ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

মৌলভীবাজারে দেড় সহস্রাধিক পরিবারের নিজের বাড়িতে প্রথম ঈদ 

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি 

প্রকাশিত : ১৭:৩১, ২২ জুলাই ২০২১

মৌলভীবাজারে স্বপ্নের বাড়িতে প্রথম ঈদ। আগে যেখানে মানুষের বাড়ি বাড়ি গিয়ে কুরবানীর মাংস চেয়ে আনতেন এবার বঙ্গবন্ধুর নামে তারাই সম্মিলিত কুরবানী দিয়ে মাংস ভাগাভাগী করে নিয়েছেন। নিজের ঘরে প্রথম ঈদ। আহ্ কি আনন্দ। কথা হয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া উপহারে ঠিকানা পাওয়া শ্রীমঙ্গল মোহাজেরাবাদ আশ্রায়নের বীরঙ্গনা মায়া খাতুনের সাথে। 

চোখে আনন্দ অশ্রু নিয়ে বীরঙ্গনা মায়া খাতুন বলেন, থাকতেন অন্যের বাড়িতে। ভাঙ্গাঘর চালের টিনে চুই চুই পানি পড়তো। ঘরের ভেড়া খসে পড়তো। ঈদ করতেন কখনও অন্যের বাড়িতে কখণও ভাসমান অবস্থায়। মাংস আনতেন মানুষের বাড়ি থেকে হাত পেতেপেতে। এবার মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে উপহার পাওয়া নিজের বাড়িতেই করলেন ঈদ।নিজের ঘরের সামনেই হয়েছে সম্মিলিত কুরবানী। তার ভাগেও পড়েছে বেশ মাংস। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে সিন্দুরখান থেকে বেশ বেশ কয়েকজন স্বজন আসবেন ঈদের দাওয়াত খেতে। এ যেন এক অন্যরকম অনুভুতি। এ অনুভুতি শুধু মায়াখাতুনের নয়, নতুন ঘর পাওয়া হৃদয় মিয়া, সুফিয়া বেগম, হালিমা বেগম, হাসনা বেগম, রুনা বেগমসহ জেলার দেড় সহস্রাধিক পরিবারের। 

শুধু বয়স্করা নয় আশ্রায়ন প্রকল্পের শিশুদের মধ্যেও আনন্দের শেষ ছিলো না। নতুন জামা পড়ে তারা এক ঘর থেকে আরেক ঘরে দাওয়াত খেয়েছে।অনেকে বেলুন দিয়ে খেলেছে। কেউ খেলেছে ফুলগুটি। সংসারে শত অভাব অনটন থাকলে কারো চোখেমূখে ছিলো না বিষাদের কোন ফুলকি।মানুষগুলোর আনন্দ দেখে মনে হয়েছিলো এইতো ঈদ।

আশ্রায়নের অপর বাসিন্দা হৃদয় মিয়া জানান, শুধু নিজের ঘর নয়। মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের কাছ থেকে উপহার পেয়ে তারা এবার বড় একটি গরু বঙ্গবন্ধুর নামে কুরবানী দিয়েছেন। মোহাজেরাবাদ ও বেগুনবাড়ি দুটি আশ্রায়নে প্রত্যেকেই সমান ভাবে মাংস ভাগাভাগি করে নিয়েছেন। 

মোহাজেরাবাদের ওই আশ্রায়নে একমাত্র হিন্দু ছিলেন বীরাঙ্গনা শিলা গুহ । ঈদ আনন্দে সামিল হয়েছেন তিনিও। শিলা গুহ  জানান, জেলা প্রশাসক মুসলিমদের জন্য কোরবানীর গরু দিয়েছেন। আর শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তাকে দুটি মুরগী দিয়েছেন।সকালে আশ্রায়নের ঘরে ঘরে চা সেমাই এর দাওয়াত খেয়েছেন। ঈদে এতো আনন্দ হয় এই প্রথম তিনি অনুভব করলেন।
এই ঈদের আনন্দযজ্ঞে সামিল হতে দুপুরে সেখানে যোগদেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম। বেশ কিছু সময় তিনি সেখানে কাটান। কারো ঘরে সেমাই, কারো ঘরে চা আর কারো ঘরে ডিম মামলেট খান।

শ্রীমঙ্গল উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, ঠিকানাহীন মানুষেরা তাদের নিজের ঠিকানায় প্রথম ঈদ করছে।তাদের ঈদ আনন্দ উপভোগ করতে তিনি ছুঠে আসেন এখানে।সরল এই মানুষগুলোর সাথে তিনি ঈদ করেছেন। কিছু সময়ের জন্য তিনি যেন সব ভুলে গিয়েছিলেন। মনে হচ্ছিল যেন তিনি ওই পরিবারগুলোরই সদস্য।প্রধানমন্ত্রী এই ঠিকানাহীন মানুষের জন্য বিশাল উদ্যোগ নিয়েছেন। ঠিকানাহীন মানুষদের ঠিকানা করে দেয়ার যে স্বপ্ন প্রধানমন্ত্রীর সেই স্বপ্ন বাস্তবায়নের পথে।যা সম্পন্ন হলে বাংলাদেশে কেউই আর ভাসমান থাকবেন না। সরল এই মানুষগুলো আজ মনভরে প্রধানমন্ত্রীর জন্য দোয়া করেছে। 

আর মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান জানালেন, অন্য যে কোন জায়গার চেয়ে মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের প্রকল্পগুলো স্বতন্ত্র। যার যোগাযোগ থেকে জীবিকায়ন সকল সুবিধা বিরাজমান। এখানে আশ্রয় হয়েছে মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবহন করা বীর মাতাদেরও। পরিবারসহ তিনি নিজেও করোনা আক্রান্ত। তাই নিজে বের হতে পারেননি। না হলে ঈদের দিনে বিভিন্ন আশ্রায়ন ঘুরে বেড়াতেন। তিনি জানান, মোহাজেরাবাদে তিনি কুরবানীর জন্য একটি গরু দিয়েছেন। যেটি বঙ্গবন্ধুর নামে উৎসর্গ করে আশ্রায়নবাসী কোরবানী দিয়েছেন।তারা যে ঈদে আনন্দ করছেন তিনি ঘরে বসেই খবর নিয়েছেন। শুনে তাঁর খুব ভালো লেগেছে।   

নিরাশ্রয় এ মানুষগুলো আশ্রয় পেয়ে এবারের ঈদে প্রধানমন্ত্রীর জন্য আল্লাহর কাছে দু হাত তুলে প্রাথর্না করেছেন তিনি যেন ভালো থাকেন।

আরকে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি