ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৮ মে ২০২৪

আলোকিত মানুষ গড়ার গাড়ি

গবি প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:১০, ২ ফেব্রুয়ারি ২০২২

সবুজে আবৃত ক্যাম্পাসে সাদা রঙের গাড়ি। তাতে মোটা অক্ষরে লেখা ‘আলোকিত মানুষ চাই’। তবে এ কোনো সাধারণ গাড়ি নয়। এ যেন বিশ্বকোষ ও বিশ্বজ্ঞানের আতুরঘর। বহন করে চলেছে শত শত কবি-সাহিত্যিকের অক্ষত বাণী। 

বলছি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির কথা। যে লাইব্রেরির কার্যক্রম কোনো স্থির ভবনে আটকে নেই। সকাল থেকে সন্ধ্যা সড়কের পর সড়ক ভেদ করে সাদা রঙের এই গাড়িটি অবিরামভাবে ছুটে চলেছে জ্ঞান-অন্বেষণে আগ্রহী পাঠকদের ঠিকানায়। 

তেমনই এক ঠিকানা সাভারের গণ বিশ্ববিদ্যালয় (গবি)। প্রতি সপ্তাহের বুধবার গবির বাদাম তলায় তাকাতেই চোখে পড়ে এই চিরপরিচিত ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিটি। গাড়িটি দ্বিধাদ্বন্দ্বহীনভাবে অনায়াসে নিজেকে সঁপে দিয়েছে তার নতুন প্রাঙ্গণে। নিজেকে খাপ খাইয়ে নিয়েছে গবির বইপোকাদের সঙ্গে। 

শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস উন্নয়নের এ কার্যক্রমকে যে মানুষটি গণবিশ্ববিদ্যালয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছেন, তিনি হলেন বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির ‘লাইব্রেরি কর্মকর্তা’ মতিউর রহমান। 

তিনি বলেন, “বিশ্ববিদ্যালয় মানেই মুক্ত জ্ঞানচর্চার এক চারণ ভূমি৷ যেখানে ইচ্ছেমতো জ্ঞান আহরণের মাধ্যমে নিজেকে সমৃদ্ধ করার পর্যাপ্ত সুযোগ রয়েছে৷ বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ুয়া একজন শিক্ষার্থী বহুমুখী জ্ঞান যেমন আহরণ করতে পারেন ঠিক তেমনি সহশিক্ষা কার্যক্রমে নিজেকে সম্পৃক্তকরণের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদে পরিণত হবারও সুযোগ রয়েছে। আর এ জ্ঞান আহরণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রেখে থাকে লাইব্রেরিগুলো।” 

“একজন ব্যক্তি নিজেকে আলোকিত করতে হলে নিয়মিত পাঠাভ্যাস অতি জরুরি৷ সেই পাঠাভ্যাস তৈরিতে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারাটাও একটা মহৎ কর্মের থেকে কম কিছু বলে আমি অন্তত মনে করি না।” 

তিনি আরও বলেন, “সেই আলোকিত মানুষ গড়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশের সকল জেলাগুলোতে সরকারি, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে লাইব্রেরি সেবা পৌঁছে দিচ্ছে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরিগুলো। মহামারীর ভয়াবহ সময়গুলোতে পাঠকদের ইমেইলের মাধ্যমে পিডিএফ বই সরবারহ করা হয়েছে।”

আমাদের লাইব্রেরির এই সংকটকালে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি থেকে কতটা উপকৃত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা? জানতে চাওয়া হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান ও সমাজকর্ম বিভাগের দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থী নূসরাত তাহসীন রাত্রীর কাছে। 

তিনি বলেন, আমি প্রথমেই বলতে চাই, বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি হওয়ার আগে টানা পাঁচ বছর আমি বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের নিয়মিত সদস্য ছিলাম। যেহেতু আমাদের দেশের লাইব্রেরিগুলো সংখ্যায় দীন, ব্যবস্থাপনা দুর্বল, বইয়ের মান দুঃখজনক এবং পরিবেশ বিমর্ষ। ভালো বই বাড়িতে নিয়ে পড়ার সুযোগ পাঠকদের নেই বললেই চলে। সেখানে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি খুলে দিয়েছে এক নতুন দিগন্ত। যেখান থেকে উপকৃত হচ্ছে আমার মতো হাজার হাজার শিক্ষার্থী। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্র কেবল শিক্ষার্থীদের পাঠাভ্যাস বাড়ানোর উদ্যোগই নেয়নি, শিক্ষার মাধ্যমে একটি অন্ধকারে নিমজ্জিত জাতির মেরুদণ্ডকে দাঁড় করানোর উদ্যোগও নিয়েছে সুকৌশলে। যেখানে স্থান পেয়েছে বাঙালি জাতির শিল্প, সাহিত্য ও রঙিন সংস্কৃতির মতো গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গগুলো। 

বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরির এই নব্য সংস্করণ বা উদ্যোগ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের জন্য কতটা সময়োপযোগী পদক্ষেপ? এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হয় গণ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাষা-যোগাযোগ ও সংস্কৃতি (বাংলা) বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মোঃ নাহিদুর রহমান নিশাদের কাছে। তিনি বলেন,  শিক্ষার পাশাপাশি বাঙালির নিজস্ব শিল্প ও সংস্কৃতিকে টিকিয়ে রাখা প্রত্যেক নাগরিকের দায়িত্ব। কেননা এখানে জড়িয়ে আছে বাঙালি জাতির অস্তিত্ব। একজন বিশ্ববিদ্যালয় পড়ুয়া শিক্ষার্থী হিসেবে বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রের এমন গৌরবময় উদ্যোগকে আমি অন্তরের অন্তস্থল থেকে কৃতজ্ঞতা জানাই।

একটি দেশকে এগিয়ে নিতে ছাত্র সমাজ অর্থাৎ তরুণদের বিকল্প নেই। আর এই ছাত্রদের মুক্ত- স্বাধীন-সাবলীল জ্ঞানার্জনের জন্য প্রয়োজন পাঠাভ্যাস উন্নয়ন। শিক্ষার এই গৌরবময় উন্নয়নে বন্ধুত্বের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে ভ্রাম্যমাণ লাইব্রেরি। 

এই বন্ধু অনায়াসে তার হাতভর্তি জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিয়েছে গবি শিক্ষার্থীদের কোমল হৃদয়ে এবং যা বইপোকাদের রূপান্তরিত করেছে আলোকিত পথের যাত্রীতে। 

এএইচ/


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি