ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪

দশ বছরের শিশুর কাঁধে চার সদস্যের পরিবার

প্রকাশিত : ২১:১২, ২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ১০:১৪, ৩০ সেপ্টেম্বর ২০১৭

দশ বছরের ছোট শিশু সাবেকুন নাহার এখন চার সদস্যের পরিবারের প্রধান। যে বয়সে তার বাবা- মায়ের তত্ববধানে থাকার কথা সে বয়সে তিন ভাই- বোনের দায়িত্ব তার কাঁধে। মিয়ানমার মংডুর বুচিডং থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসা সাবেকুনসহ চার ভাইবোনের ঠাঁই হয়েছে কক্সবাজার জেলার উখিয়ার কুতুপালং শরনার্থী শিবিরে।

এখন পর্যন্ত এতিম ও অভিভাবকহীন প্রায় ২১শ রোহিঙ্গাদের শিশুকে সনাক্ত করেছে সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ। এসব শিশুদের কারো হয়তো বাবা নেই, কারো মা নেই, এমনি কি বাবা- মা দু’জনই নেই।

আবার অনেক শিশু আছে যাদের বাবা- মা থাকলেও সীমান্তের ওপারে কিংবা এপারে পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। এসব শিশুদের বিশেষ কর্মসূচির আওতায় এনে তাদের সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে বলে জানিয়েছেন সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

সাবেকুন নাহারের পরিবারের অপর তিন সদস্য হচ্ছে আট বছরের ভাই মোহাম্মদ ফারুক, সাত বছরের বোন শামসুন্নাহার ও পাঁচ বছরের বোন নুর ইয়াসমিন। বুচিডং এর বাড়িতে কয়েক বছর আগে মারা যায় এই চার রোহিঙ্গা শিশুর মা রুমা বেগম। আর বাবা মোহাম্মদ নাজের মারা যান দুই সপ্তাহ আগে মিয়ানমারের সেনা- পুলিশের গুলিতে। এরপর খালা রহিমা খাতুনের সাথে চার ভাই বোনসহ সাবেকুন চলে আসে বাংলাদেশে। খালার স্বামীও সম্প্রতি মিয়ানমার সেনাবাহিনীর হাতে নির্মমভাবে নিহত হয়েছেন।

সাবেকুন নাহার বলে, বুচিডং এর পাশের গ্রামে আমাদের বাড়ি ছিল। এখানে আসার আগে আমার বাবাকে মগরা কেটে ফেলেছে, এখন ভাই-বোনদের নিয়ে খালার সাথে থাকি।

সে আরো জানায়, ভাই বোনদের খালা দেখে রাখে, খালা রিলিফ অথবা অন্য কিছুর জন্য ঘরের বাইরে গেলে সে তাদের সবাইকে দেখাশোনা করে। কুতুপালং শরণার্থী শিবিরের মুখে এতিম অসহায় শিশুদের তালিকা করছে সরকারের সমাজকল্যাণ বিভাগ। প্রতিদিন কয়েক’শ শিশু এতে তালিকাভুক্ত হয়। 

শুক্রবার সেখানে ছোট দুটি শিশু রাহেলা আর ইয়াসমিনকে নিয়ে রেজিষ্ট্রেশন করাতে এসেছেন আরেক স্বামীহীন জমিলা। বোনের ছোট দুটি শিশু তার বাড়িতে বেড়াতে আসায় প্রাণে বেঁচে গেছে। বোন ও তার স্বামী মংডুর বলিবাজারের বাড়িতে সেনা- পুলিশের দেয়া আগুনে পুড়ে মারা গেছেন।

জামিলা বলেন, ভাগ্যক্রমে এই দুটি শিশু প্রাণে বেঁচে গেছে, তারা এখন আমাকে মা ডাকছে, কিন্তু আমার সন্তানদের বাবারও কোনো খবর নেই। তাদেরই খাবার দিতে পারিনা, বোনের বাচ্চাদের কীভাবে খাওয়াবো?

 এখানে গত চারদিন ধরে এতিম অসহায় শিশুদের তালিকা তৈরির কাজ করছেন সমাজকল্যাণ দপ্তরের কর্মীরা। এতিমদের মধ্যে বাবাহীন শিশুর সংখ্যাই বেশি। সনাক্ত হওয়ার পর তাদেরকে আপতত: কারো না করো হেফাজতে দেয়া হচ্ছে। এখন পর্যন্ত প্রায় ২১শ এতিম শিশুর তালিকা করা হয়েছে। তালিকা তৈরি সম্পন্ন হলে তাদের অধিকার সুরক্ষাসহ মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয কর্মসূচী নেয়া হবে বলে সমাজকল্যাণ দপ্তরের কর্মীরা জানান।

জাতিসংঘের শিশু তহবিল ইউনিসেফ সূত্রে জানা যায়, সদ্য সীমান্ত অতিক্রম করে আসা প্রায় দেড় লাখ রোহিঙ্গা শিশু পুষ্টিহীনতাসহ বিভিন্ন জটিল রোগের হুমকিতে আছে। তারমধ্যে সবচেয়ে বেশি হুমকিতে আছে অভিভাবক হারা কিংবা পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন শিশুরা, যাদের সংখ্যা ১৫ হাজারের মতো হতে পারে।

জেএ/ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি