ভূমি অধিগ্রহণ : পুনর্বাসনে নিজস্ব নীতিমালার দাবি
প্রকাশিত : ২১:৩৮, ২৭ আগস্ট ২০১৭

ভূমি অধিগ্রহণে ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসনে নিজস্ব নীতিমালার দাবি জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। একই সঙ্গে পুনর্বাসন কার্যক্রমে যথাযথ ক্ষতিপূরণ বাড়ানোর কথাও বলেছেন তারা।
শনিবার রাজধানীর বিদ্যুৎ ভবনের বিজয় হলে বাংলাদেশ রেলওয়ের পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের (পিবিআরএলপি) উদ্যোগে ‘উন্নয়ন প্রকল্প : পুনর্বাসন পরিকল্পনা’ শীর্ষক এক কর্মশালায় বিশেষজ্ঞরা এ কথা বলেন। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কনস্ট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি) ও বাংলাদেশ রেলওয়ের সহযোগিতাতায় বেসরকারী সংস্থা ডরপ দিনব্যাপী কর্মশালার আয়োজন করে।
পিবিআরএলপি প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব প্রকৌশলী গোলাম ফখরুদ্দিন আহমেদ চৌধুরীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আমজাদ হোসেন। বিশেষ অতিথি ছিলেন সিএসসি’র প্রধান সমন্বয়ক মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদ।
ডরপ এর প্রতিষ্ঠাতা ও বাংলাদেশের প্রথম গুসি আন্তর্জাতিক শান্তি পুরস্কার বিজয়ী এএইচএম নোমান ‘পুনর্বাসন ও উন্নয়ন কার্যক্রমে এনজিও’র ভূমিকা’ উপস্থাপন ও সঞ্চালনায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন।
পুনর্বাসনে অর্থলগ্নীকারী প্রতিষ্ঠান সমূহের পুনর্বাসন নীতিমালার পরিবর্তে নিজস্ব নীতিমালা করা উচিত বলে মত প্রকাশ করেন বক্তারা।
অধ্যাপক ড. হাফিজা খাতুন বলেন, উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নের কারণে যারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, সরকার পুনর্বাসনের ব্যবস্থা না করলে খুব কর্মসংখ্যক মানুষই আছে যারা আগের অবস্থায় ফিরে যেতে পারে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই দেখা গেছে, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থসামাজিক অবস্থার অবনতি হয়েছে। সঠিকভাবে পুনর্বাসন করতে পারলে এসডিজি অর্জনও সহজ হবে।
রেলওয়ের মহাপরিচালক আমজাদ হোসেন বলেন, উন্নয়নের জন্য কারো জীবন মানের অবনতি করা যাবে না। চেস্টা করতে হবে তাদেরকে কমপক্ষে পূর্বের স্থানে যাতে থাকেই। ভূমি হারানো মানুষদের যদি আমরা সঠিকভাবে চিহ্নিত ও পুনর্বাসন করতে না পারি তাহলে তারা আরো দরিদ্র হবে। প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদানে কোনো ধরনের অনিয়ম বা দুর্নীতি গ্রহণযোগ্য হবে না।
সিএসসির প্রধান সমন্বয়ক ও হাতিরঝিল প্রকল্প খ্যাত মেজর জেনারেল আবু সাঈদ মো. মাসুদ বলেন, সমন্বিতভাবে কাজ করে পূনর্বাসন কার্যক্রমকে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহজে ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং জীবনমান উন্নয়নে সংযোগ তৈরি করার পাশাপাশি একটি দেশীয় সমন্বিত পুনর্বাসন নীতিমালা করার উপর তিনি গুরুত্বারোপ করে।
ডরপ’র সিইও এএইচএম নোমান বলেন, দারিদ্র্য বিমোচনে সরকারী প্রতিশ্রুতি ত্বরান্বিত করতে দেশজ পরিকল্পনায় পাবলিক পুওর প্রাইভেট পার্টনারশীপের (পিপিপিপি) মাধ্যমে পুনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করতে হবে। প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তদের স্বপ্ন পূরণে পদ্মা সেতু নিজের টাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঐতিহাসিক দৃড়তাকে ধারক ও বাহকের চেতনা নিয়ে আমাদের উন্নয়ন ও পুনর্বাসন পরিকল্পনাকে সমতালে এগিয়ে নিতে হবে। তাদের মধ্যে সরাসরি মালিকার অংশীদার সম্পদ হস্তান্তরের উদ্যোগ নিতে হবে। তাহলেই এসডিজি বাস্তবায়নে সমাজ ব্যবস্থায় বৈষম্যহীন পথ রচনা হবে।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আব্দুল মুকিম সরকার। আলোচনায় অংশ নেন, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শহীদুল ইসলাম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবুল কাশেম মো. ফজলুল কাদের, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আবুল কালাম আজাদ, কর্নেল নূর-ই-আলম মো. যোবায়ের সারোয়ার, কর্মশালার সার উপস্থাপন করেন রেলওয়ের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী নাজনীন আরা কেয়া, বিষয়ভিত্তিক- প্রকল্প তথ্য ও পুনর্বাসন পরিকল্পনা- প্রকল্পের চীফ রিসেটেলমেন্ট কর্মকর্তা এএম সালাহ উদ্দীন, পুনর্বাসন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন ও সমন্বয়- কর্নেল সাঈদ আহমেদ, কমিটির কার্যক্রম- উপপরিচালক (পরিবেশ) মো. শাহীদুল ইসলাম, পুনর্বাসন প্রাপ্যতা- ডরপ’র টিম লিডার মো. আফতাব উল আলম। এছাড়া দোহাজারী- কক্সবাজার প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মো. মফিজুর রহমান, আখাউড়া-লাকসাম প্রকল্পের প্রকল্প পরিচালক মোজাম্মেল হকসহ বিশিষ্টজনরা আলোচনায় অংশ নেন।
উল্লেখ্য, সিএসসির তত্ত্বাবধান ডরপ পিবিঅঅরএলপি পূনর্বাসন কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। ঢাকা হতে মাওয়া হয়ে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রথম ধাপে প্রকল্পে ৮২.৩৫ কিলোমিটার রেলপথে ক্ষতিগস্ত ৩৫৪৮ পরিবার রয়েছে। প্রকল্পটিতে ৩৫৮.৪১ হেক্টর জমি অধিগ্রহণ করা হবে। ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে কাজ চলছে। ডরপ প্রকল্প এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা জরিপসহ, জেলা প্রশাসন কর্তৃক প্রদত্ত নগদ ক্ষতিপূরণ প্রাপ্তিতে সহায়তা, ক্ষতিগ্রস্তদের পুনর্বাসন এবং দুস্থ ও দরিদ্রদের জীবিকায়ন পুনস্থাপন প্রশিক্ষণ সহায়তা প্রদান করছে। প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্তরা ১৯৮২ সালে ভূমি অধিগ্রহণ আইনের আওতায় ক্ষতিপূরণ পাবেন।
আরকে/ডব্লিউএন
আরও পড়ুন