ঢাকা, বুধবার   ১৫ মে ২০২৪

খানজাহান আলীর বসতভিটায় মিলল সাড়ে ৬‘শ বছরের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন

এইচ এম মইনুল ইসলাম, বাগেরহাট

প্রকাশিত : ১৬:৫১, ১১ জানুয়ারি ২০২২ | আপডেট: ১৬:৫৩, ১১ জানুয়ারি ২০২২

ইউনেস্কো ঘোষিত বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত স্থাপনা বিখ্যাত মুসলিম শাসক খানজাহান আলী (রহ) এর বসত ভিটা খনন শুরু করেছে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর। খননের মাধ্যমে ভূমির স্তর বিন্যাস, স্থাপত্য শৈলি ও কালানুক্রমিক সময় বের করার চেষ্টা করা হবে। মাটির নিচে পাওয়া বিভিন্ন প্রত্মবস্তু পরীক্ষা-নিরিক্ষা শেষে রেজিষ্ট্রেশন করে বিভিন্ন যাদুঘরে রাখা হবে। এই গবেষণার ফলাফল খানজাহান আমলের বিভিন্ন স্থাপনার প্রত্মতাত্তিক গুরুত্ব বৃদ্ধি করবে বলে জানিয়েছেন প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ।

গত ৩১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া খনন কাজে ইতোমধ্যে মাটির নিচে ইটের দেওয়াল, সিমেন্ট ও বালুর তৈরি মেঝে, সুলতানি আমলে ব্যবহৃত মাটির তৈরি পানির পাত্র, মাটির ঢাকনাসহ নানা তৈজসপত্র ও প্রত্মবস্তু পাওয়া গেছে। এসব প্রত্মবস্তু দেখতে প্রতিদিন স্থানীয় বিভিন্ন বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও দর্শনার্থীরা আসছে এই বসতভিটায়। সাড়ে ৬‘শ বছর আগের প্রত্মবস্তু দেখে খুশি তারা।

প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জাতিসংঘের শিক্ষা, বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি বিষয়ক সংস্থা ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে খানজাহান আলী (রহ) এর নির্মিত ষাটগম্বুজ মসজিদসহ ১৭টি স্থাপনাকে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত করা হয়। এর মধ্যে বাগেরহাট সদর উপজেলার সুন্দরঘোনা এলাকায় অবস্থিত খানজাহান আলী (রহ) এর বসতভিটা অন্যতম। বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকাভুক্ত হওয়ার পরেও দীর্ঘদিন ধরে খানজাহানের এই বসতভিটা অবহেলিত ছিল। স্থানীয়দের গো চারণ ভূমিতে পরিণত হয়েছিল বসতভিটার ডিবিগুলো। ২০০০ সালের পরে প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর এই বসতভিটাকে প্রত্মতাত্ত্বিক গুরুত্ব নির্ণয়ের জন্য কয়েক দফায় খনন করে। টিন সেডের একটি সাইড অফিসও তৈরি করে তারা। এর ধারাবাহিকতায় প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর খুলনার আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতার নেতৃত্বে আবারও খনন কাজ শুরু হয়েছে। বিভিন্ন গ্রেডের সাতজন কর্মকর্তা ও অনিয়মিত ১৪ জন শ্রমিক এই খনন কাজ ও গবেষণায় অংশগ্রহন করছেন। 

বাগেরহাট সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ৯ম শ্রেণির শিক্ষার্থী তিথি বলেন, স্কুলে এসে শুনলাম খানজাহান আলী (রহ) এর বসতভিটা খনন হচ্ছে। পুরোনো আমলের অনেককিছু পাওয়া গেছে। এখানে এসে দেখলাম। খুব ভাল লাগল সাড়ে ৬‘শ বছরের পুরাতন ইটের দেওয়াল ও মাটির তৈরি তৈজসপত্র দেখে। বন্ধুদের সাথে এখানে খনন কাজ দেখতে এসেছি। যারা খনন করছেন, তারা আমাদের বিভিন্ন প্রত্মবস্তু দেখিয়ে ইতিহাস বললেন। কিভাবে এগুলো মাটির নিচে এসেছে তা জেনে আমাদের খুবই ভাল লেগেছে।

চাকরির সুবাদে নওগা থেকে বাগেরহাটে আসা পার্টেক্স ফর্নিচারের আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মো. শফিকুর রহমান বলেন, প্রত্মতত্ত্বের উপর আমার আগে থেকেই আগ্রহ রয়েছে। এখানে খনন কাজ হচ্ছে শুনে স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে আসলাম। এখানে মাটির নিচের দেওয়াল ও মেঝে দেখে বুঝলাম সাড়ে ৬‘শ বছরের আগেও আমাদের পূর্ব পুরুষদের ইতিহাস সমৃদ্ধ ছিল।এটা নিজ চোখে দেখে খুবই ভাল লাগল। আমাদের ইতিহাস যে কত সম্মৃদ্ধ ছিল তা খানজাহান আমলে নির্মিত স্থাপনা দেখে বোঝা যায়।

প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর, খুলনা আঞ্চলিক কার্যালয়ের ফিল্ড অফিসার আল আমিন বলেন, আঞ্চলিক পরিচালক আফরোজা খান মিতার নেতৃত্বে আমরা বিভিন্ন গ্রেডের সাতজন কর্মকর্তা এই গবেষণা কাজ করছি। এর সাথে খননের জন্য ১৪ জন অনিয়মিত শ্রমিক সকাল সাড়ে ৬টা থেকে দুপুর আড়াইটা পর্যন্ত কাজ করছে। একটু এদিক-ওদিক বা উল্টোপাল্টা হলে অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রত্মবস্তু নষ্ট হয়ে যেতে পারে। ৩১ ডিসেম্বর শুরু হওয়া আমাদের এই খনন কাজ ৩১ জানুয়ারি শেষ হবে। এরপরেও এই বসতভিটা নিয়ে আমাদের গবেষণা চলমান থাকবে।

প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তর, বাগেরহাটের কাস্টোডিয়ান মো. যায়েদ বলেন, আমাদের খনন কাজের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে ভূমির স্তর বিন্যাস, স্থাপত্য শৈলি ও কালানুক্রমিক সময় বের করা। খননের মাধ্যমে পাওয়া স্থাপনা, ইট ও তৈজসপত্রসহ নানা তথ্য উপাত্ত নিয়ে আমরা গবেষনা করব। এছাড়া খননের মাধ্যমে পাওয়া গুরুত্বপূর্ণ প্রত্মবস্তুর পরীক্ষা নিরিক্ষা শেষে রেজিষ্ট্রেশন করা হবে। প্রত্মতত্ত্ব অধিদপ্তরের নির্দেষে এসব প্রত্মবস্তু যাদুঘরে সংরক্ষণ করা হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
কেআই//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি