নড়াইলে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতায় হাজারও মানুষের মিলনমেলা
প্রকাশিত : ২৩:০৮, ৮ সেপ্টেম্বর ২০১৮

নড়াইলে ‘এস এম সুলতান প্রাণ আপ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। বরেণ্য চিত্রশিল্পী এস এম সুলতানের ৯৪তম জন্মবার্ষিক উপলক্ষে এ নৌকাবাইচের আয়োজন করা হয়।
শনিবার (৮ সেপ্টেম্বর) বিকেলে চিত্রা নদীর শেখ রাসেল সেতু এলাকা থেকে এস এম সুলতান সেতু পর্যন্ত প্রায় চার কিলোমিটার জুড়ে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
জেলা প্রশাসন ও এসএম সুলতান ফাউন্ডেশন আয়োজনে এবং প্রাণ আপের সহযোগিতায় নৌকা বাইচ প্রতিযোগিতার উদ্বোধন করেন যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন শিকদার।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন, জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান সোহরাব হোসেন বিশ্বাস, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম, সুলতান ফাউন্ডেশনের সদস্য সচিব আশিকুর রহমান মিকু প্রমুখ। নৌকাবাইচকে কেন্দ্র করে চিত্রা নদীর দু’পাড়ে সৃষ্টি হয় আনন্দ-উৎসব।
বৈঠারটান, ঢাক-ঢোলের শব্দ ও কাঁসা-পিতলের ঝংকারে চিরচেনা চিত্রার রূপ যেন হঠাৎ বদলে গিয়েছিল। মাঝি মাল্লাদের ‘হেইয়্যা’ ‘হেইয়্যা’... হর্ষধ্বনির আওয়াজ ছিল আরও বেশি ছন্দময়। নৌকা বাইচে নারীদের চারটি এবং পুরুষদের ১৮টি নৌকা অংশগ্রহণ করে। প্রতিযোগিতা শেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার দেওয়া হয়।
নড়াইলের চিত্রা নদীতে নৌকাবাইচ শুরু হলেও সকাল থেকেই বিভিন্ন পেশার মানুষ নদীর দু’পাড়ে ভিড় করেন। বিকেলে নৌকাবাইচ শুরুর আগেই চিত্রা নদীর দুইপাড়, বাসাবাড়ি ও রূপগঞ্জ বাজারের বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের ছাদসহ গাছে গাছে লোকে লোকারণ্য হয়ে যায়। নদীতে নৌকা, ট্রলার, স্পিডবোটে করে বিভিন্ন বয়সের হাজারও মানুষ নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা উপভোগ করেন। এর আগে চিত্রা নদীতে সাঁতার প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।
নৌকাবাইচ উপলক্ষে চিত্রা নদীর পাড়ে, বাঁধাঘাটে এবং বিভিন্নস্থানে মিষ্টিসহ বিভিন্ন পণ্যের পসরা বসেছিল। সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে প্রতিযোগিতা শেষ করতে পেরে খুশি আয়োজকরা।
পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন পিপিএম বলেন, হাজার হাজার মানুষের অংশগ্রহণে নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বিশেষ করে নারী ও শিশুদের উপস্থিতি বেশি দেখা গেছে। সুষ্ঠু-সুন্দরভাবে নৌকাবাইচ সম্পন্ন করা লক্ষে পুলিশের পক্ষ থেকে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়।
এদিকে, নড়াইলের সুলতান মঞ্চ চত্বরে চারদিনব্যাপী ‘সুলতান উৎসব’ শনিবার শেষ হয়েছে। উৎসবে চিত্রপ্রদর্শনী, শিশুদের চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতাসহ আলোচনা সভা এবং সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এস এম সুলতান শিশু চারু ও কারুকলা ফাউন্ডেশন এবং বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের আয়োজনে এবং আরএফএল পাইপ অ্যান্ড ফিটিংস, রেইনবো পেইন্টস ও রানার অটোর সহযোগিতায় সুলতান উৎসব অনুষ্ঠিত হয়েছে।
এসএম সুলতান ১৯২৪ সালের ১০ আগস্ট নড়াইলের মাছিমদিয়ায় বাবা মেছের আলী ও মা মাজু বিবির ঘরে জন্মগ্রহণ করেন। অসুস্থ অবস্থায় ১৯৯৪ সালের ১০ অক্টোবর যশোর সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার পর নড়াইলে তাকে চিরনিদ্রায় শায়িত করা হয়। চিত্রশিল্পের মূল্যায়ন হিসেবে ১৯৮২ সালে ‘একুশে পদক’ ১৯৮৪ সালে ‘রেসিডেন্ট আর্টিস্ট’ ১৯৮৬ সালে বাংলাদেশ চারু শিল্পী সংসদ সম্মাননা’ এবং ১৯৯৩ সালে ‘স্বাধীনতা পদক’ পেয়েছেন।
এছাড়াও ক্যামব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ‘ম্যান অব দ্য ইয়ার’, নিউইয়র্কের বায়োগ্রাফিক্যাল সেন্টার থেকে ‘ম্যান অব অ্যাচিভমেন্ট’ এবং এশিয়া উইক পত্রিকা থেকে ‘ম্যান অব এশিয়া’ পুরস্কার লাভ করেন।
কেআই/ এমজে
আরও পড়ুন