ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৩ এপ্রিল ২০২৪

রাজস্ব আদায়ে ধস: বেনাপোলের ওপারে আটকে আছে ৫ হাজার পণ্যবাহী ট্রাক

বেনাপোল প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১২:৫০, ৪ মার্চ ২০২১

দেশের সর্ববৃহৎ স্থলবন্দর বেনাপোলে প্রবেশের অপেক্ষায় আছে পাঁচ হাজারের বেশি ট্রাক। এসব ট্রাক আমদানিকৃত পণ্য নিয়ে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে আটকে আছে।  ফলে দু’দেশের আমদানি-রফতানি বাণিজ্য এবং রাজস্ব আয়ে বড় ধরনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। 

অভিযোগ উঠেছে, বেনাপোল বন্দর দিয়ে পণ্য আমদানি-রফতানির ক্ষেত্রে ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বনগাঁ পৌরসভার মেয়রের খামখেয়ালিপনা, আমদানি-রফতানিতে নাক গলানোসহ চাঁদার দাবিতে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো কালিতলা পার্কিংয়ে রেখে দেওয়ায় বেনাপোল-পেট্রাপোল বন্দর দিয়ে দু‘দেশের মধ্যে আমদানি-রফতানি বন্ধ হওয়ার পথে। আর এ কারণে রাজস্ব আদায়ে বড় ধরনের ধস নামতে শুরু করেছে।

বেনাপোল বন্দর সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, এই বন্দর দিয়ে প্রতিবছর ভারতের সঙ্গে অন্তত ২৪ হাজার কোটি টাকার বাণিজ্য হয়। বছরে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ১০ হাজার কোটি টাকার রাজস্ব আয় করে থাকে বেনাপোল কাস্টমস হাউজ। এই বন্দর দিয়ে সাধারণত প্রতিদিন ৭শ’ থেকে ৮শ’ ট্রাক পণ্য আমদানি হতো ভারত থেকে। বর্তমানে এই সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৩শ’ থেকে ৪শ’ ট্রাকে।

বনগাঁ ও পেট্রাপোল স্থলবন্দরে সিন্ডিকেট কর্তৃক অব্যবস্থাপনা এবং অনিয়মের কারণে পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পেট্রাপোলে প্রবেশে ২০ দিনেরও বেশি অপেক্ষা করতে হয়। এই অযৌক্তিক বিলম্ব আমদানিকারকদের জন্য নতুন উদ্বেগের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। অনেক প্রচেষ্টা সত্ত্বেও এই সিন্ডিকেট থেকে মুক্তি পায়নি ব্যবসায়ীরা। তবে বন্দর কর্তৃপক্ষ প্রতিবারই বলছে তারা বিষয়টি সমাধানের চেষ্টা করছে।

ব্যবসায়ীরা জানান, সীমান্তের ওপারে বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য (ডাকু) ‘কালিতলা পার্কিং’ নামে একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন পার্কিং তৈরি করেছেন। সরকারি পার্কিংয়ের চেয়ে এটি আকারে বড়। তার লোকজন মোটামুটি জোর করেই আমদানি পণ্যবোঝাই ট্রাকগুলো সেখানে প্রবেশ করাচ্ছে। প্রতিদিন ট্রাক প্রতি পার্কিং খরচ নেওয়া হচ্ছে ৫শ’ থেকে এক হাজার টাকা করে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আমদানিকৃত পণ্যবাহী ট্রাকগুলো পেট্রাপোলে প্রবেশের আগে জোর করে ২০ থেকে ২৫ দিন বনগাঁ পৌরসভার নামে তৈরি করা ওই পার্কিংয়ে রাখা হয়, যার ফলে আমদানিকারকরা চরম ক্ষতির মুখে পড়ছেন। 

পার্কিংয়ে যে কয়দিন পণ্যবাহী ট্রাক থাকবে সে কয়দিনের টাকা ভারতের রফতানিকারকরা বাংলাদেশী আমদানিকারকদের কাছ থেকে নিয়ে নিচ্ছে। ওখান থেকে প্রতিদিন তাদের ইচ্ছেমত কবে কোন ট্রাক বাংলাদেশে যাবে তা নির্ধারণ করে দেয়ালে কাগজ সেটে দেন। তবে অনেকে জরুরিভিত্তিতে বনগাঁ সিন্ডিকেটকে ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা দিয়ে মাল নিয়ে থাকেন।দীর্ঘ অপেক্ষার কারণে আমদানিকৃত পণ্যগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। এছাড়া শিল্পের কাঁচামাল সময়মতো কারখানায় পৌঁছাতে না পারায় মারাত্মকভাবে শিল্প কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়াডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কর্মকর্তারা জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামালের পাশাপাশি বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। ওপারে পণ্য আমদানিতে দীর্ঘসূত্রতার কারণে অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। কাঁচামালের অভাবে সময়মত বিদেশি ক্রেতাদের পণ্য রফতানি করতে না পরায় অর্ডার বাতিল হয়ে যাচ্ছে। পাশাপাশি প্রভাব পড়ছে রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রেও। 

এই পরিস্থিতিতে গত মঙ্গলবার (২ মার্চ) সকালে বেনাপোল কাস্টম কমিশনার আজিজুর রহমান আমদানিকৃত ট্রাকের সংখ্যা বৃদ্ধি ও রাজস্ব আয় বাড়াতে ভারতীয় ব্যবসায়ী ও কাস্টমস কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।

বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট স্টাফ কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক সাজেদুর রহমান জানান, বেনাপোলের ওপারে এখন ভয়াবহ পণ্যবাহী ট্রাকেটর জট লেগে রয়েছে। প্রায় পাঁচ হাজার ট্রাক বাংলাদেশে প্রবেশের অপেক্ষায় রয়েছে।

ইন্দো-বাংলা চেম্বার অফ কমার্স সাব কমিটির পরিচালক মতিয়ার রহমান জানান, বেনাপোলের ওপারে ভারতের পেট্রাপোল বন্দরে গড়ে উঠেছে একটি শক্তিশালী চাঁদাবাজ সিন্ডিকেট। বনগাঁ পৌরসভার মেয়র শংকর আঢ্য (ডাকুর) নেতৃত্বে তার লোকজন প্রতিটি পণ্যবোঝাই ট্রাক থেকে চাঁদা আদায় করছে। পণ্যবোঝাই একটি ট্রাক ২০ দিন ওপারে আটকে থাকলে তাকে ৪০ হাজার রুপি পরিশোধ করতে হচ্ছে। ফলে আমদানিকারকরা মোটা অঙ্কের আর্থিক লোকসানে পড়ে সর্বস্বান্ত হচ্ছেন।

বেনাপোল কাস্টম ক্লিয়ারিং অ্যান্ড ফরোয়ার্ডিং এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন জানান, দেশের ৭৫ ভাগ শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল ও বিভিন্ন খাদ্যদ্রব্য আসে এই বন্দর দিয়ে। আমদানিতে জটিলতার কারণে এসব পচনশীল পণ্য নষ্ট হচ্ছে এবং অনেক শিল্প প্রতিষ্ঠানের ওপর এর প্রভাব পড়ছে। রাজস্ব আদায়ও কমে যাচ্ছে। 

বেনাপোল কাস্টম কমিশনার মো. আজিজুর রহমান জানান, ভারতীয় পেট্রাপোল কালিতলা পার্কিংয়ে বর্তমানে ৫ হাজার পণ্যবোঝাই ট্রাক আটকা আছে। আমরা রাজস্ব আয় ও ট্রাক সংখ্যা বৃদ্ধি করতে ভারতীয় কাস্টমস ও ব্যবসায়ীদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক করে যাচ্ছি।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি