ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১৬ মে ২০২৪

বিশ্ব মেডিটেশন দিবসের পুরস্কার পেল কসমো স্কুলের ৭ ছাত্র

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:২৭, ২৩ জুন ২০২১

বিশ্ব মেডিটেশন দিবস উপলক্ষে আয়োজিত একাধিক  প্রতিযোগিতায় ৫৮ জন বিজয়ীর মধ্যে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজ থেকেই পুরস্কার পেয়েছে ৭ জন শিক্ষার্থী কোয়ান্টা, যা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানটির জন্যে একটি বিশেষ অর্জন। প্রতিযোগিতায় প্রত্যেক বিজয়ীকে ১০ হাজার টাকার বই পুরস্কার দিয়েছে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশন। এই প্রতিযোগিতায় দেশ ও বিদেশের প্রায় দুই হাজার প্রতিযোগী অংশগ্রহণ করেন।     

২১ জুন সন্ধ্যায় যথাযথ স্বাস্থ্যবিধি মেনে রাজধানীর কাকরাইলের আইডিইবি ভবনে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রতিযোগিতায় বিজয়ীদের পুরস্কার ও সার্টিফিকেট প্রদান করা হয়। পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন দেশের বরেণ্য গবেষক ও পরমাণু বিজ্ঞানী ড. এম শমশের আলী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিক্ষাবিদ, বাংলাদেশ গণিত অলিম্পিয়াডের স্বপ্নদ্রষ্টা ও কম্পিউটার বিজ্ঞানী ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ  এবং অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক মাদাম নাহার আল বোখারী।

বয়সভিত্তিক পাঁচটি ক্যাটাগরির মধ্যে কোয়ান্টাম কসমো স্কুল ও কলেজের শিক্ষার্থী হাস্তরাম ত্রিপুরা পেয়েছে চিত্রাঙ্কন বিভাগে পুরস্কার। বান্দরবানের লামা থানার টংগঝিড়ি পাড়ায় তার জন্ম। মাতৃহারা এই শিশুটি তার বাবার হাত ধরে প্রথমে এ স্কুলে আসে ২০০৭ সালে। ভর্তি হয় সূচনা শ্রেণিতে। এখন সে দ্বাদশ শ্রেণির মানবিক বিভাগে পড়ছে। পড়াশোনার পাশাপাশি শান্ত ও বিনয়ী হাস্তরামের ছবি আঁকার প্রতি আগ্রহ সেই ছোট থেকেই। তার এই মেধাকে বিকশিত করার জন্যে তার শিক্ষকেরা সবসময়ই আলাদা খেয়াল রেখেছেন তার প্রতি। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে হাস্তরামকে জিজ্ঞেস করলে সে বলে, চিত্র ও ভাস্কর্য শিল্প নিয়ে উচ্চতর পড়াশোনা করে নিজ সম্প্রদায়ের নাম আরো উজ্জ্বল করতে চাই।

এছাড়া বাকি ৬ জনই পুরস্কার পেয়েছে ‘মেডিটেশন বিষয়ক ১০টি বাক্য লিখন’ ক্যাটাগরিতে। তাদের মধ্যে বিজয় রাখাইন। সে ২০১০ সালে সূচনা শ্রেণিতে এই স্কুলে ভর্তি হয়। কক্সবাজার থেকে আসা চার বছরের এই শিশুটি তখন ঠিক মতো বাংলা ভাষাই বুঝত না। ধীরে ধীরে সে এখানে বড় হতে থাকে, নিজ ভাষার পাশাপাশি বাংলা ভাষা ও লেখাপড়া সবই আয়ত্ত করতে থাকে সুচারুভাবে। এখন সে দশম শ্রেণিতে বাণিজ্য বিভাগে পড়ছে। বই পড়ায় রয়েছে তার খুব আগ্রহ। লেখালেখিও পছন্দ করে সে।

একাদশ শ্রেণির মিজানুর রহমান। তারও বাংলা ভাষার প্রতি রয়েছে আলাদা আগ্রহ। সে এই স্কুলে সাত বছর ধরে কৃতিত্বের সাথে পড়াশোনা করছে। তার অভিজ্ঞতার কথা জিজ্ঞেস করলে সে বলে, ছোটবেলায় কোয়ান্টাম কসমো স্কুল যদি পাশে এসে না দাঁড়াত তাহলে এতদূর আসতে পারতাম না। বড় হয়ে আমি একজন অধ্যাপক হতে চাই, এটা স্বপ্নই থেকে যেত।

এরপর কক্সবাজারের আব্দুল মোমেন ও রাঙামাটির হ্লানুমং মার্মা। পাঁচ বছর আগে তারা এই স্কুলে ভর্তি হয়। দুজনই এখন দ্বাদশের শিক্ষার্থী। বিজ্ঞান বিভাগের মোমেন স্বপ্ন দেখে একজন চিকিৎসাবিজ্ঞানী হবে। আর মানবিক বিভাগের হ্লানুমং স্বপ্ন দেখছে একজন আইনজীবী হওয়ার। তাদের দুজনেরই মতে, তারা সময়মতো এই স্কুলে ভর্তি না হলে পারিবারিক ও আর্থিক বিভিন্ন সমস্যার কারণে হয়তো লেখাপড়া করাটা খুব কঠিন হয়ে যেত। জীবনের জন্যে বড় লক্ষ্য আর ঠিক করতে পারত না। 

দ্বাদশ শ্রেণির বিজ্ঞান বিভাগের আরেক ছাত্র নিজাম উদ্দিন। সে এখানে কলেজে ভর্তি হয়। কুমিল্লা থেকে আসা মেধাবী এই কিশোরটির বাবা মারা যায় তার জন্মের পরের বছর। দুই ছেলেকে খুব কষ্ট করে তার মা বড় করছিল। নিজাম কোয়ান্টাম কসমো কলেজে ভর্তি হওয়ার পর তার মায়ের দুশ্চিন্তা অনেকটাই লাঘব হয়েছে। সে-ও স্বপ্ন দেখে একজন ডাক্তার হওয়ার।

এসএসসি পরীক্ষার্থী আশাচন্দ্র ত্রিপুরাও পেয়েছে পুরস্কার। সে এখানে কারিগরি নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। একাডেমিক লেখাপড়ার পাশাপাশি তারও রয়েছে ভাষা ও লেখালেখির প্রতি বিশেষ আগ্রহ। সে কোয়ান্টাম কসমো স্কুলকে ধন্যবাদ জানায়, কারণ সে যদি এখানে ভর্তি না হতো তাহলে অষ্টম শ্রেণির পর আর পড়াশোনাটাই হতো না। কোথাও কাজে লেগে যেত।

সুবিধাবঞ্চিত এই সাতটি শিক্ষার্থীই প্রমাণ করে যে, লেখাপড়া, খেলাধুলা ও মনন বিকাশের সুযোগ পেলে যে-কেউই এগিয়ে যেতে পারে নিজ নিজ লক্ষ্যপানে।

উল্লেখ্য, গত ২১ মে দেশে প্রথমবারের মতো পালিত হয় বিশ্ব মেডিটেশন দিবস। এই উপলক্ষে কোয়ান্টাম ফাউন্ডেশনের উদ্যোগে  কিশোর-তরুণদের মাঝে ধ্যান, ইতিবাচকতা ও মানবিকতা বিকাশের লক্ষ্যে মাসব্যাপী আয়োজিত হয় বাক্য লিখন, প্রবন্ধ-রচনা, চিত্রাঙ্কন, আলোকচিত্র, অডিও-ভিডিও প্রতিযোগিতা।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি