ঢাকা, শুক্রবার   ২৯ মার্চ ২০২৪

হৃদরোগের ৯ কারণ: মূলে টেনশান

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৯:১৫, ১৯ এপ্রিল ২০১৮ | আপডেট: ২২:৪৮, ১৯ এপ্রিল ২০১৮

মানবদেহের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ হচ্ছে হার্ট বা হৃৎপিণ্ড। এ হৃদপিণ্ড বা হার্টের অনেক ধরনের রোগ হয়ে থাকে। বিশ্বে প্রতিবছর দেড় কোটিরও বেশি মানুষ করোনারি হৃদরোগে মৃত্যুবরণ করে। আর পাশ্চাত্যে মোট মৃত্যুর শতকরা ৪৫ ভাগই ঘটে হৃদরোগে। পাশ্চাত্যের অন্ধ-অনুকরণ আর ভ্রান্ত জীবনাচরণের কারণে বাংলাদেশসহ প্রাচ্যের দেশগুলোতেও এ রোগের প্রকোপ দিন দিন বাড়ছে। তবে এই রোগ একদিনে হুট করে হয় না। দীর্ঘদিন ধরে একটু একটু করে ধমনীতে কোলেস্টেরল জমেই এ রোগের সূত্রপাত ঘটে।

মার্কিন হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. ক্রিচটন দীর্ঘ গবেষণার পর দেখিয়েছেন, হৃদরোগের কারণ প্রধানত মানসিক।

ভ্রান্ত-জীবনদৃষ্টির কারণে যে জিনিসটি প্রথম তৈরি হয় তা হলো টেনশন বা স্ট্রেস। উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা, আবেগের আগ্রাসন, কাজের বাড়তি চাপ প্রভৃতি হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়। জীবনে ক্রমাগত আশঙ্কা বেড়ে যাওয়া, কাজ-কর্মে তাড়াহুড়ো, আধুনিক জীবনযাত্রায় নিত্য দিনের দুর্ভাবনা এককথায় স্ট্রেস সরাসরি আমাদের শরীরের রক্ত সঞ্চালন প্রক্রিয়া ও হৃৎপিণ্ডের ওপর প্রভাব ফেলে। ক্রমাগত টেনশন বা স্ট্রেসের ফলে শরীর থেকে এড্রেনালিন, নর-এড্রেনালিন ও কর্টিসোল নামক স্ট্রেস হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে যায়।

ফলশ্রুতিতে দেহের অধিকাংশ পেশী যে পরিমাণ সংকুচিত হয় সেই পরিমাণ শিথিল হতে পারে না। এর মধ্যে যেমন বড় বড় পেশী রয়েছে তেমনি ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেশীও রয়েছে। ফলে তৈরি হচ্ছে ঘাড়ে ব্যথা, কাঁধে ব্যথা, পিঠে ব্যথা। আবার করোনারি ধমনীর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে তৈরি হচ্ছে।

বিজ্ঞানীরা যে সব কারণকে হৃদরোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে মনে করে থাকেন তারমধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হলো-

১. বয়স: বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়তে থাকে।

২. লিঙ্গ: মহিলাদের চেয়ে পুরুষেরা হৃদরোগে বেশি আক্রান্ত হয়। তবে মেনোপজের পরে মহিলাদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেড়ে যায়।

৩. বংশগত: বাবা-মায়ের হৃদরোগ থাকলে তাদের সন্তানদের হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি অধিক থাকে। এর মূল কারণ পরিবারের একই খাদ্যাভ্যাস ও ধূমপানের অভ্যাস।

৪. ধূমপান: হৃদরোগ হওয়ার পেছনে ধূমপানের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। যে ব্যক্তি নিয়মিত ধূমপান করে থাকেন তার হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করার ঝুঁকি থাকে।

৫. উচ্চ রক্তচাপ: উচ্চ রক্তচাপ করোনারি হৃদরোগের একটি মারাত্মক রিস্ক ফ্যাক্টর। অনিয়ন্ত্রিত উচ্চ রক্তচাপ হৃদপিন্ডের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকর।

৬. রক্তের কোলেস্টেরলের মাত্রার আধিক্য: রক্তে কোলেস্টেরলের মাত্রার আধিক্য হৃদরোগের একটি গুরুত্বপূর্ণ রিস্ক ফ্যাক্টর।

৭. ডায়াবেটিস: হৃদরোগ হওয়ার পেছনে ডায়াবেটিসের ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। দীর্ঘদিনের ডায়াবেটিস হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

৮. অতিরিক্ত ওজন এবং মেদস্থূলতা: অধিক ওজন হলে শরীরে রক্ত সরবরাহ করতে হৃদপিণ্ডের অধিক কাজ করতে হয়। যার ফলে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।

৯. শারীরিক পরিশ্রমের অভাব: শারীরিকভবে নিস্ক্রিয় লোকদের হৃদরোগ হওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। অলস জীবন-যাপন করোনারি হৃদরোগের জন্য আরেকটি রিস্ক ফ্যাক্টর।

কিন্তু সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা এ কারণগুলো ছাড়াও যে বিষয়টির প্রতি অত্যন্ত গুরুত্ব সহকারে মনোযোগ দিচ্ছেন তা হলো স্ট্রেস বা টেনশন। এমনকি বিজ্ঞানীরা উপরোক্ত সবগুলো কারণের মধ্যে একক গুরুত্বপূর্ণ কারণ হিসেবে স্ট্রেসকে চিন্থিত করছেন।

গবেষণায় দেখা গেছে, কোনও ব্যক্তির রক্তের উচ্চ কোলেস্টেরল লেভেল, উচ্চ রক্তচাপ বা ধূমপানের অভ্যস থাকা সত্ত্বেও স্ট্রেস- ফ্রি থাকার কারণে তিনি হৃদরোগ থেকে মুক্ত রয়েছেন। আবার উপরোক্ত কারণগুলো না থাকা সত্ত্বেও শুধু স্ট্রেসের কারণে কোনও ব্যক্তি হৃদরোগে আক্রান্ত হয়েছেন।

একে// এসএইচ/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি