ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪

অনলাইনে পরীক্ষা: কী বলছেন হাবিপ্রবি’র শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

হাবিপ্রবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৩:৩৯, ৭ সেপ্টেম্বর ২০২১

করোনায় প্রায় দেড় বছর ধরে বন্ধ আছে দেশের সকল শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান। এই দীর্ঘ সময়ে বাড়িতে থেকে হাঁপিয়ে উঠেছেন শিক্ষার্থীরাও। একদিকে সেশনজট অন্যদিকে বয়স বেড়ে যাওয়ার দুশ্চিন্তা সবাইকে গ্রাস করে ফেলছে। শিক্ষার্থীদের পদচারণা না থাকায় ক্যাম্পাসগুলোও যেন নিরব নিথর হয়ে মূর্তির মতো দাঁড়িয়ে আছে।

উত্তরবঙ্গের উচ্চশিক্ষার স্বনামধন্য বিদ্যাপীঠ দিনাজপুরের হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে দেশ-বিদেশের ১১ হাজারের অধিক শিক্ষার্থী পড়াশোনা করছে। অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের ন্যায় এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও সেশনজটের উৎকণ্ঠা আর সংশয় নিয়ে দিন পার করছিলেন।

এমন পরিস্থিতিতে ভাইস চ্যান্সেলর হিসেবে যোগ দিলেন অধ্যাপক ড. এম কামরুজ্জামান। যোগদানের কিছুদিন পরেই শিক্ষার্থীদের কথা বিবেচনায় নিয়ে অনলাইন পরীক্ষা চালুর মাধ্যমে যুগান্তকারী ও সাহসী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন তিনি। তার এই সিদ্ধান্তের ফলে এখন ঘরে বসেই পরীক্ষা দিতে পারছেন শিক্ষার্থীরা। 

বাংলাদেশে অনলাইন পরীক্ষা বেশ নতুন। অনলাইন পরীক্ষা পরিচালনার সবচেয়ে চ্যালেঞ্জিং দিক হচ্ছে শিক্ষার্থীরা উত্তরপত্র লেখার ক্ষেত্রে যেসব উৎস দরকার, তা নিশ্চিত করা। পরীক্ষা সংক্রান্ত সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশ নেওয়ার জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ইন্টারনেট সংযোগ।

যদিও এটি বাস্তবায়নে যথেষ্ট প্রতিবন্ধকতা রয়েছে, তারপরও এই কোভিড অবস্থায় উচ্চশিক্ষায় গতিশীলতা বজায় রাখার বিষয়ে অনলাইন পরীক্ষা একটি দুর্দান্ত প্রয়াস।

অনলাইন পরীক্ষার বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. এম জাহাঙ্গীর কবির জানান, যে কোনো শিক্ষা ব্যবস্থায় একাডেমিক মূল্যায়ন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পরীক্ষায় সাফল্য শিক্ষার্থীদের আত্মবিশ্বাস নিশ্চিত করে এবং বৈশ্বিক গ্রহণযোগ্যতার জন্য প্রয়োজনীয় যোগ্যতা, কর্মক্ষমতা এবং বিশ্বাসযোগ্যতা প্রতিফলিত করে। কোভিড-১৯ প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিতকল্পে হাবিপ্রবি আগস্ট মাসের ১ম সপ্তাহ থেকে স্থগিত পরীক্ষাসমূহ অনলাইনে পরিচালনা করার সময়োপযোগী উদ্যোগ নিয়েছে। এ কারণে ভাইস চ্যান্সেলর মহোদয় এবং সংশ্লিষ্ট সকলকে ধন্যবাদ জানাই।

বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো: আবু সাঈদ জানিয়েছেন, করোনাকালীন সময়ে যেখানে সমস্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে, সেখানে অনলাইন পরীক্ষা গ্রহণে হাবিপ্রবি সফল। তবে যেসব শিক্ষার্থীর বাসা প্রত্যন্ত অঞ্চলে তারা নিরবিচ্ছিন্ন বা উচ্চগতি সম্পন্ন ইন্টারনেটের সুবিধা পায় না। তারা একটু অসুবিধার সন্মুখীন হচ্ছে। তবে পরীক্ষা গ্রহণের সময় আমরা শিক্ষকরা সেই অসুবিধা দূর করার জন্য প্রয়োজনীয় সহযোগীতা করে থাকি। করোনাকালীন সময়ে অনলাইন পাঠদান এবং পরীক্ষা গ্রহণের বিকল্প নাই।

সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোঃ রাশেদুল হক জানান, এই করোনাকালীন প্রায় দেড় বছর সময়ে শিক্ষার্থীদের যে অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে, সেটা কিঞ্চিত লাঘব করার জন্যে হলেও এই অনলাইন ক্লাস বা অনলাইন পরীক্ষার বিকল্প ছিলো না। এখানে সব থেকে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে, এই অনলাইন ক্লাস বা পরীক্ষার মাধ্যমে শিক্ষার্থীরা বেশ উপকৃত হচ্ছে। যদি ভবিষ্যতে অনলাইন পরীক্ষার সুযোগ না থাকে তাহলে অনলাইন ক্লাস চালিয়ে যেতে চাই।

অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী রনি সরকার বলেন, করোনা মহামারিতে পৃথিবীর প্রায় সব ক্ষেত্রই কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে এবং হচ্ছে। এর মধ্যে শিক্ষাক্ষেত্র অন্যতম। আবার এটাও সত্য যে, চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নতুন অভিজ্ঞতা এবং প্রস্ফুটিত সম্ভাবনার দ্বারও উন্মুক্ত হয়েছে। বিশেষ করে, অনলাইন বা ডিজিটাল পদ্ধতিতে ক্লাস নেওয়া, ছাত্রছাত্রীদের মূল্যায়ন করার পদ্ধতি। আর অনলাইন পরীক্ষা যা নিশ্চয়ই ব্যতিক্রমধর্মী একটি পরীক্ষা। তবে অনলাইনে পরীক্ষা দিতে গিয়ে ভোগান্তির শিকার হচ্ছি অনেকেই। আমাদের অনেকের অ্যান্ড্রয়েড মোবাইল ভালো মানের নয়, গ্রামে নেটওয়ার্ক সমৃদ্ধ নয় এবং পরীক্ষার সময় অনেক কম হওয়ায় অনেকে ভালো মানের পরীক্ষা দিতে পারছে না। তাই, এসব বিষয়গুলো বিবেচনা করা উচিত।

সোস্যাল সায়েন্স এন্ড হিউম্যানিটিস অনুষদের শিক্ষার্থীরা রোকনুজ্জামান হৃদয় জানান, এই করোনা মহামারী আমাদের সকলের জীবনকে স্থবির করে দিয়েছে। শিক্ষার্থীরা হতাশার করাল গ্রাসে ডুবে গেছে। এমন অবস্থায় হাবিপ্রবি উপাচার্য মহোদয়ের এই অনলাইন পরীক্ষা গ্রহণের সিদ্ধান্তকে সাধুবাদ ও আনন্দের সাথে গ্রহণ করেছে প্রত্যেক শিক্ষার্থী। আমরা পরীক্ষাগুলো দিতে পেরে অনেকটাই আনন্দিত।

কৃষি অনুষদের শিক্ষার্থী অনামিকা স্যানাল বলেন, যখন ছাত্রছাত্রীরা পড়াশোনা বিমুখ হয়ে পড়েছে, সেশনজটের বিষন্নতা অনেককে গ্রাস করেছে সেই মুহূর্তে অনলাইন পরীক্ষা অনেকটাই কার্যকরী ভূমিকা রাখছে বলে আমার মনে হয়। এই পরীক্ষা আরও আগে শুরু করতে পারলে ভালো হতো। তবে অনলাইন পরীক্ষা দিতে গিয়ে আমার মনে হয়েছে ৯০ মার্কসের উত্তর দেড় ঘন্টায় করা বেশ কঠিন। এক্ষেত্রে সময় কমেছে কিন্তু প্রশ্ন সংখ্যা ও প্রশ্নের মান একই রয়েছে। তাই সময় একটু বাড়ানো উচিত।

ভেটেরিনারি এন্ড আ্যনিমেল সায়েন্স অনুষদের শিক্ষার্থী আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, করোনার জন্য বন্ধ থাকার কারণে বড় ধরনের সেশনজটের সম্মুখীন হয়েছি আমরা। ২০১৮ সালে লেভেল ১ শুরু করলেও ২০২১ সালের আগস্টে এসেও লেভেল ২, সেমিস্টার ২তে রয়েছি। তবে অনলাইন পরীক্ষা আমাদের জন্য আশার আলো বলা যায়। অনলাইনে প্রথমবার পরীক্ষা দিতে গিয়ে নেটওয়ার্ক সমস্যা, বৈদ্যুতিক সমস্যা, ফোন কাজ না করা- এসব সমস্যায় পড়েছেন অনেকে।

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি