবল স্রোত ঘূর্ণাবতের সৃষ্টি হয়ে ভয়ংকর রূপ নিয়েছে। প্রতিদিন গ্রাস করে চলেছে নতুন নতুন এলাকা। নদীতে বিলীন হচ্ছে গ্রাম, জনপদ, আবাদি জমিসহ বিভিন্ন স্থাপনা। এতে নিঃস্ব হচ্ছে মানুষ, বদলে যাচ্ছে এসব এলাকার মানুষের জীবন জীবিকার ধরন।’

এ বিষয়ে বগুড়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) উপ-সহকারী প্রকৌশলী আসাদুল হক বলেন, ‘গাইবান্ধা থেকে সিরাজগঞ্জ পর্যন্ত বাঙালি নদীর নাব্যতা ফিরিয়ে আনতে ড্রেইজিং ও ভাঙ্গনরোধে অর্থ বরাদ্দ পাওয়া গেছে। এর মধ্যে বগুড়া জেলার ৯৯ কিলোমিটার বাঙালি নদীর ড্রেইজিং ও ভাঙ্গনরোধে কাজ করার জন্য টেন্ডারের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে আগামী শুস্ক মৌসুমে কাজ শুরু করা যাবে।’

এআই//এমবি


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি