ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪

চীনে বিচারের মুখোমুখি চীনা-কানাডিয়ান টাইকুন

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:১০, ৬ জুলাই ২০২২

চীনা-কানাডিয়ান টাইকুন জিয়াও জিয়ানহুয়া।

চীনা-কানাডিয়ান টাইকুন জিয়াও জিয়ানহুয়া।

বেইজিংয়ের কানাডিয়ান দূতাবাস মঙ্গলবার (৫ জুলাই) সিএনএনকে জানিয়েছে, পাঁচ বছর আগে হংকংয়ের একটি হোটেল রুম থেকে অপহৃত হওয়া নিখোঁজ চীনা-কানাডিয়ান টাইকুন জিয়াও জিয়ানহুয়ার বিচার কোনো কানাডিয়ান কনস্যুলারের উপস্থিতি ছাড়াই চীনে অনুষ্ঠিত হবে।

বিলিওনিয়ার জিয়াও জিয়ানহুয়া, চীনের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক পরিবারের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের জন্য পরিচিত। ২০১৭ সালে হংকংয়ের ফোর সিজন হোটেলে তার কক্ষ থেকে চীনা নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা তাকে ধরে চীনের মূল ভূখণ্ডে নিয়ে গিয়েছিল। এরপর থেকেই তিনি নিখোঁজ।

কানাডিয়ান দূতাবাস বলছে, কনস্যুলার কর্মকর্তারা জিয়াওর মামলাটি নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন এবং তার পরিবারকে মামলার খবরাখবর প্রদান করছেন, যদিও ঠিক কবে জিয়াও এর বিচার কার্যক্রম শুরু হবে, তা তারা নিশ্চিত করেনি।

দূতাবাস বলেছে, ‘কানাডা তার দেশের নাগরিক জিয়াও জিয়ানহুয়ার বিচার কার্যক্রমে অংশ নেওয়ার জন্য চীনের কাছে বেশ কয়েকবার অনুরোধ করেছে। কিন্তু চীনা কর্তৃপক্ষ বিচারের সময় আমাদের উপস্থিত থাকার বিষয়টি নাকচ করেছে।’

এদিকে, দূতাবাসের উদ্ধৃতি দিয়ে রয়টার্স জানিয়েছিল, জিয়াওর বিচার সোমবার (৪ জুলাই) শুরু হতে পারে। 

এমন সময় জিয়াওর বিচারবহির্ভূত অপহরণ সংঘটিত হয়, যখন চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং কর্তৃক চালু করা দুর্নীতির বিরুদ্ধে একটি বৃহত্তর অভিযান শুরু হয়েছিল, যা এখনো চলমান। এই অভিযানের ফলে অনেক বড় বড় চীনা কোম্পানির সিনিয়র কর্মকর্তা এবং উচ্চপদস্থরা বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে।

এদিকে, হোটেল কক্ষ থেকে অপহৃত হওয়ার পর জিয়াওকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। চীনা কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ বা তার মামলার অন্য কোনো বিবরণও প্রকাশ করেনি। জিয়াও চীনের অন্যতম ধনী ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত, যিনি দেশটির টুমরো গ্রুপকে নিয়ন্ত্রণ করতেন। এটি একটি বিশাল হোল্ডিং কোম্পানি যা ব্যাঙ্ক, বীমা এবং প্রোপার্টি ডেভলপার এর মতো প্রতিষ্ঠানের স্টেক হোল্ডার।

চীনের ওয়েলথ অ্যানালাইজিং প্রতিষ্ঠান হুরুন-এর মতে, জিয়াও-এর মোট সম্পদের পরিমান ৬ বিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাদের করা ২০১৬ সালের ধনী ব্যক্তির তালিকায় জিয়াও এর অবস্থান ৩২ তম, এই তালিকাটি অনেকটাই ফোর্বসের তালিকার সমতুল্য।

এদিকে, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে, অপহরণের ঘটনা সম্পর্কে অবগত একজন ব্যক্তি সিএনএনকে জানান, হংকং ফোর সিজন হোটেলে দুই ডজন চীনা নিরাপত্তা কর্মকর্তা এবং জিয়াওর নিজস্ব নিরাপত্তা টিমের মধ্যে একটি ছোট হাতাহাতির ঘটনা হয়েছিল, তার নিরাপত্তা টিমে প্রতি শিফটে প্রায় ৮ জন দায়িত্ব পালন করত। তবে ওই ব্যক্তির পরিচয় গোপন রাখা হয়েছিল কারণ, জিয়াও এর মামলাটি রাজনৈতিকভাবে সংবেদনশীল।
ওই ঘটনার পর থেকে জিয়াওকে জনসম্মুখে দেখা যায়নি। 

এদিকে, সোমবার (৪ জুলাই) এক সংবাদ সম্মেলনে জিয়াওর বিচারের বিষয়ে জানতে চাইলে চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র ঝাও লিজিয়ান বলেছেন, তিনি পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত নন।

কে এই জিয়াও জিয়ানহুয়া? 

জিয়াও চীনে জন্মগ্রহণকারী একজন কানাডিয়ান নাগরিক। কর্পোরেট দুর্নীতির বিরুদ্ধে চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং এর অভিযানের শুরুর দিকে আরও অনেক চীনা টাইকুনদের মতো তিনিও হংকংয়ে চলে গিয়েছিলেন। সেখানে ফোর সিজন নামে একটি পাঁচ তারকা হোটেলের ব্যক্তিগত অ্যাপার্টমেন্টে তিনি বসবাস করেছিলেন।

জিয়াও এর অন্তর্ধান হংকং এর অভিজাত ব্যবসায়ী সম্প্রদায়ের মধ্যে একটি ভীতিকর বার্তা পাঠিয়েছিল যে, শহরটি আর মূল ভূখণ্ডের নিরাপত্তা ব্যবস্থার নাগালের বাইরে নয়। ব্রিটেনের ১৯৯৭ সালের হংকংকে চীনের কাছে হস্তান্তরের অংশ হিসাবে ‘এক দেশ, দুই ব্যবস্থা’ নীতির অধীনে নিশ্চিত করা শহরের স্বাধীনতার সীমিতকরণ নিয়েও এটি ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি করেছিল। 

জিয়াওর মামলাটি অনেকটাই ব্রিটিশ পাসপোর্টধারী একজন বই বিক্রেতা লি বো’র মতো। তিনি ২০১৫ সালে হংকং থেকে নিখোঁজ হয়েছিলেন এবং পরে চীনের হেফাজতে ছিলেন। সেই বছর পাঁচজন বই বিক্রেতা নিখোঁজ হয়েছিল, যাদের সকলেই প্রকাশক মাইটি কারেন্ট এবং তার দোকান কজওয়ে বে বুকসের সঙ্গে জড়িত ছিল, যেটি চীনের অভিজাতদের সম্পর্কে গসিপি শিরোনাম বিক্রির জন্য প্রসিদ্ধ। 

২০১৯ সালে হংকং-এর সরকার বিরোধী বিক্ষোভের আগেই এই নিখোঁজের ঘটনাগুলো ঘটেছিল, যা প্রাথমিকভাবে একটি বিতর্কিত প্রত্যর্পণ বিল দ্বারা শুরু হয়েছিল যাতে হংকংকে শহরের পলাতক ব্যক্তিদের চীনের মূল ভূখণ্ডের আদালতে স্থানান্তর করার অনুমতি দেওয়ার প্রস্তাব করেছিল। ২০২০ সালে বেইজিং শহরের উপর একটি ব্যাপক জাতীয় নিরাপত্তা আইন আরোপ করার আগে সরকার অবশেষে গণ-বিক্ষোভ দমন করার জন্য বিলটি স্থগিত করে। আইন, যা শহরের উপর বেইজিংয়ের সরাসরি নিয়ন্ত্রণ প্রসারিত করে, মূল ভূখণ্ডের কর্মকর্তাদের ‘এখতিয়ার প্রয়োগ করার’ ক্ষমতা প্রদান করে জাতীয় নিরাপত্তাকে বিপন্ন করেছিল।
ওই আইনে বিচ্ছিন্নতা, বিদ্রোহ, সন্ত্রাসবাদ এবং বিদেশী শক্তির সঙ্গে যোগসাজশকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করে এর সাথে সর্বোচ্চ সাজা হিসেবে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের বিধান প্রদান করা হয়।

এদিকে সমালোচকরা বলছেন, আইনটি হংকং সরকারের বিরুদ্ধে সমস্ত ভিন্নমতকে নীরব করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। তবে চীন বারবার আইনটিকে রক্ষা করে বলেছে, এটি শহরটিকে স্থিতিশীলতায় ফিরিয়ে দিয়েছে।

এসি

 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি