ঢাকা, শুক্রবার   ২৫ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

অজানা ভাইরাসে দুই মেয়ের মৃত্যু, মা-বাবা আইসোলেশনে

রাজশাহী বিভাগীয় প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ০৮:৩৯, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ | আপডেট: ০৮:৪২, ১৮ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

Ekushey Television Ltd.

রাজশাহীতে অজানা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে দুই বোনের মৃত্যু হয়েছে। তাদের বাবা-মাকেও হাসপাতালে আইসোলেশনে রাখা হয়েছে। 

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে শনিবার (১৭ ফেব্রুয়ারি) বিকাল ৫টার দিকে মারা যায় বড় মেয়ে মাশিয়া। আর গত বুধবার একই লক্ষণ নিয়ে মারা যায় ছোট মেয়ে মারিশা। তাই শিশুদের বাবা-মাকে আর হাসপাতাল থেকে যেতে দেননি চিকিৎসকেরা। তাদের রামেক হাসপাতালের আইসোলেশন ওয়ার্ডে ভর্তি রাখা হয়েছে। 

বিকালে স্বজনদের মাধ্যমে মাশিয়ার মরদেহ বাড়িতে পাঠানো হয়। সন্ধ্যার পরে দুর্গাপুর উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে মরদেহ দাফন করা হয়। গত বুধবার রাতে ছোট মেয়ে মারিশাকেও এখানে দাফন করা হয়েছে।

আগামী ২ মার্চ দুইবছরে পড়ত শিশু মুনতাহা মারিশা। আর ৩০ মে পাঁচ বছর হতো মুফতাউল মাশিয়ার বয়স। এই দুই শিশুর বাবার নাম মনজুর রহমান। তিনি রাজশাহী ক্যাডেট কলেজের গণিত বিভাগের প্রভাষক। তাঁর স্ত্রী পলি খাতুন গৃহীনি।

তাদের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামে। তবে তাঁরা রাজশাহীর চারঘাটের সারদায় ক্যাডেট কলেজের কোয়ার্টারেই থাকতেন। কলেজ প্রাঙ্গনে থাকা গাছের বরই কুড়িয়ে এনে দুই শিশুকে খেতে দিয়েছিলেন কাজের বুয়া। না ধুয়েই এই বরই খেয়েছিল দুই বোন।

শিশুদের মা পলি খাতুন জানালেন, গত ১৩ ফেব্রুয়ারি সকালে কোয়ার্টারের কাজের বুয়া কলেজ ক্যাম্পাসের গাছ থেকে বরই কুড়িয়ে এনে দুই মেয়েকে খেতে দিয়েছিলেন। না ধুয়েই ওই বরই খেয়েছিল মারিশা আর মাশিয়া। সেদিন তারা ভালই ছিল। একসঙ্গে খেলেছে। পরদিন বুধবার বেলা ১১টার দিকে ছোট মেয়ে মারিশার জ্বর আসে। বার বার পানি খাচ্ছিল। দুপুরের পর শুরু হয় বমি। তখন মেয়েকে মাইক্রোবাসে করে রাজশাহীর সিএমএইচ হাসপাতালে আসছিলেন। মাইক্রোবাসেও মারিশা বুকের দুধ খায়। শহরে ঢোকার আগে কাটাখালী এলাকায় মায়ের কোলে মারিশা মারা যায়। 

তিনি আরও জানান, এরপর শুক্রবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) সকাল থেকে দুর্গাপুরের বাড়িতে মাশিয়ারও জ্বর আসে। শুরু হয় বমি। দ্রুতই তাকে প্রথমে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং পরে রাজশাহীতে সিএমএইচে আনা হয়। রাতে মাশিয়ারও পুরো শরীরে ছোপ ছোট কাল দাগ উঠতে শুরু করে। তা দেখে সিএমএইচের চিকিৎসকেরা মাশিয়াকে রামেক হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেন। রাত ৯টায় তাকে রামেক হাসপাতালে আনা হলে চিকিৎসকেরা তাকে দ্রুতই আইসিইউতে ভর্তি নেন। পরদিন শনিবার বিকালে মাশিয়াও মারা যায়।

পলি খাতুন জানান, ছোট মেয়ে মাশিয়ার মৃত্যুর পর তার পুরো শরীরে ছোপ ছোপ কাল দাগ উঠতে শুরু করে। আর মারিশার একই রকম কাল দাগ উঠতে শুরু করে মৃত্যুর আগের রাতে। এ রকম দাগ তিনি আগে কখনও দেখেননি। গরম তেল শরীরে পড়লে যে ধরনের দাগ হয়, তা অনেকটা সে রকমের। অসুস্থ হওয়ার পরে দুই বোনই বার বার পানি খাচ্ছিল।

রামেক হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের ইনচার্জ ডা. আবু হেনা মোস্তফা কামাল বলেন, ‘ধারণা করা হচ্ছে বাচ্চা দুটি নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছিল। যদিও তাদের বাবা-মা জানিয়েছেন, তারা খেজুর রস খায়নি। তবে না ধুয়ে বরই খেয়েছিল। এটা নিপাহ ভাইরাস হতে পারে, আবার অন্য কোন ভাইরাসও হতে পারে। সেটা আসলেই কী তা জানতে হাসপাতালে মারা যাওয়া মারিশা আর তার বাবা-মায়ের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। রোববার রিপোর্ট হবে, তখন জানতে পারব।’

তিনি বলেন, ‘এবছর এ পর্যন্ত রাজশাহীতে কেউ নিপাহ ভাইরাসে মারা গেছে এ রকম প্রমাণ পাওয়া যায়নি। তবে এটা সঠিক যে, বাচ্চা দুটি কোন একটা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েই মারা গেছে। অসুস্থ হওয়ার আগে এটা বোঝা যায়নি। আবার অসুস্থ হওয়ার পরে চিকিৎসার জন্য খুব বেশি সময়ও পাওয়া যায়নি। তাই বাচ্চাদের বাবা-মাকে বাসায় যেতে দেওয়া হয়নি। হাসপাতালে তাদের আইসোলেশনে রাখা হয়েছে।’

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি