ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪

খেলার মাঠ রক্ষা করতে গিয়ে কারাগারে মা, কান্না থামছে না ছোট্ট শিশুর

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৯:০২, ২৫ আগস্ট ২০২২ | আপডেট: ০৯:০৬, ২৫ আগস্ট ২০২২

নানির কোলে কাঁদছে শিশু মরিয়ম

নানির কোলে কাঁদছে শিশু মরিয়ম

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে বলদীপাড়া-হলদীঘর গ্রামের অযুফা খাতুন খেলার মাঠ রক্ষা করতে আন্দোলনে গিয়ে এখন কারাগারে। ৩ ছেলে ও ৩ বছরের এক শিশু কন্যার জননী তিনি। অযুফা খাতুন কারাগারে যাবার পর থেকেই কান্না থামছে না শিশু মরিয়মের। শিশুটির নানিও তার কান্না থামাতে পারছেন না।

দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বলদিপাড়া-হলদিঘর মাঠে গত ২১ আগস্ট প্রকল্পের মাটি ভরাট করতে গেলে বিক্ষোভ করেন স্থানীয়রা। এ সময় তাদের ওপর হামলা করলে পঞ্চম শ্রেণির এক শিক্ষার্থীসহ আহত হন ছয়জন। পরে আত্মরক্ষায় গ্রামবাসীও ইট নিক্ষেপ করলে আহত হন সহকারী কমিশনার (ভূমি)।

এ ঘটনার পরেই উপজেলা ভূমি অফিসের প্রেসকার আব্দুল হাই পৌনে দুইশ’ জনকে আসামি করে শাহজাদপুর থানায় মামলা দায়ের করেন। মামলায় বেআইনিভাবে সরকারি কাজে বাধা, গাড়ি ভাঙচুর, পরিদর্শনরত এসিল্যান্ড লিয়াকত সালমানকে হত্যার উদ্দেশে মারধরসহ ১০টি অভিযোগের কথা উল্লেখ করা হয়।

সেই মামলায় পুলিশ ৯ জন নারী এবং দুইজন পুরুষকে আটক করে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে প্রেরণ করে। এই আটককৃত ৯ নারীর মধ্যে একজন অযুফা খাতুন।

কান্না জড়িত কন্ঠে অযুফা খাতুনের ছেলে মোহন জানান, “মা শুধু চেয়েছিলেন আমাদের চৌদ্দ পুরুষের স্মৃতিবিজড়িত খেলার মাঠ রক্ষা করতে। তিনি হাজার হাজার গ্রামবাসির সাথে প্রতিবাদ করে বলেছিলেন, খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প চাইনা। সেই চাওয়াই তার জন্য কাল হয়ে হলো। মা কারাগারে যাওয়ার পর ছোট্টো মরিয়মের কান্না কিছুতেই থামছে না।”

একই মামলায় স্থানীয় মুদি দোকানি আনছার আলীর স্ত্রী মালেকা খাতুন ৩ বছর বয়সী মেয়ে আফিয়াকে সাথে করেই গেছেন কারাগারে। এছাড়াও এই মামলায় কারাগারে রয়েছেন দরিদ্র ভ্যানচালক আল মাহমুদের স্ত্রী ঝর্ণা খাতুন, দিনমজুর আব্দুল মজিদের স্ত্রী সেলিনা বেগম, সাত বছর বয়সী এক প্রতিবন্দী সন্তানের জননী হোসনে আরা, বৃদ্ধ জামাল প্রামানিকের অসুস্থ স্ত্রী আকলিমা ও কৃষক আব্দুল আলীমের স্ত্রী শাফিয়া খাতুন।

গণহারে পুলিশের এই গ্রেফতার আতঙ্কে এখন নারী ও পুরুষ শূণ্য পুরো গ্রাম। 

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, যে গ্রামে হাজার হাজার মানুষের বসবাস সেই গ্রামবাসী গ্রেফতার আতঙ্কে সবাই বাড়িছাড়া। মানুষের হাসিখুশিতে ভরপুর গ্রামটি এখন জনশূন্য হয়ে খাখা করছে। এই সুযোগে বেড়েছে চোরের উপদ্রপ। প্রতি রাতেই বিভিন্ন বাড়ি থেকে চুরি হয়ে যাচ্ছে গরুছাগলসহ মালামাল।

লুকিয়ে থাকা বলদিপাড়া গ্রামের আতিকুল ইসলাম, শুকুর মাহমুদ, আল মাহমুদসহ একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা যায়, দুইশ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী বলদিপাড়া-হলদিঘর মাঠই শিশুদের একমাত্র ভরসা। এখানে ফুটবল অনুশীলন করে অনেকের জেলা ও জাতীয় পর্যায়ে পর্যন্ত খেলার সুযোগ হয়েছে। সেই মাঠেই আশ্রয়ণ প্রকল্প করতে চায় উপজেলা প্রশাসন। এ নিয়ে দীর্ঘদিন আন্দোলন করছেন এলাকাবাসী।

এ ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে এবং শাহজাদপুর উপজেলার ১ নম্বর কায়েমপুর ইউনিয়নের বলদীপাড়া-হলদীঘর গ্রামের শতবর্ষী ঐতিহ্যবাহী খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করার অনুরোধ জানিয়ে ২১ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে বিবৃতি দেওয়া হয়েছে। বিবৃতি দেওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী, মানবাধিকার কর্মী ও বাপার সভাপতি সুলতানা কামাল ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান।

বিবৃতিতে তারা খেলার মাঠে আশ্রয়ণ প্রকল্প না করার অনুরোধের পাশাপাশি ২১ আগস্ট প্রশাসনের উপস্থিতিতে সহিংসতা, আহত হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া, স্থানীয় এলাকাবাসীর বিরুদ্ধে দায়ের করা হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃত নারীদের অবিলম্বে নিঃশর্ত মুক্তির দাবি জানান।

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও শাহজাদপুর থানার ওসি (অপারেশন ও কমিউনিটি পুলিশিং) আব্দুল মজিদ জানান, “এখন পর্যন্ত ৯ জন নারীসহ মোট ১১ জনকে আটক করা হয়েছে। নতুন করে আর কেউ আটক হয়নি।”

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি