ঢাকা, শনিবার   ০৫ জুলাই ২০২৫

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে হামাসের আলোচনার ইঙ্গিত

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:৩৫, ৫ জুলাই ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

গাজায় যুদ্ধবিরতি নিয়ে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রস্তাবে ইতিবাচক জবাব দিয়েছে ফিলিস্তিনের স্বাধানতাকামী গোষ্ঠী হামাস। হামাস জানিয়েছে, গাজায় যুদ্ধবিরতির একটি প্রস্তাব নিয়ে অন্যান্য ফিলিস্তিনি দলগুলোর সঙ্গে তারা আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। এ খবর যুদ্ধবিরতি নিয়ে গোষ্ঠীটি আলোচনার প্রস্তুতি নিচ্ছে বলে আভাস দিচ্ছে।

শুক্রবার (৪ জুলাই) হামাস জানিয়েছে, মার্কিন মধ্যস্থতায় গাজার যুদ্ধবিরতি প্রস্তাবে তারা ‘ইতিবাচক জবাব’ দিয়েছে। এ চুক্তি বাস্তবায়নের জন্য আলোচনায় অংশ নিতে প্রস্তুত, যেখানে জিম্মিদের মুক্তি এবং সংঘাতের অবসানের জন্য আলোচনার কথা বলা হয়েছে।

গাজা সিটি থেকে এএফপি জানায়, এই ঘোষণার মাত্র কয়েক দিন পরেই ইসরাইলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ওয়াশিংটন সফরে যাচ্ছেন। সেখানে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প গাজায় চলমান যুদ্ধ বন্ধের জন্য জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছেন।

হামাস এক বিবৃতিতে জানায়, ‘মধ্যস্থতাকারীদের কাছ থেকে পাওয়া প্রস্তাবটি নিয়ে ফিলিস্তিনি শক্তি ও দলগুলোর নেতাদের সঙ্গে আলোচনা চালাচ্ছে আন্দোলনটি।’

এর কিছুক্ষণ আগেই নেতানিয়াহু গাজায় বন্দি সব জিম্মিকে ফিরিয়ে আনার ‘গভীর অঙ্গীকার’ পুনর্ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ‘প্রথমত ও সর্বাগ্রে আমাদের অপহৃতদের, সবাইকে, ফিরিয়ে আনার জন্য গভীর দায়বদ্ধতা অনুভব করি।’

প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প বৃহস্পতিবার বলেন, ‘গাজার মানুষের জন্য আমি নিরাপত্তা চাই। তারা নরকে দিন কাটাচ্ছে।’

আলোচনার সঙ্গে সম্পৃক্ত এক ফিলিস্তিনি সূত্র এএফপিকে জানিয়েছে, ‘যুক্তরাষ্ট্রের পূর্ববর্তী প্রস্তাবগুলোর সঙ্গে সাম্প্রতিক প্রস্তাবটির মূল কাঠামোয় কোনো মৌলিক পরিবর্তন নেই।’

সূত্রটি জানায়, প্রস্তাব অনুযায়ী, গাজায় বন্দি জীবিত ইসরাইলি জিম্মিদের মধ্যে অর্ধেককে, যাদের সংখ্যা ২২ বলে মনে করা হচ্ছে, ৬০ দিনের যুদ্ধবিরতির সময় মুক্তি দেওয়া হবে। এর বিনিময়ে ইসরাইল ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেবে।

এর আগে কাতার, মিসর ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যস্থতায় দুই দফা সাময়িক যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়েছিল। ওই সময় ইসরাইলি জিম্মিদের বিনিময়ে ফিলিস্তিনি বন্দিদের মুক্তি দেওয়া হয়েছিল।

২০২৩ সালের হামলায় মোট ২৫১ জন জিম্মি করা হয়েছিল। এর মধ্যে এখনও ৪৯ জন গাজায় বন্দি আছেন। ইসরাইলি সেনাবাহিনীর দাবি, এদের মধ্যে ২৭ জন ইতোমধ্যেই নিহত হয়েছেন।
 
সেনাবাহিনী জানায়, তারা গাজা শহর, খান ইউনুস এবং রাফায় সন্দেহভাজন হামাস ঘাঁটিতে বিমান হামলা চালিয়েছে।

প্রায় ২১ মাস ধরে চলা সংঘাতে গাজা উপত্যকার ২০ লাখ মানুষের মানবিক অবস্থা চরমভাবে অবনতি ঘটেছে। ইসরাইল সম্প্রতি হামাসের বিরুদ্ধে আরও বিস্তৃত সামরিক অভিযান শুরু করেছে।

গাজা সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা মোহাম্মদ আল-মুগাইয়ির জানান, শুক্রবার ইসরাইলি আগুনে অন্তত ৪০ জন নিহত হয়েছেন। আগের তথ্য অনুযায়ী মৃতের সংখ্যা ছিল ১৫।

ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, তারা এই ঘটনার অনুসন্ধান করছে, তবে দুটি ঘটনায় সময় ও স্থান চেয়ে বিস্তারিত তথ্য চেয়েছে।

মুঘাইয়্যির জানান, নিহতদের মধ্যে পাঁচজন রাফাহ’র কাছে যুক্তরাষ্ট্র-চালিত এক খাদ্য সহায়তা কেন্দ্রের সামনে এবং একজন ওয়াদি গাজার সেতুর কাছে গুলিতে নিহত হয়েছেন।

এই সহায়তা কেন্দ্রগুলোর আশপাশে গুলির ঘটনায় প্রায় প্রতিদিনই হতাহতের ঘটনা ঘটছে। জাতিসংঘ জানিয়েছে, গাজা দুর্ভিক্ষের কিনারায় রয়েছে।

খান ইউনুসের নাসের হাসপাতালে বৃহস্পতিবার নিহতদের জন্য শোক প্রকাশ করছেন স্বজনরা।

নরমিন আবু মু'আম্মার নামে এক শোকার্ত নারী বলেন, ‘আমি আমার ভাইকে হারিয়েছি সেই আমেরিকান ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে, যেটা নাকি খাদ্য বিতরণের জন্য তৈরি করা হয়েছিল। তারা মানুষকে বাঁচাচ্ছে না, মেরে ফেলছে।’

এক শোকার্ত মা, নিদা আল-ফাররা বলেন, ‘আমার ১৯ বছরের ছেলে ইয়াদ গিয়েছিল ময়দা আনতে। ওরা বলে, ‘এখানে সহায়তা আছে, এখানে এসো।’ আর যখন তারা যায়, তখন গুলি করে মেরে ফেলা হয়।’

যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরাইল-সমর্থিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশন (জিএইচএফ) জানিয়েছে, তাদের বিতরণ কেন্দ্রগুলোর কাছে এসব প্রাণঘাতী ঘটনার সঙ্গে তাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই।

গাজার সিভিল ডিফেন্সের কর্মকর্তা জানান, খান ইউনুসের কাছে শরণার্থীদের তাঁবুতে ইসরাইলি বিমান হামলায় অন্তত আটজন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে একজন শিশু।

তাঁবু স্থাপিত উপকূলীয় আরও দুটি স্থানে হামলায় আরও আটজন নিহত হয়েছেন বলে জানান তিনি। একটিতে শুক্রবার ভোরে দুই শিশুর মৃত্যু হয়।

এসব হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে ইসরাইলি সেনাবাহিনী জানায়, সুনির্দিষ্ট স্থান ও সময় ছাড়া তারা মন্তব্য করতে পারবে না। তবে জানায়, তারা হামাসের সামরিক সক্ষমতা ধ্বংস করতে অভিযান চালাচ্ছে।

২০২৩ সালের অক্টোবরে হামাসের হামলায় ১,২১৯ জন নিহত হয়, যাদের বেশিরভাগই ছিলেন বেসামরিক। এএফপি’র হিসাব অনুযায়ী, ইসরাইলি পরিসংখ্যান থেকেই এই তথ্য জানা গেছে।

এর জবাবে ইসরাইলি সামরিক অভিযানে এখন পর্যন্ত গাজায় কমপক্ষে ৫৭,১৩০ জন নিহত হয়েছেন, যাদের মধ্যে অধিকাংশই বেসামরিক নাগরিক। গাজার হামাস-চালিত স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্যকে জাতিসংঘ বিশ্বাসযোগ্য মনে করে।

এএইচ


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি