ঢাকা, শনিবার   ১৮ মে ২০২৪

বিবিসি বিশ্লেষণ

যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধে জিতবে কে

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:১২, ৮ এপ্রিল ২০১৮

আরেক দফা তীব্র হলো যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের বাণিজ্যযুদ্ধ। পরস্পরের পণ্য রফতানির ওপর পাল্টাপাল্টি কর আরোপের প্রতিযোগিতায় নামায় বিশ্ববাণিজ্যে এর বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশঙ্কা বিশেষজ্ঞদের।

যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র কানাডা, মেক্সিকোসহ ইউরোপের বিভিন্ন দেশ এরই মধ্যে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। এখন স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে, এই যুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কে জিতবে? বা কোন দেশের কতটা ক্ষতি হবে? এ বিষয়ে পর্যবেক্ষকরাও নানা ধরনের হিসাব-নিকাশ কষছেন।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিযোগ করছেন, চীনের কাছে বাজার খুলে দিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ব্যাপক ক্ষতির মধ্যে পড়েছে। ট্রাম প্রশাসন হিসাব কষে দেখিয়েছে, গত এক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি প্রায় ৮০ হাজার কোটি ডলারে পৌঁছেছে। এই ঘাটতির প্রধান কারণ, চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে ক্রমবর্ধমান ভারসাম্যহীনতা।  ট্রাম্প বলছেন, এর জেরে তার দেশের শত শত শিল্প-কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। সেইসঙ্গে চাকরি হারিয়েছে লাখ লাখ মানুষ।

শুধু অভিযোগ জানানোর মধ্যেই সীমিত থাকেননি ট্রাম্প। গত মাসের শেষ দিকে অ্যালুমিনিয়াম, ইস্পাতসহ শত শত চীনা পণ্যের ওপর তিনি শুল্ক্ক আরোপের ঘোষণা দেন। ওইসব পণ্যের আমদানিমূল্য প্রায় ৬ হাজার কোটি ডলার। এর জবাবে গত সোমবার চীনও পাল্টা জবাব দেয়। যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানি করা মদ, শূকরের মাংস, ফলসহ ১০৬টি পণ্যের ওপর তিনশ` কোটি ডলারের আমদানি শুল্ক্ক বসিয়েছে চীন। চীনের এ পাল্টা পদক্ষেপকে `অন্যায্য` অ্যাখ্যা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

গত বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে ট্রাম্প বলেন, নিজেদের ভুল না শুধরে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক ও কারিগরদের ক্ষতি করার পথ বেছে নিয়েছে চীন। তাই চীনের এ অন্যায্য পদক্ষেপের পর আমি দেশটির ওপর আরও ১০ হাজার ডলার শুল্ক্ক আরোপের বিষয়টি বিবেচনা করতে বলেছি। জানা গেছে, এটা কার্যকর হলে চীনের বিরুদ্ধে আরোপিত শুল্ক্কের পরিমাণ ১৬ হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াবে।

চীনও ফের পাল্টা হুঁশিয়ারি দিয়েছে। নিজের স্বার্থ সুরক্ষায় মূল্য যত চড়াই হোক, তা দিতে প্রস্তুত চীন। চীনের বাণিজ্যমন্ত্রী গাও ফেং বলেছেন, আমরা বাণিজ্যযুদ্ধ চাই না। কিন্তু বাণিজ্যযুদ্ধকে আমরা ভয়ও পাই না। তাই যুক্তরাষ্ট্র যদি একতরফাভাবে তাদের রক্ষণশীল পদক্ষেপ বাণিজ্যের ঘাড়ে চাপাতে থাকে, তাহলে চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিতে দ্বিধা করবে না বলে জানান গাও ফেং।

এমন অবস্থায় বিশ্নেষকরা মনে করেন, বিশ্ববাজারের জন্য এ যুদ্ধ খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তবে এমন আশঙ্কাকে একদমই পাত্তা না দিয়ে ট্রাম্প বলেছেন, বাণিজ্যযুদ্ধ ভালো এবং যুক্তরাষ্ট্রের এতে কোনো ক্ষতি হবে না, বরং লাভ হবে।

বিশ্নেষকরা অবশ্য মনে করছেন, এর ফলে ইস্পাত খাতে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান ততটা বাড়বে না। কারণ, অতীতে বহুবার ইস্পাত শিল্পকে এভাবে সুরক্ষা দেওয়ার চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। এর কারণ প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে ইস্পাত শিল্পে শ্রমিকের চাহিদা দিন দিন কমছে। এছাড়া নেতিবাচক প্রভাব পড়বে ইস্পাতনির্ভর শিল্পে। খুচরা বিক্রেতাদের সমিতি অভিযোগ করেছে, ট্রাম্প আসলে যুক্তরাষ্ট্রের সাধারণ মানুষের ওপরই কর বসাচ্ছেন।

বিশ্লেষকরা জানাচ্ছেন, এ বাণিজ্যযুদ্ধের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হবে মিত্ররা। ফলে তারাও ট্রাম্পের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা নেবে। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্র সবচেয়ে বেশি ইস্পাত আমদানি করে কানাডা থেকে। তারপর ইউরোপ, দক্ষিণ কোরিয়া এবং মেক্সিকো থেকে। এসব দেশ যুক্তরাষ্ট্রের ঘনিষ্ঠ রাজনৈতিক এবং সামরিক মিত্র। ফলে ইস্পাতের ওপর শুল্ক্ক বসালে এরা ক্ষেপে যাবে।

শুধু তাই নয় এতে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরা। কারণ যুক্তরাষ্ট্রের কৃষিপণ্যের বড় গ্রাহক চীন। বেইজিংয়ের শুল্ক্ক আরোপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষকরাই সরাসরি ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

বিশ্লেষকরা আরও জানাচ্ছেন, এর পাল্টা ব্যবস্থা নেবে চীনও। কারণ চীনের হাতে পাল্টা অস্ত্র আছে সেটাও ট্রাম্পকে ভুললে চলবে না।

সূত্র: বিবিসি

একে//


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি