যে পাঁচ চিন্তাভাবনা আপনাকে বুড়িয়ে দেয়
প্রকাশিত : ১৯:৩৯, ১ সেপ্টেম্বর ২০১৭

বিখ্যাত ব্রিটিশ ঔপন্যাসিক রোনাল্ড ডাহল বলেছিলেন, “যদি একজন মানুষের চিন্তাভাবনা নোংরা হয় তবে সেগুলো তার চেহারায় প্রকাশ পেতে থাকে। আর যখন সেই মানুষটির মধ্যে নোংরা ভাবনাগুলো প্রতিদিন, প্রতি সপ্তাহ, প্রতি বছর থাকে তাহলে তার চেহারার দিকে আপনি তাকাতেই পারবেন না।”
শুধু রোনাল্ড ডাহলই নন বরং প্রবীণ অনেককেই ছোটবেলায় আমরা হয়তো বলতে শুনেছি যে, গোমরা মুখে থাকলে চেহারাও বাঁকা হবে। আগে কথাগুলোকে শুধু কথার কথা মনে হলেও আধুনিক গবেষণা বলছে যে, এগুলো মোটেও ফাঁকা বুলি নয়।
একসময় আমাদের সবাইকেই বুড়িয়ে যেতে হবে। কিন্তু সবাই কিন্তু একসাথে বয়স্ক হয় না। কাউকে ৫০বছর বয়সেও যুবকের মতো লাগে আবার কাউকে ৩০ পেরোতে না পেরোতেই বুড়ো লাগে। ভালো স্বাস্থ্যের অধিকারী হতে শুধু ভালো খাবার খেলেই হবে না বরং সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে আপনাকে মানসিকভাবেও ভালো থাকতে হবে।
মূলত: আমাদের বুড়িয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করে ডিএনএ- এর টেলোমেয়ার নামক অংশটি। এটি ডিএনএ’র একদম শেষের দিকের একটি অংশ যা ডিএনএ-কে অন্য আরেকটি কোষের থেকে আলাদা করে রাখে। আমাদের যখন বয়স বৃদ্ধি পায় তখন এসব টেলোমেয়ার আকারে ছোট হয়ে যায়। এটাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। কিন্তু সাম্প্রতিক গবেষণা বলছে যে, মানসিক অবসাদগ্রস্ততা এবং নেতিবাচক চিন্তাভাবনা এসব কারণেও টেলোমেয়ারের আকার ছোট হয়ে যায়। আর যে কারণে আমাদেরকে দেখতে বয়স্ক লাগে। তাই যদি নিজের বুড়িয়ে যাওয়া চেহারা দেখতে না চান তবে এখন থেকেই এই ৫টি নেতিবাচক ভাবনা চিন্তা থেকে নিজেকে বিরত রাখুন। আসুনে জেনে নেই সেই পাঁচটি বিষয় সম্পর্কে-
সন্দেহপ্রবণতা
আমাদের চারপাশে কিছু মানুষ আছে যারা সবসময়ই সন্দেহপ্রবণ। এরা সহজে কাউকে বিশ্বাস করতে পারে না। যেমন ধরুন সন্দেহপ্রবণ কোনো ব্যক্তিকে কেউ যদি একটা ভালো কথাও বলে তিনি এটি নিয়ে সন্দেহ করা শুরু করেন। কেন ওই লোকটি তাকে ভালো বলল? নিশ্চয়ই তার কোনো বদ মতলব আছে। গবেষণা বলছে, যারা এমনটা করেন তাদেরকে তুলনামূলক কম বয়সেই বয়স্ক দেখায়। শুধু তাই নয়, সন্দেহপ্রবণ লোকদের মধ্যে হার্টের রোগ হবার লক্ষণ বেশি। তাই যদি তারুণ্যময় চেহারায় থাকতে চান তবে আজই সন্দেহপ্রবণ স্বভাব ত্যাগ করুন।
খুঁতখুঁতে স্বভাব
আরেকটি নেতিবাচক স্বভাব হল খুঁতখুঁতে স্বভাব। আমাদের আশেপাশে এমন লোক সচরাচর দেখা যায় যারা কিনা সব বিষয়েই কোন না কোনো ভুল বের করেন। এমনকি অতি খুঁতখুঁতে স্বভাবের কেউ কেউ পরিপাটি গোছানো কোনো বিষয়েও কোন না কোন ত্রুটি বের করবেই। সাম্প্রতিক একটি গবেষণায় দেখা গেছে, যারা কিনা খুঁতখুঁতে স্বভাবের তাদের ডিএনএ’র টেলোমেয়ার স্বাভাবিক মানুষদের টেলোমেয়ার থেকে আকারে ছোট। তাই সজীব থাকতে ‘গ্লাস অর্ধেক পানিতে পূর্ণ’ এমন ইতিবাচক ধারণা লালন করুন।
অতীত চিন্তা
আমরা সবাই বর্তমানে বাস করলেও অনেকেই তার পিছনের জীবনে পরে থাকেন। কোনো কারণে তারা তাদের অতীত জীবন থেকে বের হয়ে আসতে পারেন না। অতীতের খারাপ কোনো স্মৃতি নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা করা এবং নিজেকে দোষারোপ করা আপনার ডিএনএ’র টেলোমেয়ারের আকার ছোট করে দিতে পারে। তাই ভালো থাকতে হলে অতীত চিন্তা ভাবনাগুলো ঝেরে ফেলে দিন।
নিজের সত্তাকে দমিয়ে রাখা
ফলাফলশূন্য অতীত নিয়ে বেশি চিন্তা ভাবনা যেমন খারাপ তেমনি নিজের মনের ইতিবাচক চিন্তাভাবনাগুলোকে দমিয়ে রাখাও স্বাস্থ্যের জন্য খারাপ। কোনো একটি অনাকাংখিত বিষয় মোকাবেলা না করে যারা এড়িয়ে চলেন তাদের মধ্যে বুড়িয়ে যাবার প্রবণতা বেশি। জেন মেডিটেশন পদ্ধতির উপর সমীক্ষা চালিয়ে বিশেষজ্ঞরা দেখেন যে, যারা এমন মেডিটেশন করেন তাদের টেলোমেয়ারের আকার যারা মেডিটেশন করেন না তাদের থেকে বেশি। তাই বেশিদিন নিজের তরুণ ভাব ধরে রাখতে এখন থেকে মেডিটেশন করতে পারেন। বিশেষজ্ঞরা এমনও পরামর্শ দেন যে, আমাদের উচিত নিজেদের আবেগকে লুকিয়ে না রাখা। বরং একে বিকশিত করা।
বিক্ষিপ্ত চিন্তাভাবনা
আমাদের চিন্তাভাবনা হওয়া উচিত স্থির এবং নির্দিষ্ট। কিন্তু যাদের চিন্তাভাবনা বিক্ষিপ্ত তাদের জন্য আছে দুঃসংবাদ। বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে যারা চিন্তা করেন তাদের বুড়িয়ে যাবার প্রবণতা অনেক বেশি। ২৩৯জন নারীর ওপর এক সমীক্ষা চালিয়ে দেখা গেছে যাদের চিন্তাভাবনা যত বেশি বিক্ষিপ্ত তাদের ডিএনএ’র টেলোমেয়ারের আকার তত ছোট। তাই সব বিষয়কে বাস্তবে রেখে স্থির এবং নির্দিষ্টভাবে চিন্তা করতে হবে।
আমাদের দৃষ্টিভঙ্গি বদলানো হয়তো অনেক কঠিন। তবে কথায় বলে, দৃষ্টিভঙ্গি বদলে গেলে জীবন বদলে যায়। তাই আপনার প্রতিদিনকার চিন্তাভাবনাগুলো ভালো ভালো বিষয় দিয়ে সাজান। নেতিবাচক চিন্তাভাবনা ঝেরে ফেলে দিয়ে ইতিবাচক চিন্তা ভাবনা করুন। গবেষকেরা মেডিটেশন এবং নিজস্ব সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতি জোর দিয়ে থাকেন। তাই দীর্ঘদিন তরুণ থাকতে ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে চলুন। কেননা রোনাল্ড ডাহল বলে গেছেন, “ যে মানুষটির চিন্তাভাবনা সুন্দর তিনি দেখতে কুৎসিত হতে পারেন না। আপনার নাক বোঁচা হতে পারে, বাকা মুখ কিংবা লম্বা দাঁত থাকতে পারে কিন্তু আপনার দৃষ্টিভঙ্গি এবং চিন্তাভাবনা যদি সুন্দর হয় তা আপনার চেহারায় প্রতিফলিত হবে এবং আপনাকে সবসময় সুন্দর লাগবে।”
সূত্র : দ্য হেলথ সাইট।
আরও পড়ুন