ঢাকা, রবিবার   ২৭ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

বেলকুচিতে মানুষের ঢল: বৈঠার ছন্দে যমুনার দুই তীরে উচ্ছাস

স্বপন মির্জা-সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধিঃ

প্রকাশিত : ২২:০৯, ১৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

আবহমান বাঙালী জাতির ঐতিহ্য ও প্রাচিন সাংস্কৃতিক অন্যতম অনুসঙ্গ নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা। নদী মাতৃক বাংলাদেশের গ্রামীণ লোক সাংস্কৃতিক সেই ধারাবাহিকতা বুকে ধারন করে সিরাজগঞ্জের বেলকুচিতে এবারো অনুষ্ঠিত হয়েছে ঐতিহ্যবাহী নৌকা বাইচ। সিরাজগঞ্জ জেলা পরিষদের আয়োজনে প্রতিযোগীতার মুল উদ্যোক্তা ছিলেন সাবেক মন্ত্রী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস।

এনায়েতপুর-বেলকুচির মেঘুল্লায় যমুনার নদী বক্ষে এই প্রতিযোগীতায় ঢাক-ঢোলের বাজনার সাথে তাল মিলিয়ে জারি-সারি ও ধুয়া গানের সাথে মাঝিদের জোরে টানো ছন্দময় বৈঠার সে দৃশ্য ছিল অতুলনীয়। অর্ধ শতাধীক অংশ নেয়া নৌকার এ প্রতিযোগীতা দেখতে আসা তখন পাবনা, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার অর্ধলক্ষাধিক মানুষের আবেগ, উত্তেজনা এবং মুহু-মুহু করতালীতে মুখরিত ছিল পুরো এলাকা। 

গত ২ সপ্তাহ আগে বেলকুচির মেঘুল্লার যমুনা নদীতে ১৬ সেপ্টেম্বর নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতার আয়োজনের ঘোষনা দিয়ে প্রচারনায় চালায় জেলা পরিষদ কর্তৃপক্ষ। এজন্য বাইচের দিন সোমবার সকালেই টাঙ্গাইল, পাবনা ও সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর, সদর, চৌহালী, এনায়েতপুর ও বেলকুচি এবং উল্লাপাড়ার কয়েকশ বিভিন্ন নৌকা যোগে এবং সড়ক পথে প্রতিযোগীতা স্থল মেঘুল্লা ঈদগা মাঠ যমুনার তীরের ৪ কিলোমিটার জুড়ে সমবেত হয় অন্তত অর্ধ লক্ষাধিক মানুষ। প্রতিযোগী পানশি, কোষা ও বৃহৎ আকারের খেলনা নৌকাও দুপুর ১টার মধ্যে চলে আসে। এরপর বেলা ৩টায় শুরু হয় মুল প্রতিযোগীতা। ঘণ্টির ঝনঝনানি, ঢোল, বাদ্যযন্ত্রের তালে-তালে উদ্বুদ্ধ করণদাতাদের ‘জোরসে বল হেইও, আরো জোরে হেইও, বাইয়া যাও হেইও’র ছন্দে ছন্দে মাঝিরা বৈঠা হাতে বেয়ে যায় নৌকা। তখন তীরবর্তী স্থানে সমান তালে ছুটে চলে সমর্থকরা। দুই তীরে করতালি, হর্ষধ্বনি পরিশ্রান্ত মাঝিদের উৎসাহ জোগায়। তখন চৌহালীর খাসধলাই থেকে আসা একুশে টেলিভিশনের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালামের (সালাম কুটি) সুবিশাল ৯০ হাত লম্বা খেলনা নৌকাটি ঘিরেই ছিল সবার আগ্রহ। দৃষ্টিনন্দন পুরো কাঠের নৌকাটি যখন ৯০ জন মাঝি-মাল্লা নিয়ে প্রতিযোগী নৌকার সাথে টান শুরু করলো তখনই বাধ ভাঙ্গা মানুষের সে কি উৎচ্ছাস।

নৌকার তত্ত্বাবধায়ক সালাম কুটির ভাই সাবেক চেয়ারম্যান আখতারুজ্জামান মন্টু জানান, এরকম স্বতঃফুর্ত জনতার উৎসব মুখর আয়োজনের নৌকা বাইচ আগে কখনো দেখিনি। আমরা ছোট বেলায় দেখেছি বন্যার সময় হলেই চারদিকে নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতার ধুম পড়তো। কিন্তু এখন আর খুব একটা এ আয়োজন হয়না। তবে ব্যতিক্রম লতিফ বিশ্বাস গ্রামীন ঐতিহ্যকে লালন করে প্রতিবার নৌকা বাইচের আয়োজন করছে। আমরা চাই নির্মল আনন্দের এ ধারা যেন অব্যাহত থাকে।

এদিকে এই বাইচকে ঘিরে যমুনার তীর জুড়ে মেঘুল্লায় বসেছিল নানা মুখরোচক খাবারের দোকানের মেলা। সেখানেও ছিল নারী-পুরুষ বিভিন্ন বয়সী মানুষের ভীড়। শাহজাদপুরের আমিরুল ইসলাম শাহু, এনায়েতপুরের খামারগ্রামের আব্দুল মান্নান মোল্লা, বেলকুচির জিধুরীর জীবন তালুকদার, দৌলতপুরের হাজী শহিদুল ইসলাম জানান, আসলেই নৌকা বাইচের এই বিশাল আয়োজন আমাদের সবাইকে মুগ্ধ করেছে। সকল ভেদাভেদ ভুলে অন্তত কয়েক ঘন্টার জন্য সবাই আমরা এক কাতারে মিশে ছিলাম। এই আয়োজনের মাধ্যমে মাদক, যৌতুক, জঙ্গী, সন্ত্রাস বন্ধ করে সবাইকে এক হয়ে দেশের উন্নয়নে কাজ করার যে আহবান জানানোয় পুরো উদ্যোগটি পুর্নতা পেয়েছে। 
এছাড়া ঐতিহ্যের এই বাইচ উপলক্ষে মেঘুল্লা, আজগরা, জামতৈল, ক্ষিদ্রমাটিয়া, বংখুড়ি, চর মেঘুল্লা সহ আশ পাশের গ্রামের বাড়িতে-বাড়িতে নায়রে আনা হয়েছিল ঝি-বেটি সহ আত্বীয় স্বজনদের। এ যেন ঈদের মতই আরেক আনন্দ। এ ব্যাপারে মেঘুল্লা গ্রামের গাজী ইসমাইল হোসেন জানান, ঈদের আনন্দ দিনের জন্য হলেও নৌকা বাইচের আনন্দ আমাদের এলাকার ৮/১০টি গ্রামের মানুষ ৩ দিন উপভোগ করছে। প্রতি বাড়িতেই স্বজনদের এনে তালের পিঠার আয়োজন চলছে।    

খেলায় জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন সিরাজগঞ্জ জেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক সদর আসনের এমপি অধ্যাপক ডাঃ হাবীবে মিল্লাত মুন্না। জেলা পরিষদ প্রধান নির্বাহী ইকতেখার উদ্দিন শামীম, জেলা আওয়ামীলীগের সহ সভাপতি মোস্তফা কামাল খান, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান রিয়াজ উদ্দিন, চৌহালী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকার, বেলকুচি পৌর মেয়র বেগম আশানুর বিশ্বাস সহ জেলা, থানা আওয়ামীলীগের নেতৃবিন্দ এবং জেলা পরিষদের সদস্য ও অন্যান্য কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তখন এই অতিথিরা বিজয়ী সালাম কুটি, বাংলার বাঘ, সোনার বাংলা, প্রথম আলো, সোনারতরী, সেভেন ষ্টার, বিজয় ৭১, পাবনার জনতা সহ বিজয়ী নৌকার মালিকদের হাতে ফ্রিজ এবং পরাজিতদের এলইডি টিভি উপহার দেয়া হয়।

আয়োজন প্রসঙ্গে জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আব্দুল লতিফ বিশ্বাস বলেন, নৌকা উন্নয়ন অগ্রগতী ইতিহাস ঐতিহ্যের  প্রতিক। এই নৌকাই আখিরাতের কান্ডারী। সেই নৌকা বাইচেরই আমরা আয়োজন করেছিলাম সকল পাপাচারের বিরুদ্ধে। সবার স্বতঃফুর্ত অংশগ্রহন আমাদের মুগ্ধ করেছে। আগামীতেও বাল্য বিবাহ, সন্ত্রাস, জঙ্গী মুক্তে সোনার বাংলা গড়তে সকলে উৎসাহ যোগাতে এই আয়োজন অব্যাহত থাকবে। 

আরকে/


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি