ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ১০ জুলাই ২০২৫

রক্তে রঞ্জিত শ্রীলঙ্কার উৎসব

প্রকাশিত : ১৮:০৬, ২২ এপ্রিল ২০১৯ | আপডেট: ১৮:৩৩, ২২ এপ্রিল ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

খ্রিষ্টধর্মে বিশ্বাসীদের জন্য খুবই আনন্দের ও তাৎপর্যপূর্ণ দিন ‘ইস্টার সানডে’। সে উপলক্ষে শৃলঙ্কার গির্জায় সমাগম ঘটেছিল বহু মানুষের। অথচ পবিত্র এই দিনটি রক্তাক্ত হলো সহিংসতার হিংস্র থাবায়। তিনটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে একাধিক বোমা হামলায় ২৯০ জন নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। চাপা উত্তেজনায় কেটেছে প্রতিটি মুহূর্ত, উদ্ধার হয়েছে একের পর এক লাশ। বিশ্বজুড়ে বয়ে গেছে নিন্দার ঝড়, আক্রান্ত শ্রীলঙ্কার প্রতি সহমর্মিতা জ্ঞাপন করেছে পুরো পৃথিবী।

সর্বশেষ পরিস্থিতি
একের পর এক ভয়াবহ বোমা হামলায় সন্দেহভাজন হিসেবে সাতজনকে গ্রেপ্তার করেছে শ্রীলঙ্কার পুলিশ। শেষ খবর অনুযায়ী এ ঘটনায় ২৯০ জন নিহত ও চার শতাধিক মানুষ আহত হয়েছেন। হামলার তদন্তকাজের সুবিধার্থে আজ সন্ধ্যা ছয়টা থেকে কারফিউ জারি করেছে দেশটির সরকার। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের খবরে বলা হয়েছে, দেশটির প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনে জানিয়েছেন, আগামীকাল সোমবার সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত এই কারফিউ জারি থাকবে।

হামলার সূত্রপাত
স্থানীয় সময় সকাল ৮টা ৪৫ মিনিটে রাজধানী কলম্বো থেকে ২০ মাইল উত্তরের শহর নেগোম্বোতে সেন্ট সেবাস্তিয়ান চার্চে প্রথম হামলাটি চালানো হয়। এরপর একে একে আরও দুটি গির্জা ও তিনটি হোটেলে পালাক্রমে বোমা হামলা চালানো হয়। রক্তাক্ত গির্জার ছবি মুহূর্তেই ছড়িয়ে পড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে। আটটি হামলার মধ্যে দুটি হামলা আত্মঘাতী ছিল বলেও জানা গেছে। বিস্ফোরণের ধরন ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে এখনো নিশ্চিত নন দেশটির কর্মকর্তারা। তবে ইস্টার সানডের আয়োজনকে কেন্দ্র করে এই হামলা চালানো হয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছেন তাঁরা। নিহত ব্যক্তিদের মধ্যে ৩৫ জন বিদেশি নাগরিক ছিলেন বলেও জানিয়েছে দেশটির পুলিশ।

নৃশংস এই হামলার পর দেশবাসীকে শান্ত থাকার অনুরোধ জানিয়েছেন শ্রীলঙ্কার প্রেসিডেন্ট মাইথ্রিপালা সিরিসেনা। তদন্তকাজে সহায়তা করার জন্যও দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। ঘটনার পরপরই জরুরি সভা ডেকেছেন প্রধানমন্ত্রী রনিল বিক্রমাসিংহে। প্রতিরক্ষামন্ত্রী রুয়ান বিজয়াবর্ধনে হুমকি দিয়েছেন, দেশে কোনো ধরনের উগ্রবাদী দলের অস্তিত্ব থাকলে তাদের কঠোর হাতে দমন করা হবে।

বিশ্বনেতাদের নিন্দা
বর্বরোচিত এই হামলার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে নিন্দা জানিয়েছেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বিশ্বের অনেক প্রভাবশালী নেতা। শ্রীলঙ্কার পক্ষে সহমর্মিতা জানিয়ে বার্তা দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প, জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী থেরেসা মে, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি, নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জাসিন্ডা আরডার্নসহ আরও অনেকে।

শ্রীলঙ্কার সাম্প্রতিক ইতিহাস
স্বাধীন দেশের জন্য ২৬ বছর লড়াই করার পর তামিল টাইগারদের পরাজয়ের মধ্য দিয়ে ২০০৯ সালে শেষ হয় শ্রীলঙ্কার গৃহযুদ্ধ। গৃহযুদ্ধ শেষ হওয়ার পর থেকে শ্রীলঙ্কায় বিচ্ছিন্ন কিছু সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সংখ্যাগরিষ্ঠ বৌদ্ধধর্মাবলম্বী সিংহল সম্প্রদায়ের আক্রমণের শিকার হয়েছে মসজিদ। এর জের ধরে ২০১৮ সালের মার্চে দেশটিতে জরুরি অবস্থা জারি করা হয়েছিল। শ্রীলঙ্কার মোট জনসংখ্যার ৭০ দশমিক ২ শতাংশ বৌদ্ধ, ১২ দশমিক ৬ শতাংশ হিন্দু, ৯ দশমিক ৭ শতাংশ মুসলিম ও ৭ দশমিক ৪ শতাংশ খ্রিষ্টধর্মাবলম্বী।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি