ঢাকা, মঙ্গলবার   ১৬ এপ্রিল ২০২৪

শূন্য থেকে যেভাবে উপ-প্রধান বিচারপতি

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১৭:২৫, ৭ মে ২০২০ | আপডেট: ২০:০৩, ৭ মে ২০২০

মুদি দোকানী মোহাম্মদ মুসা ও বিচারপতি রেমন্ড জোন্ডু।

মুদি দোকানী মোহাম্মদ মুসা ও বিচারপতি রেমন্ড জোন্ডু।

ভদ্রলোকের নাম 'রেমন্ড জোন্ডু'। তিনি বর্তমানে দক্ষিণ আফ্রিকার উপ-প্রধান বিচারপতি। ক'দিন আগেই এ পদে নিয়োগের জন্য তাঁর একটি ইন্টারভিউ নেয়া হয়। সেখানে তিনি নিজের জীবনের একটি বাস্তব অভিজ্ঞতা শেয়ার করেন।

অভিজ্ঞতাটি কী?
রেমন্ড জোন্ডু যখন কলেজ শেষ করেন, তখন তাঁর পড়ালেখা বন্ধ হওয়ার অবস্থা। কারণ বাড়িতে আয়-উপার্জন করার মতো যে আর কেউ নেই। একমাত্র উপার্জনকারী মায়ের রোজগারও বছর দুয়েক আগে বন্ধ হয়ে যায়। পড়ালেখার খরচ তো দূরের কথা, খাওয়ার খরচ জোগাড় করাও যে এখন দুঃখিনী মায়ের পক্ষে সম্ভব নয়। তরুণ রেমন্ড তখন আত্মীয়-স্বজন সবার দুয়ারে দুয়ারে কড়া নাড়লেন, কিন্তু হায়! কেউ-ই সাড়া দিল না। উল্টো সবাই তাকে বললো, পড়ার চিন্তা বাদ দিয়ে কোন কাজ খুঁজে নাও। আগে ফ্যামিলি বাঁচাও। 

কিন্তু রেমন্ড জোন্ডু কারো কথায় থেমে যাওয়ার পাত্র নন। স্তব্ধ হয়ে যাওয়ার জন্য দক্ষিণ আফ্রিকার ভবিষ্যত উপ-প্রধান বিচারপতির জন্ম হয়নি। কোথাও সাহায্য না পেয়ে তিনি হাত পাতলেন স্থানীয় বাজারের এক অপরিচিত মুদি দোকানদারের কাছে। ভদ্রলোকের নাম মোহাম্মদ মুসা। তিনি একজন ভারতীয় মুসলমান।

মুদি দোকানী মোহাম্মদ মুসা অপরিচিত হলেও যুবক রেমন্ডের সমস্যা মনোযোগ দিয়ে শুনলেন। তারপর কোন যাচাই-বাছাইয়ে না গিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলেন, তুমি পড়তে চাও? তার জন্য টাকা দরকার? হ্যাঁ, আমি পড়তে চাই- চোখে অন্ধকার নিয়ে রেমন্ড উত্তর দিলেন। মুদি দোকানী বললেন, ঠিক আছে, আমি সাহায্য করবো। তবে আমি নগদ টাকা দিতে পারবো না। তোমার মাকে বলবে, তিনি যেন প্রতি মাসে একদিন আমার দোকানে এসে তাঁর যা যা লাগে সব নিয়ে যান। আমি হিসেব রাখবো, পরে তুমি দাঁড়িয়ে গেলে (প্রতিষ্ঠিত হলে) শোধ করে দেবে।

পড়ালেখা শেষ করে যেদিন রেমন্ড জোন্ডু নিজের পায়ে দাঁড়ালেন, প্রতিষ্ঠিত হলেন, সেদিন তিনি দোকানী মোহাম্মদ মুসা সাহেবের কাছে গেলেন। বললেন, আপনার ঋণ শোধ করার সামর্থ্য আমার হয়েছে, আমি কিভাবে তা শোধ করবো? বাজারের সামান্য দোকানদার তখন জগতের সেরা উত্তরটি দিলেন--
"Just do to others, what I have done to you"--- অর্থাৎ "আমি তোমার জন্য যা করেছি, তুমি অন্যদের জন্য তাই করো"। তাহলেই আমার ঋণ শোধ হবে। শেষ কথাগুলো বলার সময় ইন্টাভিউ বোর্ডেই রেমন্ড আবেগাপ্লুত হয়ে চোখের জল মুছলেন।

রেমন্ড জোন্ডু নামে পরিচিত হলেও দক্ষিণ আফ্রিকার এই বিচারপতির পুরো নাম রেমন্ড মন্যামেজেলি ম্লুঙ্গিসি "রে" জোন্ডু। জন্ম ১৯৬০ সালের ৪ মে। বিচারক জোন্ডু ইক্সোপোর সেন্ট মেরি সেমিনারি থেকে মাধ্যমিক ও উচ্চ-মাধ্যমিক শেষ করার পর জুলুল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উচ্চতর ডিগ্রি নেন। এরপর নাটাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি সম্পন্ন করেন। তিনি ১৯৮৯ সালে অ্যাটর্নি হিসাবে ভর্তি হন এবং ম্যাথে অ্যান্ড জন্ডো ইনক-এর অংশীদার হিসাবে অনুশীলন করেন।

তিনি ১৯৯৭ সালে দেশটির শ্রম আদালতের বিচারক নিযুক্ত হন এবং ১৯৯৯ সালে তিনি হাইকোর্টের ট্রান্সওয়াল প্রাদেশিক বিভাগে (পরবর্তী সময়ে উত্তর গাউটেং হাইকোর্ট, বর্তমানে গাউটেং বিভাগ) নিয়োগ পান।  ২০০০ সালে তিনি শ্রম আদালতের বিচারকদের শীর্ষ পদে আসীন হন। এ পদে তিনি দশ বছর দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১০ সালে তিনি প্রিটোরিয়া হাইকোর্টে ফিরে আসেন।

নভেম্বর ২০১১ থেকে জোন্ডু দেশটির সাংবিধানিক আদালতের ভারপ্রাপ্ত বিচারক হিসাবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০১৭ সালের জুনে, দেশটির রাষ্ট্রপতি জ্যাকব জুমা রেমন্ড জোন্ডুকে উপ-প্রধান বিচারপতি (ডেপুটি চিফ জাস্টিস) হিসেবে নিয়োগ দেন। 

এনএস/


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি