ঢাকা, মঙ্গলবার   ০৭ মে ২০২৪

পদ্মা সেতু: ঘটনাপ্রবাহ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০৮:২০, ২৫ জুন ২০২২ | আপডেট: ০৯:০৬, ২৫ জুন ২০২২

প্রথমে আর্থিক সহায়তা দিতে বিশ্ব ব্যংকের অস্বীকৃতি এবং পরে তাদের কাছ থেকে সহায়তা নিতে বাংলাদেশের অস্বীকৃতি এমন বহু ঘটনাবহুল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আজ দৃশ্যমান বহুল প্রতীক্ষিত পদ্মাসেতু। পুরো প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন চড়াই-উৎরাইয়ের মধ্য দিয়ে গেছে বাংলাদেশ সরকার এবং দেশের মানুষ। সেতু নির্মাণকে কেন্দ্র করে বিভিন্ন মহলের চক্রান্ত, এমনকি সেতু নির্মাণে মানুষের মাথা লাগবে এমন গুজবের সাক্ষীও হয়েছে দেশের ১৬ কোটি মানুষ। 

১৯৯৮ সাল (সেতু স্বপ্নের সূচনা) 

১৯৯৮ সালে তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা প্রমত্তা পদ্মার বুকে সেতুর স্বপ্ন দেখেন এবং তা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেন। 

১৯৯৯ সাল (প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই)

পরের বছর ১৯৯৯ সালের মে মাসে পদ্মা সেতু প্রকল্পের জন্য প্রাক-সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু হয়। বলা যায়, এটাই দালিলিকভাবে পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্পের প্রথম সূত্রপাত। এ হিসাবে স্বপ্নের পদ্মা সেতু নির্মাণের যাত্রা প্রায় দুই যুগের। 

২০০৩ থেকে ২০০৫ (সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা)

জাপানের আন্তর্জাতিক সংস্থা জাইকার অর্থায়নে ২০০৩ সালের মে থেকে তৎকালীন সরকারের সময়ে পদ্মা সেতু প্রকল্পের সম্ভাব্যতা যাচাই সমীক্ষা শুরু হয়, যা শেষ হয়েছিল ২০০৫ সালে। 
প্রাক-সম্ভাব্যতা ও সম্ভাব্যতা যাচাই কেন করতে হয়, সেই কৌতূহল জাগতে পারে। বিষয়টি হলো, পদ্মা নদীতে সেতু কেন দরকার, নির্মাণে ব্যয় কত হতে পারে, কোন জায়গায় সেতু নির্মাণ করলে ব্যয় কম হবে, সেতু নির্মাণে বিনিয়োগ অর্থনৈতিকভাবে কতটা যৌক্তিক হবে, সমীক্ষায় এসব বিষয় পর্যালোচনা করা হয়। এরপর সেতু নির্মাণের বিষয়ে প্রস্তাব দেয় পরামর্শক প্রতিষ্ঠান।

এই সময়ের মধ্যে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-জাজিরা এ দুটি পথ দিয়ে সেতু নির্মাণের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করা হয়। 

দেখা যায়, মাওয়া-জাজিরা এবং পাটুরিয়া-গোয়ালন্দ এই দুই পথেই মূল সেতুর দৈর্ঘ্য দাঁড়াবে ৬ কিলোমিটারের কিছু বেশি। তবে মাওয়া প্রান্তে নদীর তীর স্থিতিশীল। এ কারণে নদীশাসনে ব্যয় কম পড়বে। 

এছাড়া পাটুরিয়ার তুলনায় মাওয়া দিয়ে সেতু নির্মাণ করা হলে যাতায়াত খরচ কমবে, পুনর্বাসনে ব্যয় কম হবে, নদীশাসন সহজ হবে এবং মাওয়া-জাজিরা দিয়ে সেতু নির্মিত হলে যানবাহন বেশি চলবে।
২০০৫ থেকে ২০০৭ (প্রথম বাজেট এবং অনুমোদন)

২০০৫ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণের প্রথম বাজেট হয়, যেখানে প্রাথমিক ব্যয় ধরা হয়েছিল ১২ হাজার কোটি টাকা। এরপর ২০০৭ সালেই চূড়ান্ত ব্যয় দশ হাজার ১৬১ কোটি টাকা অনুমোদন পাওয়া যায়।

২০০৮ সাল (প্রকল্প বাস্তবায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের উদ্যোগ)

২০০৮ সালে ক্ষমতায় এসে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেয় আওয়ামী লীগ সরকার। ২০১১ সালে প্রথম বাজেট সংশোধন করে নতুন বজেট ধরা হয় ২০ হাজার ৫০৭ কোটি টাকা।

২০১২ সাল (পদ্মা সেতুতে ঋণ দেবে না বিশ্ব ব্যাংক)

বাংলাদেশের পদ্মা নদীর উপর সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্ব ব্যাংক ১২০ কোটি ডলার ঋণ দিতে চেয়েছিল। তবে দুর্নীতির অভিযোগ এনে বিশ্ব ব্যাংক ঋণ দেবে না বলে জানিয়েছিল। যদিও বাংলাদেশ সরকার বরাবরই সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। এই পরিস্থিতিতে বিকল্প অর্থায়নের পথও খুঁজছিল সরকার।

শেষ পর্যন্ত ২০১২ সালের ২৯ জুন ঋণ সহায়তা স্থগিতের ঘোষণা দেয় বিশ্ব ব্যাংক। এরপর ২৩ জুলাই ২০১২ সালে পদ্মা সেতু নির্মাণ নিয়ে কথিত দুর্নীতির অভিযোগের কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা মন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন পদত্যাগ করেন। দুই মাস পর সেপ্টেম্বরে শর্ত সাপেক্ষে এ প্রকল্পে আবার ফেরত আসে বিশ্ব ব্যাংক। 

২০১৩ সাল (বিশ্ব ব্যাংকের ঋণ প্রত্যাখ্যান)

বিশ্ব ব্যাংক তাদের শর্ত সাপেক্ষে শেষ পর্যন্ত ঋণ দিতে রাজি হলেও ২০১৩ সালে তা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ। 

২০১৪ থেকে ২০১৫ সাল (নিজ অর্থায়নে নির্মাণ শুরু) 

২০১৪ সালের ১৭ জুন পদ্মা সেতু নির্মাণে বাংলাদেশ সরকার ও চায়না মেজর ব্রিজ কোম্পানির আনুষ্ঠানিক চুক্তি হয়। ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর পদ্মা সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

২০১৭ সাল (পদ্মায় বসে প্রথম স্প্যান)

২০১৭ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর পদ্মা সেতুর পিলারে প্রথম স্প্যান বসানো হয়। শরীয়তপুরের জাজিরা প্রান্তে ৩৭ ও ৩৮ নম্বর পিলারের ওপর সেই স্প্যান বসানো হয়। 

২০১৯ সাল (গুজব)

২০১৯ সালের মাঝামাঝি একটি কুচক্রী মহল গুজব ছড়ায়, পদ্মা সেতু নির্মাণ কাজের জন্য মানুষের মাথা লাগবে। এ সময় সাধারণ জনগণের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে এবং টালমাটাল পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে কেটে যায় প্রায় এক মাস।  

শেষ পর্যন্ত প্রকল্প পরিচালকের কার্যালয়ের পক্ষ থেকে একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে ছড়িয়ে পড়া গুজবের বিষয়ে সাধারণ মানুষকে সচেতন থাকতে বলা হয়। কঠিন এই পরিস্থিতি শক্ত হাতে সামাল দেয় বাংলাদেশ সরকার। আবারও নিজ গতিতে ফেরে সেতুর নির্মাণ কাজ। 

২০২০ সাল (দৃশ্যমান সেতু)

এক এক করে স্প্যান বসানোর মধ্যদিয়ে ২০২০ সালের ১০ ডিসেম্বর সব শেষ ৪১তম স্প্যানটি বাসানো হয়, যার মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হয় পুরো পদ্মা সেতু। সেতুতে মোট ৪২টি পিলারের ওপর ৪১টি স্প্যান বসানো হয়েছে। আর সেতুর সব শেষ সড়ক স্ল্যাব বসানো হয় ২০২১ সালের ২৩ আগস্ট। এই পুরো যাত্রায় ব্যয় হয় ৩০ হাজার ১৯৩ দশমিক ৩৯ কোটি টাকা।

সবশেষ ২০২২ সালের ২৫ জুন স্বপ্নের সেতু উদ্বোধনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়। 

এসবি/এএইচএস


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি