ঢাকা, শনিবার   ১০ মে ২০২৫

কাশ্মীরে দিন দিন মানসিক রুগির সংখ্যা বাড়ছে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:০৪, ২৫ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:০৫, ২৫ মার্চ ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

 

ভারত শাসিত কাশ্মীরের বিপুল সংখ্যক মানুষ তীব্র মানসিক যন্ত্রণার মধ্য দিয়ে নিজেদের পার করছেন। ২০১৬ সালে থেকে সেখানে যে অশান্তি চলেছে তার কারণে মানসিক রোগীর সংখ্যা বেশ কয়েক গুণ বৃদ্ধি পয়েছে।

মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সামাজিক-রাজনৈতিক অশান্তি, বেকারত্ব, দারিদ্র্য আর অনিশ্চয়তায় ভরা জীবন কাটাতে বাধ্য হয়ে বিপুল সংখ্যক কাশ্মীরী ব্যাপক মানসিক চাপের মধ্যে রয়েছেন। কেননা স্বাভাবিক হওয়ার সুযোগ আসার আগেই হয়তো আবার নতুন করে অশান্তির মধ্যে পড়তে হচ্ছে তাদের।

তার ওপরে স্বতঃস্ফূর্ত মত প্রকাশের জায়গাগুলোও বন্ধ। তাই অনেক সময়েই ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ ঘটছে পাথর ছোঁড়ার মতো আক্রমণাত্মক ব্যবহারের মধ্যে দিয়ে। 

ভারত-শাসিত কাশ্মীরের প্রধান মনোরোগ চিকিৎসা কেন্দ্র মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল এবং সংলগ্ন ইন্সটিটিউট অফ মেন্টাল হেলথ এন্ড নিউরোসায়েন্সেস (ইমহ্যানস)-এর চিকিৎসকরা জানান, ২০১৬ সালে ঐ রাজ্যে টানা রাজনৈতিক অশান্তির পর থেকে চিকিৎসা করাতে আসা মানসিক রোগীর সংখ্যা এক লাফে প্রায় ১০,০০০ বেড়ে গেছে।

তারা বলছেন, ২০১৬ সালে ৪০ হাজার মানসিক রুগির চিকিৎসা দিলেও পরের বছর তা বেড়ে দাড়ায় ৫০ হাজারে। তবে কাশ্মীরে ১৯৮৯ সালে সংঘাত শুরু হওয়ার পর থেকেই ক্রমাগত বেড়ে চলছে মনোরোগীর সংখ্যা।

মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের অধ্যাপক ডা. আর্শাদ হুসেইন বিবিসি বাংলাকে বলেন, "১৯৮৯ সালে আমাদের বিভাগে ১৭০০ জনের মতো মানুষের চিকিৎসা নিয়েছিল, কিন্তু ৯০-এর দশকের শেষ দিকে সংখ্যাটা বছরে এক লক্ষেরও বেশী হয়ে যায়।

"এখন মেডিক্যাল কলেজ আর ইমহ্যানস - দুটি কেন্দ্রের বহির্বিভাগে রোজ প্রায় ৪০০ মানুষ চিকিৎসা করাতে আসছেন। এদের মধ্যে একটা বড় অংশই ট্রমার মধ্যে দিয়ে যাওয়ার কারণে মানসিক ভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। রাজনৈতিক অশান্তি, বেকারত্ব, অনিশ্চিত জীবন - এইসব কারণও যেমন আছে, তেমনই রয়েছে ভূমিকম্প বা ২০১৪ সালের ভয়াবহ বন্যার মতো ঘটনাও।"
একই হাসপাতালের অ্যাসোসিয়েট প্রফেসর ডা. ইয়াসির হাসান জানায়, ২০১৬ সালের পর থেকে তাদের কাছে চিকিৎসা করাতে আসা মানুষের সংখ্যা বেড়েছে ঠিকই - কিন্তু ঐ বছরের অশান্তি ছাড়া আরও কিছু কারণ রয়েছে তার পেছনে।

"২০১৬ সাল থেকে রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ার একটা কারণ ঐ বছরে একটানা জনজীবন স্তব্ধ হয়ে থাকার ফলে পুরনো রোগীরা চিকিৎসা করাতে আসতে পারেন নি। তাই অনেকেরই সমস্যা বেড়ে গেছে । কিন্তু এছাড়াও গত ৩০ বছর ধরে যে লাগাতার অশান্তি আর সংঘাত চলছে - তারও প্রভাব রয়েছে মনোরোগীর সংখ্যা বৃদ্ধির পেছনে।

মেডিকেল ত্রাণ সংস্থা মেডসঁ সঁ ফ্রঁতিয়ে বা এমএসএফ ২০১৫ সালে যে সমীক্ষা করেছিল তা থেকে কাশ্মীরের মানুষের মানসিক রোগের অবস্থা সম্পর্কে সেখান থেকেই জানা গেছে কী বিপুল সংখ্যক মানুষ মানসিক চাপের কথা।

এমএসএফ-এর ঐ সমীক্ষা থেকেই জানা গেছে যে ১৮ লাখ প্রাপ্তবয়স্ক কাশ্মীরী কোনও না কোনও পর্যায়ের মনোরোগের শিকার। এদের মধ্যে প্রত্যেককে গড়ে প্রায় আটটি করে ট্রমার মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে। এমন ঘটনার সাক্ষী হতে হয়েছে, যে কারণে তারা চরম মানসিক আঘাত পেয়েছেন।

সংঘাতপূর্ণ এলাকায় মানসিক রোগের বিষয়ে খ্যাতনামা বিশেষজ্ঞ এবং শ্রীনগরের সরকারি মেডিক্যাল কলেজের মনোরোগ বিভাগের প্রাক্তন প্রধান ডা. মুস্তাক মার্গূব বিবিসি বাংলাকে জানান, "২০১৬ সালের ঘটনাক্রমকে আলাদাভাবে দেখলে চলবে না। ১৯৮৯ সাল থেকেই একটানা সংঘাতপূর্ণ পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে যেতে হচ্ছে কাশ্মীরের মানুষকে। তাদের কেউ যেমন সম্প্রতি পেলেট বা ছররা বন্দুকে দৃষ্টি হারিয়েছেন বা অনেকেই হয়তো চোখের সামনেই ধ্বংস হতে দেখেছে নিজের বাড়ি, মারা যেতে দেখেছে গোটা পরিবারটাকেই।"

"এই একটানা সংঘাতের সঙ্গেই কখনও জুড়েছে ভূমিকম্প বা বন্যা, বেকারত্ব, দারিদ্র - এসব কারণ। তাই সাধারণভাবে কাশ্মীরের মানুষ ভীষণ স্ট্রেসের মধ্যে থাকেন।"

ডা. মার্গূবের কথায়, ২০১৬ সালের অশান্তির সময়ে নতুন করে মানসিক চাপের মধ্যে পড়লেন তারা। ভবিষ্যতের অনিশ্চয়তার জন্য যেসব মানসিক রোগী হয়তো ধীরে ধীরে সেরে উঠছিলেন, তারাও নতুন করে অসুস্থ হয়ে পড়তে লাগলেন।

জমতে থাকা মানসিক অশান্তিরই কি বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে ২০১৬ সালে নিরাপত্তাবাহিনীকে লক্ষ্য করে কমবয়সী কাশ্মীরিদের একের পর এক পাথর ছোঁড়ার ঘটনা? এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, "এরকম একটা সিদ্ধান্তে পৌঁছনটা ঠিক হবে না। এ নিয়ে বলাটা হয়তো রাজনৈতিক বক্তব্য হয়ে যাবে। তবে এটাও ঠিক, যখন কাউকে স্বাভাবিকভাবে মতপ্রকাশ করতে দেওয়া হয় না, কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে মত বিনিময়ের জায়গাগুলো সঙ্কুচিত হয়ে যায়, সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমগুলোর ওপরে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়, মানুষ বাড়ি থেকে বের হতে পারে না দিনের পর দিন, তখন এটাই স্বাভাবিক যে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া হবেই। এটাই মানুষের মনের স্বাভাবিক প্রবৃত্তি।"

মানসিক অশান্তিতে থাকতে থাকতে ভারত শাসিত কাশ্মীরের বহু মানুষ স্নায়ু নিয়ন্ত্রক বেনজোডায়াজিপাইন ওষুধ নিয়মিত খান । অনেকে অনিশ্চয়তা কাটাতে আসক্ত হয়ে পড়ছেন মাদকের দিকে।
সূত্র: বিবিসি বাংলা


এমএইচ/এসি  

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি