ঢাকা, রবিবার   ১৯ মে ২০২৪

তীব্র লোডশেডিংয়ে গরু নিয়ে শঙ্কায় খামারিরা 

ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৫:৪৭, ১২ জুন ২০২৩

কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বিভিন্ন খামারে খামারে চলছে প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণের কাজ। তবে তীব্র তাপদাহ ও লোডশেডিংয়ে উৎপাদিত পশু নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে খামারিদের। 

খামারিরা জানান, পশু খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির পাশাপাশি চলমান তাপদাহে পশুর স্ট্রোক রোধসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা এড়াতে বাড়তি পরিচর্যা নিতে হচ্ছে। ফলে বেড়েছে উৎপাদন খরচ। 

এদিকে প্রাণী সম্পদ বিভাগ জানিয়েছে, তীব্র তাপদাহে পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় খামারিদের করণীয়সহ প্রাকৃতিক উপায়ে পশু মোটাতাজাকরণ নিশ্চিতে সচেতন করা হচ্ছে। 

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ৯ উপজেলার ১৫ হাজার খামারে চলছে পশু মোটাতাজাকরণের কাজ। এসব খামারে দেশীয় গরু, মহিষ, ছাগলের পাশাপাশি কোরবানিযোগ্য ১ লাখ ২১ হাজার বিভিন্ন প্রজাতির পশু প্রস্তুত করা হয়েছে। প্রতিদিন এসব পশুকে ঘাস, খড়, খইল, ভূষি, সাইলেসসহ প্রাকৃতিক উপায়ে মোটাতাজা করা হচ্ছে। 

খামারিরা জানিয়েছেন, খামারে ৬০ হাজার থেকে ১০ লাখ টাক মূল্যের গরু রয়েছে। তবে চলমান তীব্র তাপদাহ ও ঘন ঘন লোডশেডিং হওয়ায় পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তারা। তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে দিনের বেশিরভাগ সময় জেনারেটরের উপর নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। সেইসঙ্গে পশু খাদ্যের মূল্য বেড়ে যাওয়ার তাদের উৎপাদন খরচ অন্যান্য বছরের তুলনায় দ্বিগুণ বেড়েছে। এছাড়াও সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরুর অনুপ্রবেশের চিন্তাও ভাবিয়ে তুলছে তাদের। 

তারা জানান, বাড়তি খরচে পশু লালন করার পর সীমান্ত দিয়ে ভারতের গরুর অবৈধ চালান এলে খামিরদের পথে বসতে হবে। 

নিউ প্রিন্স ডেইরী ফার্মের ম্যানেজার জসীম উদ্দিন জানান, প্রতিবছরই কোরবানীর ঈদকে সামনে রেখে খামারে গরু, মহিষসহ বিভিন্ন কোরবানিযোগ্য পশু লালন-পালন করা হয়ে থাকে। তবে এ বছরের চিত্র একেবারেই ভিন্ন। একদিকে মারত্মক গরম আর অন্যদিকে দিনের বেশিরভাগ সময়ই বিদ্যুৎ থাকেনা। এতে পশুর শরীরের তাপমাত্র নিয়ন্ত্রণে ও স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জেনারেটরের নির্ভরশীল থাকতে হচ্ছে। এছাড়াও পশুগুলোকে দিনে ৬-৭ বার গোসল করাতে হচ্ছে। পাশাপাশি পশু খাদ্যের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎপাদন খরচ বেড়েছে অন্তত দ্বিগুণ। এ অবস্থায় পশুর শারীরিক সুস্থতার বিষয়টি দুশ্চিন্তার বিষয়ে হয়ে দাঁড়িয়েছে।

রুপচাঁন বিবি ডেইরী খামারের ম্যানেজার রফিকুল ইসলাম জানান, ঈদকে সামনে রেখে গত ৬ মাস ধরে দেশীয় জাতের গরু ও মহিষ পালন করছি। অত্যাধিক গরমরে কারণে পশু কখন স্ট্রোক করে ফেলে তা নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়। ঘন ঘন লোডশেডিং থাকায় প্রতিদিন জেনারেটর দিয়ে বিকল্প বিদ্যুাতের ব্যবস্থা করে তাপমাত্রা ঠিক রাখতে হচ্ছে। এতে প্রতিদিন ২০ লিটার করে জ্বালানী তেলের প্রয়োজন পড়ে। 

তিনি আরও বলেন, সরকার অবৈধ গরুর প্রবেশ রোধে কঠোর অবস্থানে থাকলেও একটি মহল নানা কৌশলে সীমান্তের কাঁটাতার গলিয়ে দেশে অবৈধভাবে ভারতীয় গরু এনে থাকে। এতে উৎপাদিত পশুর ন্যায্যমূল্য থেকে আমরা বঞ্চিত হই। প্রশাসনের কাছে দাবি অবৈধ গরুর প্রবেশ বন্ধে তারা যেন কঠোর অবস্থানে থাকে। 
 
এ বিষয়ে জেলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোঃ ইকবাল হোছাইন বলেন, জেলায় থাকা খামারগুলোর নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি খামারিরা যাতে তাদের উৎপাদিত পশু নিরাপদে বিপনন করতে পারে সেজন্য পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। সেই সঙ্গে চোরাই গরু বেচাকেনা বন্ধে কঠোর আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। 

জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার কাজী নজরুল ইসলাম বলেন, জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা ১ লাখ ৪০ হাজার হলেও খামারে ১ লাখ ২১ পশু মজুত রয়েছে। অবশিষ্ট পশুর ঘাটতি আশপাশের জেলার পশু দিয়ে পূরণ করা হবে। 

তিনি আরও বলেন, তাপদাহে উৎপাদিত পশুর স্বাস্থ্য সুরক্ষায় দৈনিক ২-৩ বার গোসল করানোসহ তাপ নিয়ন্ত্রণে খামারিদের সচেতন করা হচ্ছে। এছাড়া বর্ডার পেরিয়ে অবৈধ পশুর অনুপ্রবেশ রোধে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে আলোচনা হয়েছে। 

এএইচ


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি