ঢাকা, বৃহস্পতিবার   ২৮ মার্চ ২০২৪

যে কারণে নোবেল পেলেন না হকিংস

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:০৫, ১৫ মার্চ ২০১৮ | আপডেট: ০০:০৭, ১৫ মার্চ ২০১৮

পদার্থ বিজ্ঞানের প্রাণ-পুরুষ বলা হত স্টিফেন হকিংসকে। কৃষ্ণবস্তুর তত্ত্ব আবিষ্কার করে অমর হয়ে আছেন তিনি। কিন্তু সেই স্টিফেন হকিংসই পেলেন না নোবেল পুরুস্কার। স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন জাগে-কেন? আসুন জেনে নিই।

নোবেল পুরস্কারের বিস্তারিত

ডিনামাইটের আবিষ্কারক আলফ্রেড বার্নহার্ড নোবেল তার জীবনের উপার্জিত অর্থ দিয়ে মানব জাতির কল্যাণে কাজ করা ব্যক্তিদের নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয়। যে ছয়টি বিষয়ে নোবেল পুরস্কার দেওয়া হয় তার মধ্যে একটি পদার্থ বিজ্ঞান। আর এই বিভাগেই পুরস্কার পেতে পারতেন সদ্য প্রয়াত স্টিফেন হকিংস।

কিন্তু আলফ্রেডের রেখে যাওয়া উইলে আরও দুইটি শর্তের কথা বলা হয়। যে তত্ত্বের জন্য নোবেল পুরস্কার দেওয়া হবে সেই তত্ত্বটিকে হতে হবে ‘বাস্তবিক বা ব্যবহারিকভাবে প্রমাণিত’। অর্থ্যাৎ সহজ ভাষায়, শুধু খাতা কলমে তত্ত্ব থাকলেই হবে না। তত্ত্বটির ব্যবহারিক নিশ্চয়তা প্রমাণিত হতে হবে। আর দ্বিতীয় শর্তটি হল এই যে, নোবেল পুরস্কার শুধু জীবিত ব্যক্তিকেই দেওয়া যাবে। মরণোত্তর নোবেল পুরস্কার দেওয়া যাবে না।

স্টিফেন হকিংস তার জীবদ্দশায় কৃষ্ণবস্তুর কণা বা ‘হকিং কণা’র উপস্থিতি প্রমাণ করে যেতে পারেননি। নোবেল না পাওয়ার এই আক্ষেপের কথা জানতেন স্টিফেন নিজেও। কয়েক বছর আগে এক সম্মেলনে বক্তৃতা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, “যদি কম ভরের কৃষ্ণগহ্বর আবিষ্কৃত হয়, তাহলেই আমি নোবেল পুরস্কার পেয়ে যাব”।  

তবে স্টিফেন হকিংস নিজেও তার তত্ত্ব প্রমাণে কাজ করেছিলেন। ২০১৬ সালের জানুয়ারিতে টাইমস ম্যাগাজিনকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জানিয়েছিলেন যে, তিনি এমনভাবে কাজ করছেন যেন কৃষ্ণগহ্বর নিয়ে তাঁর তত্ত্ব সত্য বলে প্রমাণিত হতে পারে। সফলতার খুব কাছেও চলে এসেছিলেন তিনি। এই সাক্ষাৎকারের কয়েক মাস বাদে আগস্টে নেচার সাময়িকীতে নিজের তত্ত্বের সপক্ষে একটি নিবন্ধ লেখেন। কিন্তু সেটি এখন পর্যন্ত সত্য বলে প্রমাণিত হয় নি।

তবে স্টিফেন হকিংসের তত্ত্ব প্রমাণিত করতে কাজ করেছেন আরও কয়েকজন বিজ্ঞানী।

১৯৮০ সালে কানাডার ব্রিটিশ কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক বিল আনরু হকিং কণার বিকীরণ পরীক্ষা করার একটি তত্ত্ব দেন। তিনি এমন একটি ব্যবস্থার কথা বললেন, যা দ্রুত গতিতে চলমান। ঝর্ণা বা জলপ্রপাতের বেলায় এমনটা দেখা যায়। জলপ্রপাতের একটি নির্দিষ্ট স্থানে পৌঁছালে কোনো সাঁতারুই এমন গতিতে সাঁতার কাটতে পারে না, যা জলপ্রপাতের আকর্ষণকে এড়াতে পারে। ফলে সে সাঁতারু যতই দক্ষ হোক না কেন, তাকে জলপ্রপাতের কাছে নতি স্বীকার করতেই হয়। আনরুর বক্তব্য ছিল, এটিই একটি ঘটনা দিগন্ত। কাজেই শব্দের জন্য যদি কোনো ‘ব্ল্যাকহোল’ বানানো যায়, তাহলেই হকিং বিকিরণ সেখানেও দেখা যাবে।

২০১৬ সালে এই প্রস্তাবকে কাজে লাগিয়ে স্টিফেন হকিংসের তত্ত্ব প্রমাণের খুব কাছে চলে আসেন বিজ্ঞানী স্টেইনহওয়ার। তিনি ব্ল্যাকহোলের ফোটন কণার মত এক ধরনের ফোনন কণা তৈরি করতে সক্ষম হন। তবে বিজ্ঞানীরা আজও এই পরীক্ষা প্রমাণ করতে পারেন নি। গত দেড় বছর ধরে অনেকেই নিজেদের মত চেষ্টা করলেও কেউই সফলতার মুখ দেখতে পারেনি এখনও।

স্টিফেন হকিং এর যত অর্জন

নোবেল পুরস্কার না পেলেও এক জীবনে অনেক স্বীকৃতি পেয়েছেন এই পদার্থবিজ্ঞানী। ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে গোটা একটি ভবন আছে তার নামে। এছাড়াও আছে বেশ বড়সড় এক মূর্তি। দক্ষিণ আফ্রিকার রাজধানী কেপটাউনেও তার মূর্তি আছে। এল সালভাদরের রাজধানী সান সালভাদরের বিজ্ঞান জাদুঘরটির নাম তার নামে। এর নাম স্টিফেন হকিং বিজ্ঞান জাদুঘর।

এছাড়াও ব্রিটিশ রাজ পরিবার থেকেও পেয়েছেন সম্মাননা। রাণী দ্বিতীয় এলিজাবেথ কে অর্ডার অব দ্য ব্রিটিশ এম্পায়ার এবং অর্ডার অব দ্য কম্প্যানিয়ন অনারে ভূষিত করেছেন। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাকে দিয়েছেন প্রেসিডেন্সিয়াল মেডেল অব ফ্রিডম।

এর পাশাপাশি আন্তর্জাতিক পুরস্কারের তালিক আরও লম্বা। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হল তত্ত্বীয় পদার্থবিদদের সর্বোচ্চ সম্মান আলবার্ট আইনস্টাইন পদক। সম্মানসূচক ডক্টরেট ডিগ্রি ছয়টি পেয়েছেন ছয়টি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। ১৯৭৯ সালে গণিতের লুকাসিয়ান অধ্যাপক হিসেবে স্টিফেনকে নিয়োগ দেয় কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়। একসময় এ পদে ছিলেন স্যার আইজ্যাক নিউটন। তারও আগে ১৯৭৪ সালেই রাজকীয় বিজ্ঞান সমিতির ফেলো হয়েছেন। ২০০৯ সালে আবার এই পদে যোগ দেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৫ সালে পেয়েছেন বিবিভিএ ফাউন্ডেশন ফ্রন্টিয়ার অব নলেজ অ্যাওয়ার্ড।

মূলত স্টিফেন হকিংসের তত্ত্ব প্রমাণ করার মত সক্ষমতা হয়তো এখনও পৃথিবী অর্জন করতে পারেননি। অচির ভবিষ্যতে হয়তো তার তত্ত্বের ব্যবহারিক প্রয়োগ করব আমরা। তিনি হয়ে থাকলেন কম্পিউটারের আবিষ্কারক চার্লস ব্যাবেজের মত। যার কম্পিউটার অ্যালগারিদম নিজের সময়ে প্রমাণ করে যেতে পারেননি। ব্যাবেজের মতই তাই নোবেল অধরা থাকল এই পদার্থ পণ্ডিতের।

সূত্র: ইন্ডিয়া টাইমস

//এস এইচ এস//টিকে


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি