ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

পদ্মা সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলে উচ্ছ্বসিত দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ

জামাল হোসেন, বেনাপোল থেকে

প্রকাশিত : ১৬:০০, ৩০ অক্টোবর ২০২৩

Ekushey Television Ltd.

স্বপ্নের পদ্মা সেতু হয়ে রেলে ঢাকায় যাতায়াতের অপেক্ষায় বেনাপোলসহ দক্ষিণাঞ্চলের মানুষ। সব ঠিকঠাক থাকলে ১ নভেম্বর খুলনা-ঢাকা ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও ২ নভেম্বর বেনাপোল-ঢাকার মধ্যে পদ্মা সেতু হয়ে চলাচল করবে যাত্রীবাহী ট্রেন ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ট্রেনে পদ্মা সেতু পাড়ি দিতে উচ্ছ্বসিত এই অঞ্চলের মানুষজন। 

বাংলাদেশ রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চিফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট মো. আব্দুল আওয়াল বলেন, পদ্মা সেতু হয়ে আগামী ১ নভেম্বর থেকে নতুন রুটে যাত্রা শুরু করবে সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ও ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’। ‘সুন্দরবন এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি খুলনা ছাড়বে রাত ৯টা ৪৫ মিনিটে এবং ঢাকা পৌঁছাবে ভোর ৫টা ১০ মিনিটে। ২ নভেম্বর ‘বেনাপোল এক্সপ্রেস’ ট্রেনটি বেনাপোল ছাড়বে দুপুর ১টায় এবং ঢাকা পৌঁছাবে রাত ৮টা ৪৫ মিনিটে। 

অন্যদিকে ট্রেনটি ঢাকা ছাড়বে রাত ১১টা ৪৫ মিনিটে এবং বেনাপোল পৌঁছাবে সকাল ৭টা ২০ মিনিটে। পদ্মা সেতুতে রেল সংযোগের ফলে ঢাকা-খুলনা রুটের দূরত্ব কমবে ২১২ কিলোমিটার। এজন্য সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে বলে জানান তিনি।

খুলনা রেলস্টেশনের স্টেশন মাস্টার মো. মাসুদ রানা বলেন, আগামী ১ নভেম্বর খুলনা-ঢাকা ও ২ নভেম্বর বেনাপোল-ঢাকা নতুন রুটে ট্রেন চলাচল শুরু হবে। আমাদের সব প্রস্তুতি রয়েছে। নতুন এ রুটে যাত্রীদের আগ্রহও বেশি। এরই মধ্যে পদ্মা সেতু পার হয়ে ঢাকায় ট্রেনে যাত্রা করার জন্য খোঁজ নিতে শুরু করেছেন যাত্রীরা।

বেনাপোলের সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী শাহজাহান সবুজ বলেন, বাসে সেতু দিয়ে যাতায়াত করেছি। যানজট না থাকলে সময় লাগে চার ঘণ্টা আর যানজট থাকলে লাগে পাঁচ ঘণ্টা। এখন ট্রেনে যাতায়াতের অপেক্ষায় আছি। আসলে পদ্মা সেতু আমাদের জন্য আশীর্বাদ। এ অঞ্চলের মানুষের যোগাযোগ ব্যবস্থা পুরোপুরি বদলে গেছে।

পদ্মা সেতু চালু হওয়ার পর থেকে গার্মেন্টসহ রপ্তানি পণ্য পরিবহনে অধিক সুবিধা হয়েছে বলে জানালেন বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আলহাজ শামছুর রহমান। তিনি বলেন, রেল যোগাযোগ চালু হলে বেনাপোল বন্দর দিয়ে আমদানি-রপ্তানি আরও বাড়বে। পদ্মা সেতু চালু হওয়ায় গত এক বছরে ব্যবসা-বাণিজ্যের পরিধি বেড়েছে দ্বিগুণ। ট্রেনে যাত্রী পরিবহনের পাশাপাশি কম খরচে মালামাল বহন করা যাবে। এ অঞ্চলের বিভিন্ন শাকসবজি, ফুল ও মাছ দ্রুত সময়ে ঢাকায় পৌঁছানো গেলে উপকৃত হবেন লাখ লাখ কৃষক। বদলে যাবে মানুষের জীবনযাত্রার মান। 

বেনাপোলের সঙ্গে যশোর হয়ে সরাসরি ট্রেন যোগাযোগ স্থাপিত হলে পরিবহনের অগ্রযাত্রায় যোগ হবে আরেকটি নতুন পালক। যশোরের চেঙ্গুটিয়া থেকে নড়াইল পর্যন্ত রেলসড়কের নির্মাণকাজ দ্রুতগতিতে এগিয়ে যাচ্ছে। সব ঠিকঠাক থাকলে আগামী বছর থেকে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকায় যাবে ট্রেন। 

সম্পূর্ণ রেলপথ নির্মাণ না হওয়ায় বিকল্প পথে অর্থাৎ মাওয়া থেকে ফরিদপুর-রাজবাড়ী-পোড়াদহ হয়ে ট্রেন যাবে যশোর। বেনাপোল থেকে ঢাকা যাবে একই পথে। আপাতত যশোর থেকে পোড়াদহ হয়ে ঢাকা পৌঁছাতে সময় একটু বেশি লাগবে। তবে বেনাপোলের সঙ্গে নড়াইল হয়ে ঢাকার রেল প্রকল্প পুরোপুরি চালু হলে পাল্টে যাবে বেনাপোল বন্দরের চিত্র। মাত্র তিন থেকে সাড়ে তিন ঘন্টায় পৌছে যাবে ঢাকায়। 

বেনাপোলের ব্যবসায়ীরা মনে করেন রেলব্যবস্থা চালু হলে সময় বেঁচে যাওয়ার পাশাপাশি এ অঞ্চলে অর্থনৈতিক পরিবর্তন আসবে।
ভারত থেকে পণ্য আমদানি-রপ্তানিতে পরিবহন ব্যবস্থার পরিবর্তনের সঙ্গে কৃষিনির্ভর যশোর অঞ্চলের কৃষি খাত আরও এক ধাপ এগিয়ে যাবে। 

যশোর-সাতক্ষীরা অঞ্চলের মাছের পাশাপাশি গদখালী ও ঝিকরগাছার ফুল, বিভিন্ন ধরনের সবজি, নারকেল, কাঁঠালসহ কৃষিজাত পণ্য সহজেই পৌঁছে যাবে ঢাকায়। দ্রুততম সময়ে কৃষিপণ্য ঢাকায় পৌঁছানো সম্ভব হলে উপকৃত হবে এ অঞ্চলের লাখ লাখ কৃষক।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি