ঢাকা, শুক্রবার   ২৬ এপ্রিল ২০২৪

কোরবানীর হাট কাঁপাতে আসছে বস, ভোলা ও ধলা বাহাদুর

নাটোর প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:১১, ১৯ জুন ২০২২

‘ভোলা’

‘ভোলা’

আসন্ন কোরবানীর হাট কাঁপাতে আসছে নাটোরের তিন গরু বস, ভোলা ও ধলা বাহাদুর। বড়াইগ্রাম, গুরুদাসপুর ও সদর উপজেলার প্রান্তিক পর্যায়ের তিন খামারি গত কয়েক বছর ধরে ফ্রিজিয়ান জাতের এ গরু লালন পালন করছেন। খামারিদের প্রত্যাশা গরু তিনটির ন্যায্যমূল্য পাবেন তারা।

ফ্রিজিয়ান জাতের এই গরু তিনটির একটির নাম বস। দেখতে কুচকুচে কালো রংয়ের। ধবধবে সাদা রংয়ের গরুর নাম ভোলা এবং সাদা-কালো বর্ণের অপর গরুর নাম ধলা বাহাদুর। এদের মধ্যে বসের ওজন ৩৬ মণ এবং ভোলা ও ধলা বাহাদুরের ওজন ৩০ মণ করে।

এদের মধ্যে বস ও ভোলার মেজাজ বেজায় গরম। তাদেরকে সামলানো বেজায় মুশকিল। কাউকে দেখলেই তেড়ে যায়। অপরদিকে উল্টো আচরণের ধলা বাহাদুর।

বড়াইগ্রামের ভান্ডারদহ গ্রামের শফিকুল ইসলাম তিন বছর ধরে লালন-পালন করেছেন বসকে। কুচকুচে কালো রং হওয়ায় আদর করে তার নাম রেখেছেন বস।  

খামারি শফিকুল জানান, বসকে তিনি নিজের সন্তানের মত করে লালন পালন করেছেন। দেশীয় খাবার ব্যতিত রাসায়নিক কোন খাবার খাওয়াননি। প্রতিদিন খেসারি, ছোলা ও গম খাইয়েছেন। এবারের কোরবানী ঈদে বসকে বিক্রির জন্য হাটে তুলবেন তিনি।

ইতিমধ্যে অনলাইনে প্লাটফরমে বসের ছবি ছড়িয়ে দিয়েছেন। তবে এখনও দাম হাঁকানো হয়নি বসের। অনেকেই বসকে দেখতে শফিকুলের খামারে ভিড় করছেন। 

এর নাম ‘বস’

নাটোরের গুরুদাসপুর উপজেলার নাজিরপুর ইউনিয়নের চন্দ্রপুর ঠাকুরপাড়া গ্রামের হাফিজুল রহমান সংসারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে আনতে গরু পালন শুরু করেন। গত চার বছর ধরে ভোলাকে লালন পালন করে আসছেন তিনি। 

হাফিজুল রহমান বলেন, গরু পালনের সিদ্ধান্ত নেওয়ার পর চার বছর আগে ভোলাকে হাট থেকে কিনে লালন-পালন শুরু করেন। শখের বসে তার নাম রেখেছেন ভোলা। ভোলা দেখতে হাতির মতো। লোকজনকে দেখলেই গর্জন করে তেড়ে আসে। ভয়ে তার কাছে যেতে চায় না কেউ। 

তিনি আরও বলেন, আসছে কোরবানীর ঈদে ভোলাকে ভালো টাকায় বিক্রির প্রত্যাশা নিয়ে নিয়মিত পরিচর্যা করছেন। ফিডসহ কোন ধরনের রাসায়নিক খাবার খাওয়াননি ভোলাকে। দেশীয় খাবার খাইয়েই বড় ও মোটা তাজা করে তুলেছেন। গত ঈদে ঢাকার একটি কোরবানীর হাটে ভোলাকে তুলেছিলেন। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী দাম না পাওয়ায় বাড়িতে ফিরিয়ে আনেন।

হাফিজুলের আশা, এ বছর ১২ লাখ টাকায় গরুটি বিক্রি হবে।

এদিকে, আকারে বসের কাছাকাছি এবং ভোলার সমপরিমাণ হলেও এই দুই গরুর চেয়ে মেজাজ একেবারেই উল্টো ধলা বাহাদুরের। শান্ত স্বভাবের গরুটি লালন পালন করছেন নাটোর সদর উপজেলার খোলাবাড়িয়া গ্রামের নাজমুল হক। 

বিশাল আকৃতির ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়ের রং সাদা-কালো বর্ণের হওয়ায় আদর করে তার নাম রাখা হয়েছে ধলা বাহাদুর। সাড়ে তিন বছর আগে নাজমুল হকের নিজের খামারে জন্ম নেওয়া ষাঁড়টিকে আসছে কোরবানীর ঈদের জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। সন্তানের মতো পরম যত্নে ধলা বাহাদুরকে লালন পালন করছেন নাজমুল হক। 

সঠিক পরিচর্যা আর নিজ জমিতে চাষ করা নেপিয়ার ঘাস, খড়, খইল, ভুষি খাওয়ানো হয় ধলা বাহাদুরকে। কোরবানির জন্য প্রস্তুত ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টির দাম হাঁকা হচ্ছে ১৬ লাখ টাকা। আশপাশের লোকজন ষাঁড়টিতে দেখতে প্রতিদিনই ভিড় করছেন নাজমুল হকের বাড়িতে।

প্রতিবেশী জাকির হোসেন ও বায়োজিদ হোসেন জানান, নাজমুলের খামারের বিশাল আকারের এই ষাঁড়টি দেশীয় খাবার খাইয়ে বড় করে তোলা হয়েছে। ফিডসহ কোন ধরনের খাবার খাওয়ানো হয়নি। প্রতিদিন তারা একবার করে হলেও এই ষাঁড়টিকে দেখতে নাজমুলের খামারে যান। 

‘ধলা বাহাদুর’

নাজমুল হক বলেন, নিজ খামারে সাড়ে তিন বছর আগে জন্ম নেয়া ফ্রিজিয়ান জাতের এই ষাঁড়টির আদর করে নাম রাখেন ধলা বাহাদুর। সন্তানের মতো করে পরম যত্নে লালন পালন করেছেন। নিজে না থাকলে ধলা বাহাদুরকে পরিচর্যাসহ দেখভাল করেন তার স্ত্রী মনিরা খাতুর ও ১০ বছর বয়সী মেয়ে নিঝুম। তারা ধলা বাহাদুরকে আকর্ষণীয় করতে মেহেদী পড়িয়ে সাজিয়ে রাখেন। 

এখন পর্যন্ত কেউ দাম করেননি। ধলা বাহাদুরকে হাটে নিয়ে যাওয়া কঠিন হয়ে পড়ার আশংকা তার। তাই তিনি নিজের খামারে রেখেই বিক্রি করতে চান। প্রাণি সম্পদ কর্মকর্তার সহায়তায় অনলাইনে ষাঁড়টির প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। প্রত্যাশিত দাম পেলেই বিক্রি করে দেবেন ধলা বাহাদুরকে।

নাটোর প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা গোলাম মোস্তফা বলেন, আসন্ন কোরবানী ঈদকে ঘিরে নাটোর জেলায় ৩ লাখ ৪০ হাজার গবাদিপশু প্রস্তুত রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে ১ লাখ ১৫ হাজার গবাদিপশু উদ্বৃত্ত থাকবে। প্রাকৃতিক উপায়ে নাজমুল একটি ফ্রিজিয়ান জাতের ষাঁড় মোটাতাজা করেছেন। এতো বড় গরু নাটোরে বিক্রি করতে অসুবিধা থাকায় অনলাইনের পাশাপাশি ঢাকায় বিক্রির প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি