ঢাকা, সোমবার   ২৮ এপ্রিল ২০২৫

মারা গেলেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী জিনা টারজেল 

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৮:২৪, ৯ জুন ২০১৮

Ekushey Television Ltd.

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সাক্ষী এবং জার্মান নাজি বাহিনীর নির্যাতনের শিকার জিনা টারজেল মারা গেছেন। ৯৫ বছর বয়সে মারা যান জিনা টারজেল।

জিনা টারজেলকে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের “হলোকাস্ট সারভাইভার” বা “সর্বশক্তিমান জীবিত” নামে ডাকা হতো। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় জার্মান বাহিনীর চারটি নির্যাতন ক্যাম্পে বন্দী হিসেবে ছিলেন তিনি। এমন একটি বন্দী ক্যাম্পে এনা ফ্রাঙ্কের নার্স হিসেবেও কাজ করেছেন তিনি।    

জিনা টারজেলের আরেকটি নাম ছিল ‘ব্রাইড অফ বেলসেন’। নির্যাতন ক্যাম্প থেকে মুক্তি পাওয়ার পর ব্রিটিশ সেনা নরম্যান টারজেলকে বিয়ে করেন জিনা। তার বিয়ে নিয়েও একটি মজার ঘটনা আছে। ব্রিটিশ সেনারা বিমান থেকে যে প্যারাসুট নিয়ে মাটিতে অবতরণ করতেন, সেই প্যারাসুট দিয়ে তৈরি করা হয়েছিল তার বিয়ের পোষাক। পোষকটি এখন লন্ডনের ইম্পেরিয়াল যুদ্ধ জাদুঘরে সংরক্ষিত আছে।    

১৯২৩ সালে পোল্যান্ডের ক্রাকো’তে জন্ম হয়েছিলেন জিনা টারজেলের। নয় ভাই বোনের মধ্যে সবথেকে ছোট ছিলেন জিনা ১৯৩৯ সালে জার্মান বাহিনীর পোল্যান্ড আক্রমণে পরিবারের বেশিরভাগ সদস্যদের হারিয়েছিলেন তিনি। সেসময় জিনার বয়স ছিল ১৬ বছর।

জার্মান বাহিনীর হাতে বন্দী হওয়ার পর জিনা তার মায়ের সাথে চারটি নির্যাতন ক্যাম্পে বন্দী ছিলেন। প্রথমে তাদেরকে রাখা হয় প্লাসজো লেবার ক্যাম্পে। সেখান থেকে ১৯৪৪ সালে নেওয়া হয় অসউইচ-বিরকেনাউ বন্দী ক্যাম্পে। ১৯৪৫ সালে তাদের ঠাই হয় বুচেনয়াল্ড কনসেনট্রেশন ক্যাম্পে। আর সবশেষ বার্জেন-বেলসেন ক্যাম্পে ছিলেন জিনা। এই ক্যাম্প থেকেই ব্রিটিশ সেনাবাহিনীর একটি দল ১৯৪৫ সালের ১৫ এপ্রিল তাদেরকে মুক্ত করেন। এই দলের একজন সদস্য ছিলেন পরবর্তীতে তার স্বামী হওয়া নরম্যান টারজেল।

মুক্তি পাওয়ার পর একটি হাসপাতালে নার্সের কাজ করতেন জিনা। সেখানে তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ঘটনাবহুল ডায়েরী ‘এনা’স ডায়েরি’ এর রচয়িতা এনা ফ্রাংকের চিকিতসা করেন। সেই অভিজ্ঞতার বর্ণনা দিয়ে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে জিনা বলেছিলেন, “আমি তার (এনা ফ্রাংক) মুখ পরিষ্কার করে দিয়েছিলাম, পান করার জন্য পানি দিয়েছিলাম আর আমি এখনও তার চেহারা, চুল এমনকি সে দেখতে কেমন ছিল তাও মনে করতে পারি”।

জিনা টারজেল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার তার অভিজ্ঞতাগুলো একটি বইয়ে লিখে গেছেন। বইটির নাম “আই লাইট এ ক্যান্ডেল”।

জিনা টারজেলের মৃত্যুতে দুঃখ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছে দ্য হলোকাস্ট এডুকেশনাল ট্রাস্ট। বিবৃতিতে বলা হয়, “জিনা নিরসলসভাবে তার লেখার মাধ্যমে চেষ্টা করে গেছেন যেন পৃথিবীবাসী সেই সময়কার বিভীষিকাময় গণহত্যার কথা না ভোলে”।

ট্রাস্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্যারেন পোলক বলেন, “আমাদের পরিচিত নারীদের মধ্যে সবথেকে সুন্দরী, মার্জিত আর উদার মহিলা ছিলেন জিনা। তার শক্তি, সংকল্প এবং দৃঢতা ছিল অলঙ্ঘনীয়। আর তার শক্তিশালী এবং বিচক্ষণ কথাগুলো ছিল অনুপ্রেরণাদায়ী”।

তিনি আরও বলেন, “একটি উজ্জ্বল আলো আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেলেন যা কখনই প্রতিস্থাপিত হবে না”।

সূত্রঃ বিবিসি

//এস এইচ এস//এসি    

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি