ঢাকা, বুধবার   ১৪ মে ২০২৫

অস্ট্রেলিয়ায় সু চি’র বিচারের আইনি প্রক্রিয়া শুরু 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:৩৩, ১৭ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

মিয়ানমারের রাখাইনে রোহিঙ্গা গণহত্যা ও নিপীড়নের জন্য অং সান সু চিকে দায়ী করে তার বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের জন্য আবেদন করেছেন অস্ট্রেলিয়ার কয়েকজন আইনজীবী। এমন খবর জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ান।

তাদের এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করে, শুক্রবার (১৬ মার্চ) মেলবোর্নের একটি বিচারিক আদালতে আইনজীবীরা এই আবেদন করেন।

সু চি’র বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা দায়েরের জন্য যারা আবেদন করেছেন, তারা হলেন, মেলবোর্নের ব্যারিস্টার রন মের্কেল কিউসি, আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন আইনজীবী ম্যারিয়ন আইসোবেল, রায়েলিন শার্প, সিডনির মানবাধিকার আইনজীবী অ্যালিসন ব্যাটিসন ও ড্যানিয়েল টেইলর।

দ্য গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মেলবোর্নের আদালত আবেদনটি মূল্যায়ন করেছেন। আগামী সপ্তাহে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত জানাবেন আদালত। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেল ক্রিশ্চিয়ান পোর্টারের কাছে বিচারের প্রক্রিয়া শুরু করার অনুমতি চেয়ে আনুষ্ঠানিক অনুরোধ জানানো হয়েছে। আইনজীবীদের আবেদনের ভিত্তিতে সু চি’র বিরুদ্ধে মামলাটি শুরু করতে হলে অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমোদন প্রয়োজন।

এদিকে ১৭ মার্চ আসিয়ানের একটি বিশেষ সম্মেলনে যোগ দিতে সিডনি যাওয়ার কথা সু চি’র। ১৭ ও ১৮ মার্চ সিডনিতে আসিয়ান-অস্ট্রেলিয়া শীর্ষক বিশেষ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। আসিয়ানভুক্ত দশ দেশের নেতাদের সঙ্গে এই সম্মেলনে থাকবেন অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী ম্যালকম টার্নবুল।

অস্ট্রেলিয়া আন্তর্জাতিক বিচারিক ক্ষেত্রের (ইউনিভার্সেল জুরিসডিকশন) নীতিকে আনুষ্ঠানিকভাবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এর ফলে দেশটির আদালতে আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে গণহত্যা, মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যেকোনও দেশের নাগরিকের বিরুদ্ধে শুনানি হতে পারে। এর আগে এ ধরনের একটি বিচারের আন্তর্জাতিক উদাহরণ রয়েছে। চিলির সাবেক স্বৈরশাসক অগাস্টো পিনোশেটকে লন্ডনে গ্রেফতার করা হয়েছিল। তাকে গৃহবন্দি করা হলেও বিচার করা হয়নি।

এক্ষেত্রে বিদেশি নেতাদের বিচারের ক্ষেত্রে কূটনৈতিক দিকও বিবেচনা করা হয়। ফলে সু চির বিরুদ্ধে মামলাটি অ্যাটর্নি জেনারেলের অনুমতি ছাড়া শুরু করা যাবে না। অস্ট্রেলিয়ার অ্যাটর্নি জেনারেলের এক মুখপাত্র গার্ডিয়ানকে জানিয়েছেন, ‘আমরা এ ধরনের কোনও পদক্ষেপের বিষয়ে অবগত নই, অবগত হলেও আদালতের কোনও বিষয় নিয়ে আমরা মন্তব্য করবো না।’ এছাড়া সু চি’র কূটনৈতিক দায়মুক্তির কারণেও বিচারের মুখোমুখি হওয়া থেকে রক্ষা পেতে পারেন।

গত বছরের ২৫ আগস্ট নিরাপত্তা চৌকিতে আরসার হামলাকে মিয়ানমারের পক্ষ থেকে রোহিঙ্গাবিরোধী অভিযানের কারণ বলা হলেও বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন ও সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, রাখাইন থেকে রোহিঙ্গাদের তাড়িয়ে দিতে এবং তাদের ফেরার সমস্ত পথ বন্ধ করতে আরসার হামলার আগে থেকেই পরিকল্পিত সেনা-অভিযান শুরু হয়েছিল। চলমান জাতিগত নিধনে হত্যা-ধর্ষণসহ বিভিন্ন ধারার সহিংসতা ও নিপীড়ন থেকে বাঁচতে বাংলাদেশে পালিয়ে এসেছে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রায় ৭ লাখ মানুষ। তারা কক্সবাজারের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছে।

বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এ ঘটনায় খুঁজে পেয়েছে মানবতাবিরোধী অপরাধের আলামত। জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন এই ঘটনাকে জাতিগত নিধনযজ্ঞের ‘পাঠ্যপুস্তকীয় উদাহরণ’ আখ্যা দিয়েছে। রাখাইন সহিংসতাকে জাতিগত নিধন আখ্যা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশ। তবে এইসব অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে মিয়ানমারের সেনাবাহিনী। দেশটির রাষ্ট্রীয় উপদেষ্টা অং সান সু চি’ও রোহিঙ্গাদের পক্ষে কোনও ইতিবাচক ভূমিকা নিতে সক্ষম হননি। এ নিয়ে বিশ্বজুড়ে বিতর্কিত হয়েছেন তিনি, হারিয়েছেন বহু সম্মাননা।

এসি 

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি