ঢাকা, শনিবার   ২০ এপ্রিল ২০২৪

সিরাজগঞ্জে মাদ্রাসা শিক্ষকের থাপ্পরে কান ফাঁটলো শিশুর

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি

প্রকাশিত : ১৬:০৬, ৪ মার্চ ২০২০

সিরাজগঞ্জের এনায়েতপুর থানার গোপালপুর গ্রামের বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসায় শিক্ষকদের হাতে প্রায়ই শিশু নির্যাতনের ঘটনার অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। গত দু’দিন আগেও মাদ্রাসার মুহতামিম মাও. আমিরুল ইসলাম ১ম শ্রেণীর ছাত্র রিফাত হোসেনকে (৬) থাপ্পর দিয়ে কানের পর্দা ফাটিয়ে ফেলছেন বলে অভিযোগ। তাকে চিকিৎসার পর বাড়িতে আনা হলেও ওই কান দিয়ে কিছু শুনতে পারছে না বলে তার বাবা বুলবুল ইসলাম জানান।

মাদ্রাসায় অহরহ নির্যাতনের ঘটনায় রুপনাইসহ আশপাশের এলাকার আহত অন্তত ১৫/২০ জন শিশু ছাত্র-ছাত্রী মাদ্রাসা থেকে ভয়ে বের হয়ে এসেছে বলে জানা গেছে। অন্যদেরর মাঝেও বিরাজ করছে আতংক। তবে কর্তৃপক্ষ যথাযথ ব্যবস্থা না নেয়ায় মাদ্রাসাটিতে এই ধরনের ঘটছে বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

জানা যায়, ১৩ বছর আগে গোপালপুরে বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এখানে শিশু শিক্ষার্থীদের নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে। বছর খানেক আগেও এলাকার এক শিশুকে মারধরের কারনে মাদ্রাসার এক শিক্ষককে বরখাস্ত করেছে পরিচালনা পরিষদ। তবে তার পরও এখানে শিশুদের নির্যাতন থেমে নেই। গত ২ মার্চ মাদ্রাসায় লেখা-পড়া অবস্থায় মুহতামিম ইসলামী ঝালসার আলোচক মাও. আমিরুল ইসলাম রুপনাই পুর্ব পাড়া গ্রামের শিশু রিফাতকে (৬) কানে থাপ্পর দেয়। তখন যন্ত্রণায় চিৎিকার শুরু করে সে বাড়ি চলে আসে। এরপর রাতে অসুস্থ হলে কান দিয়ে রক্ত ঝড়তে থাকে। পরে সিরাজগঞ্জে একটি ক্লিনিকে ডা. শফিউল ইসলামের কাছে নেয়া হলে তিনি ঘটনা শুনে বিস্মিত হন।

বুধবার সকালে চিকিৎসা শেষে বাড়িতে আনা হয়। ঘটনা জেনে স্থানীয় সংবাদ কর্মীরা ওই বাড়িতে গেলে তার বাবা বুলবুল ইসলাম ঘটনার বর্ণনা দিয়ে দুঃখ প্রকাশ করেন। এসময় তিনি অভিযোগ করে বলেন, আমার এই শিশু সন্তানকে গত বছর খানেক আগেও এক শিক্ষক মারধর করেছিল। পরে অভিযোগ দিলে সালিশ বসে মীমাংসা করে দেয়। আবারো আমার সন্তান রিফাতকে মেরে কান ফাটিয়ে দিয়েছে মুহতামিম আমিরুল ইসলাম। আমি এর বিচার চাই।

এছাড়া শিক্ষকদের দ্বারা নির্যাতিত হয়ে রুপনাই পুর্ব পাড়া গ্রামের আসাদুল ইসলামের মেয়ে জুবায়দা (৬), রিপনের ছেলে আলিফ (৫), হারুনের ছেলে অজ্ঞাতসহ (৮) অন্তত ১৫/২০ জন ছাত্র-ছাত্রী নির্যাতিত হয়ে মাদ্রাসা ছেড়েছে। নির্যাতিত জোবায়দার দাদা নওশাদ আলী অভিযোগ করে জানান, মাদ্রাসাটি এখন শিশুদের জন্য আতংক। কোমলমতি শিশুদের আদর করে পাঠদান করানো যেখানে রাষ্ট্রীয় আইন। সেখানে তার ব্যতিক্রম ঘটনা ঘটাচ্ছে বন্ধন মাদ্রাসা। আমরা সাধারন মানুষ অভিযোগ করলেও তারা আমলে নেন না। তাই প্রশাসনের কাছে দাবি ওই মাদ্রাসার বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হোক।   

এদিকে মাদ্রাসার নির্যাতনকারী মুহতামিম মাও. আমিরুল ইসলামের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন নম্বরে বার বার যোগাযোগ করা হলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। তবে বন্ধন তালিমুল কোরআন নুরানিয়া ও হাফিজিয়া মাদ্রাসা পরিচালনা কমিটির সেক্রেটারি বিষয়টি জেনে হাজী বাবুল মোল্লা ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তিনি জানান, আমাদের মাদ্রাসায় শিশু নির্যাতনের ঘটনাটি খুবই বেদনাদায়ক। আর আগেও এরকম ঘটনার দায়ে এক শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। তাই মুহতামিম আমিরুল ইসলামের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে বেলকুচি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার দায়িত্বে থাকা নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মো. রহমত উল্লাহ জানান, ঘটনাটি হৃদয়বিদারক। তদন্ত পুর্বক দায়ীদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি