ঢাকা, বুধবার   ০৯ জুলাই ২০২৫

শারদীয় দুর্গাপূজা শুরু

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ২১:৩৬, ২৫ সেপ্টেম্বর ২০১৭ | আপডেট: ০৯:৪৯, ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৭

Ekushey Television Ltd.

ষষ্ঠী পূজার মধ্যদিয়ে হিন্দু সম্প্রদায়ের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা আজ মঙ্গলবার শুরু হয়েছে। বিশুদ্ধ সিদ্ধান্ত পঞ্জিকা মতে ৩০ সেপ্টেম্বর শনিবার (পূজা আরম্ভ সকাল ৭টা ৩০ মিনিট এবং পূজা সমাপন ও দর্পণ বিসর্জন সকাল ৯টা ৩১ মিনিটের মধ্যে) বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে পাঁচদিনের এ উৎসব। এর আগে সোমবার সায়ংকালে দেবীর বোধন অনুষ্ঠিত হয়েছে।

আজ সকাল ৬টা ৩০ মিনিটে কল্পারম্ভ এবং বিকাল ৪টায় বোধন আমন্ত্রণ ও অধিবাসের মধ্যদিয়ে উৎসবের প্রথম দিন ষষ্ঠী পূজা সম্পন্ন হবে। সকাল থেকেই চন্ডিপাঠে মুখর সব মন্ডপ এলাকা। ২৭ সেপ্টেম্বর মহাসপ্তমী, ২৮ সেপ্টেম্বর মহাঅষ্টমী ও কুমারী পূজা, ২৯ সেপ্টেম্বর মহানবমী বিহিত পূজা এবং বিজয়া দশমী ও দর্পণ বিসর্জন।

রামকৃষ্ণ মঠের অধ্যক্ষ স্বামী ধ্রুবেশানন্দ জানান, সনাতন বিশ্বাস ও বিশুদ্ধ পঞ্জিকা মতে, জগতের মঙ্গল কামনায় এবার দেবীর আগমন নৌকায় চড়ে এবং বিদায় নেবেন ঘোড়ায় চড়ে।

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশের হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের শুভেচ্ছা জানিয়েছেন।

এদিকে বাংলাদেশ রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে এক ভয়াবহ অমানবিক সমস্যার সম্মুখীন হওয়ায় দুর্গাপূজায় উৎসবের খরচ বাঁচিয়ে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সহায়তা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ। এই সিদ্ধান্তের কথা দেশের পূজা কমিটিগুলোকে জানিয়ে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন পরিষদ নেতৃবৃন্দ।

দুর্গা শব্দের অর্থ হলো আবদ্ধ স্থান। যা কিছু দুঃখ-কষ্ট মানুষকে আবদ্ধ করে, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ, শোক, জ্বালা, যন্ত্রণা এসব থেকে তিনি ভক্তকে রক্ষা করেন। শাস্ত্রকাররা দুর্গার নামে অন্য একটি অর্থ করেছেন। দুঃখের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাঁকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন।

উমা থেকে পার্বতি। তারপর পার্বতি থেকে দুর্গা। এই নামেই তিনি বেশি পরিচিত। ব্রহ্মবৈবর্ত পুরানে আছে তিনি গিরিরাজ হিমালয়ের কণ্যা ও পর্বতের অধিষ্ঠাত্রী দেবী, তাই তিনি পার্বতি। পরের অধ্যায়ে তিনি হয়ে উঠেন দানব দলনী দশভুজা। আর তখনিই তার নাম হয় দুর্গা।

দুর্গাপূজার সঠিক সময় হলো বসন্তকাল কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ এবং বৈশ্য সমাধি বসন্তকাল পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবিকে অসময়ে জাগ্রত করে পূজা করেন। সেই থেকে অকাল বোধন হওয়া সত্যেও শরৎ কালে দুর্গাপূজা প্রচলিত হয়ে যায়।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তাপস কুমার পাল জানান, সারাদেশে এবার পূজোর সংখ্যা ৩০ হাজার ৭৭টি। গত বছর এ সংখ্যা ছিল ২৯ হাজার ৩৯৫ টি। গতবারের চেয়েও বেশি ৬৮২টি মন্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হচ্ছে। রাজধানী ঢাকায় এবার পূজা হচ্ছে ২৩১টি, গত বছর এই সংখ্যা ছিল ২২৯। এ বছর দুটি বেড়েছে। সবচাইতে বেশি পূজা হচ্ছে চট্টগ্রামে, ১হাজার ৭শ ৬৭টি। এর পরে দিনাজপুরে ১ হাজার ২শ ৪২। গোপালগঞ্জে পূজা হচ্ছে ১ হাজার ১শ ৭৫টি।

এদিকে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামন্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, বিজিবি, র‌্যাবসহ অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ ও র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে। এর আগে মহালয়ায়ার একটি অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, গত বছরের মত এবারও সারাদেশে শান্তিপূর্ণ ভাবে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় সার্বিক নিরাপত্তা ব্যাবস্থা জোরদার থাকবে।

এর আগে পূজা উদযাপন পরিষদের এক সভায় প্রত্যেক জেলা কমিটি ও মহানগর কমিটিকে শারদীয় দুর্গোৎসব নির্বিঘ্নে সম্পন্ন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন নির্দেশনাও প্রদান করা হয়।

নির্দেশনায় প্রতিটি পূজা মন্ডপে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা বেষ্টনি নির্মাণ, পূজামন্ডপে নারী ও পুরুষের আগমন এবং নির্গামন পথ পৃথক, পরিচয় কার্ডধারী নিজস্ব স্বেচ্ছাসেবক দিয়ে ২৪ ঘন্টা তদারকী/পাহারার ব্যবস্থা করার কথা বলা হয় ।

এছাড়াও কোনরকম আতশবাজি ও পটকা ফোটানো থেকে বিরতি থাকা এবং ৩০ সেপ্টেম্বর রাত ১০ টার মধ্যে প্রতিমা বিসর্জন সম্পন্ন এবং ভক্তিমূলক সংগীত ব্যতীত অন্য সংগীত বাজানো থেকে বিরত থাকার নির্দেশনাও দেওয়া হয় ।

ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ খোলা হয়েছে। রাজধানীতে কেন্দ্রীয় পূজা উৎসব হিসেবে পরিচিত ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির মন্ডপে পূজার পাশাপাশি অঞ্জলী মহাপ্রসাদ বিতরণ এবং সন্ধ্যায় ভোগ আরতির আয়োজন করা হয়েছে।

রাজধানীতে রামকৃষ্ণ মিশন ও মঠ পূজামন্ডপ, রমনা কালীমন্দির ও আনন্দময়ী আশ্রম, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, বরোদেশ্বরী কালীমাতা মন্দির ও শ্মশান, সিদ্ধেশ্বরী কালিমাতা, ভোলানাথ মন্দির আশ্রম, জগন্নাথ হল, ঋষিপাড়া গৌতম মন্দির, গুলশান বনানী সার্বজনীন পূজা পরিষদ মন্ডপ, বাসাবো বালুর মাঠ, শাখারী বাজারের পানিটোলা মন্দিরসহ অন্যান্য মন্ডপে দুর্গোৎসবের ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ, মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটি, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্টান ঐক্য পরিষদের নেতৃবৃন্দ হিন্দু সম্প্রদায়সহ ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে দেশের সকল নাগরিককে শুভেচ্ছা জানিয়েছেন। সূত্র : বাসস।

ডব্লিউএন


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি