ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

নওগাঁয় লাঠি ও ঢেঁকি খেলার জমজমাট আসর 

নওগাঁ প্রতিনিধিঃ

প্রকাশিত : ২০:৪২, ৫ মার্চ ২০২১

নওগাঁর প্রত্যন্ত পল্লী আত্রাই উপজেলার মাড়িয়া গ্রামে উৎসব মুখর পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়ে গেলো গ্রাম বাংলার বিলুপ্ত প্রায় ঐতিহ্যবাহি লাঠি ও ঢেঁকি খেলা। বৃহস্পতিবার বিকেলে গ্রামের খলিয়ানে এই খেলা অনুষ্ঠিত হলেও আশে-পাশের ২০ থেকে ২৫ গ্রামে ছিল উৎসবের আমেজ। আর এই খেলার আসরকে কেন্দ্র করে সকাল থেকে গ্রামে বসে মেলা।

মাদক,দূর্নীতি,সন্ত্রাস,বাল্য বিবাহ,কুসংষ্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে পূর্ণিমা পল্লী উন্নয়ন সংস্থা নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন গত ৮ বছর থেকে বিলুপ্ত প্রায় গ্রাম বাংলার এ খেলাগুলোর আয়োজন করে আসছে। তারই ধারাবাহিকতায় গত বৃহস্পতিবার ঐতিহ্যবাহী লাঠি ও ঢেঁকিসহ বিভিন্ন খেলার আয়োজন করা হয়। এই খেলার উদ্বোধন করেন স্থানীয় সাংসদ মোঃ আনোয়ার হোসেন হেলাল। উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান এবাদুর রহমানের সভাপতিত্বে এ উপলক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইখতেখারুল ইসলাম,উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি নৃপেন্দ্রনাথ দত্ত দুলাল, সাধারণ সম্পাদক আক্কাস আলী,পূর্নিমা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক এসএম হাসান সেন্টু প্রমুখ।

গ্রাম বাংলার সাংস্কৃতির অন্যতম বিনোদনের আরেক নাম লাঠি খেলা। তবে গ্রামীণ এলাকার সংস্কৃতির ধারক এই খেলা আজ বিলুপ্তির পথে। সেই সঙ্গে বিপাকে পড়েছে ঐতিহ্যিবাহী এই খেলাটির সঙ্গে জড়িত মানুষদের জীবন। কিন্তু দেশের বিভিন্ন এলাকায় এখনো এই খেলা ধরে রেখেছে স্থানীয়রা। ঠিক একইভাবে আত্রাইয়ের মাড়িয়া গ্রামে সেই জমজমাট লাঠি খেলার বসে আসর । একে অপরকে ঘায়েল করার চেষ্টা আর বাদ্যের তালে তালে ও নৃত্যের সাথে লাঠিয়ালদের এই খেলা উপভোগ করে আশে-পাশের  গ্রামের শিশু, নারী, পুরুষ,বৃদ্ধসহ হাজারো মানুষ।আত্রাইয়ের উপজেলার রাতোয়াল,দিঘা,মাড়িয়া ও রাজশাহীর বাগমারাসহ ৪টি লাঠিখেলার দল এ খেলায় অংশ নেয়। বাহারি ধরনের পোশাক পড়া লাঠিয়ালরা নেচে গেয়ে নানা ধরনের শারিরিক কসরত প্রদর্শণ করেন। প্রতিপক্ষের লাঠির আঘাত থেকে নিজেকে রক্ষা আর প্রতি পক্ষকে কাবু করার আনন্দ লাঠিয়াল আর দর্শকদের। তবে বাদ্যের তালে তালে যারা নেচে-গেয়ে দর্শকের মনে আনন্দ যোগায় তাদের জীবন-জীবিকা আজ সংকটাপূর্ণ। 

খেলা দেখতে আসা আব্দুর রহিম(৫৫) ও মরিয়ম বেগম(৪৮) জানান, গ্রাম থেকে এই খেলা গুলো ক্রমেই হারিয়ে যাচ্ছে। আগে গ্রামে পূজা-পার্বন বা কোন উৎসব হলেই শুরু হতো লাঠি খেলা। অনেকদিন পর খেলা উপভোগ করে খুব আনন্দ পেলাম। তবে  খেলায় অংশ নেওয়া লাঠিয়ালদের মধ্যে আমজাদ হোসেন, কবির শেখসসহ বেশ কযেকজন জানালো হতাশার কথা। তারা বলেন বংশ পরম্পায় আমরা এই খেলা কওে আসছি। আমার বাবা শিখেছে আমার দাদার কাছে,আমি শিখেছি বাবার কাছে আর এখন আমার সন্তানকে শিক্ষা দিচ্ছি। আগে লাঠি খেলেই সংসারের ভরন পোষন করেছে। কিন্তু এখন আর চলে না। আমাদের অনেকেই এই খেলা ছেড়ে দিয়ে অন্য পেশায় চলে গেছে। এই ঐহিত্য ধরে রাখতে হলে সমাজের বৃত্তবাণরাসহ সরকারি  পৃষ্টপোষকতা প্রয়োজন বলে তারা মন্তব্য করেন। 

স্থানীয় প্রবীন শিক্ষক সিদ্দিকুর রহমান জানান, আগে এই খেলাগুলো প্রতি বছর বিভিন্ন গ্রামে অনুষ্ঠিত হতো। গ্রাম বাংলা থেকে প্রায় বিলুপ্তি এই খেলাগুলো আরো বেশি করে আয়োজন করা হলে সমাজে বিভিন্ন ধরনের অপরাধ প্রবণতা হ্রাসের পাশাপাশি নিজেদের সংস্কৃতি ধরে রাখা সম্ভব হবে।

মারিয়া গ্রামে পূর্ণিমা পল্লী উন্নয়ন সংস্থার পরিচালক এস এম হাসান সেন্টু জানান, সমাজের বৃত্তবানরা এগিয়ে এলে গ্রাম বাংলার বিলুপ্ত হওয়া এই খেলাগুলো আরো বেশি করে আয়োজন করা সম্ভব হবে।

নওগাঁ-৬(রানীনগর-আত্রাই) আসনের সংসদ সদস্য মোঃ আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন দেশে মাদক, দূর্নীতি, সন্ত্রাস, বাল্য বিবাহ, কুসংষ্কার মুক্ত সমাজ গড়ে তুলতে গ্রামীণ ঐতিহ্যবাহী খেলাসহ সব ধরনের বিষযে সরকার সাধ্যমত সহায়তা প্রদান করছে। আগামীতে এসব বিষয়ে আরো বেশী গুরুত্ব দেওয়া জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান তিনি।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি