ঢাকা, শনিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৪

পদ্মা সেতুর সুবাতাস সুন্দরবনে

আবুল হাসান, মোংলা থেকে

প্রকাশিত : ১২:৩২, ২৭ জুন ২০২২ | আপডেট: ১২:৩৪, ২৭ জুন ২০২২

নতুন সূর্য, নতুন সকাল। সঙ্গে দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণের উচ্ছ্বাস। চালু হয়েছে স্বপ্নের পদ্মা সেতু। এরই মধ্যে এই সেতুর সুবাতাস বইতে শুরু করেছে বিশ্বের ঐতিহ্য ম্যানগ্রোভ বন সুন্দরবন কেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পে।

ভৌগলিকভাবে সুন্দরবনের কোলে অবস্থান বাগেরহাটের মোংলা উপজেলা থেকেই সড়ক পথে সুন্দরবন দেখা যায়। তাই স্বল্প খরচে সুন্দরবনকে প্রতিনিয়ত নতুন নতুন রূপে দেখার সুযোগ রয়েছে মোংলায়।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় এখন সড়কপথে দেশের যেকোন প্রান্ত থেকে মোংলা হয়ে সরাসরি যাওয়া যাবে সুন্দরবনে। যে সুযোগ আর কোথাও পাওয়া যাবেনা। এটি ভ্রমণ পিপাসু পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় সুযোগ। এতে ভ্রমণ মৌসুমে সুন্দরবনে পর্যটকদের সংখ্যা বাড়বে। সমৃদ্ধ হবে সুন্দরবন বিভাগের অর্থনীতি।

সুন্দরবনের বিভাগীয় বনকর্মকর্তা (ডিএফও) মুহাম্মদ বেলায়েত হোসেন বলেন, “২০২১-২২ অর্থ বছরে সুন্দরবনে পর্যটক এসেছে এক লাখ ২০ হাজার। এখান থেকে সুন্দরবন বিভাগের রাজস্ব আয় হয়েছে এক কোটি ২৫ লাখ টাকা। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় সুন্দরবনে ব্যাপক পরিবর্তন আসবে। পর্যটকদের সংখ্যা যেমন বাড়বে তেমনি রাজস্বও বাড়বে।” 

তিনি আরও জানান, ইতোমধ্যে পর্যটকদের চাপ সামলাতে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের করমজল, হারবাড়িয়া, কটকা, কচিখালী ও দুবলা এবং পশ্চিম বিভাগের হিরন পয়েন্ট ও কলাগাছিয়া এই সাতটি ইকোট্যুরিজমের সঙ্গে নতুন আরও চারটি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র যোগ করা হচ্ছে। 

সুন্দরবন ইকো ট্যুরিজম প্রকল্পের আওতায় ২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে পূর্ব সুন্দরবনের চাঁদপাই রেঞ্জের আন্ধারমানিক, শরণখোলা রেঞ্জের আলী বান্দা এবং পশ্চিম বিভাগের সাতক্ষীরা রেঞ্জের শেখের টেক ও কালাবগিতে নতুন এই ট্যুরিজমগুলো নির্মাণ করা হবে বলেও জানান তিনি। 

এসব ইকো ট্যুরিজমে পর্যটকদের সুবিধার জন্য গোলঘর, ফুটট্রেলার, পাবলিক শৌচাগার, ওয়াচ টাওয়ার ও রাস্তা করা হবে।

বেলায়েত হোসেন বলেন, “দীর্ঘদিন সুন্দরবন কেন্দ্রিক যে ইকো ট্যুরিজমে পর্যটকরা আসতো, তারা সব সময় যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত না থাকার কারণে এখানে আসার অনীহা প্রকাশ করতো। কিন্তু এখন পদ্মা সেতু চালু হয়েছে তাই অতিরিক্ত পর্যটকদের ঢল নামবে সুন্দরবনে।”

পর্যটকদের চাপ সামলাতে নতুন চারটিসহ মোট ১১টি ইকো ট্যুরিজম কেন্দ্র থেকে সেবা দেওয়া যাবে বলেও জানান তিনি।

সেভ দ্য সুন্দরবন ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় উচ্ছ্বসিত সুন্দরবন সংলগ্ন স্থানীয়রাও। বনকেন্দ্রিক পর্যটন শিল্পের সঙ্গে তাদের অনেকেই জড়িত। পদ্মা সেতুর দ্বার উন্মোচনের পাশাপাশি সুন্দরবনের বিভিন্ন পয়েন্টে অবকাঠামো ও যাতায়াত ব্যবস্থার উন্নতি হলে দর্শনার্থীরাও আনন্দ পাবেন।”

পূর্ব সুন্দরবনের করমজল বণ্যপ্রাণী প্রজনন কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাওলাদার আজাদ কবির বলেন, ৬ হাজার ১৭ বর্গকিলোমিটার এই বনে বাঘ, হরিণ, বানরসহ ৩১৫ প্রজাতির বণ্যপ্রাণী এবং সুন্দরী, বাইন, গরানসহ ৩৩৪ প্রজাতির উদ্ভিদ রয়েছে। মূলত এসব দেখতেই প্রতিবছর দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে ভ্রমন পিপাসুরা ছুটে আসেন। 

যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় মাঝে মাঝে পর্যটকদের ভাটা পড়ত। এখন সেতু চালু হওয়ায় পর্যটক বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সুন্দরবনের এ খাত থেকে রাজস্ব আয় হবে চার থেকে পাঁচ গুণ বলে জানান ওসি আজাদ কবির।

আরএমএ/এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি