ঢাকা, শনিবার   ১৬ আগস্ট ২০২৫

খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনে যেসব রোগ থেকে মুক্তি সম্ভব

প্রকাশিত : ১৫:৫৯, ৮ ফেব্রুয়ারি ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

আমরা আমাদের জীবন যাত্রায় যদি অস্বাস্থ্যকর খাদ্য অভ্যাস গুলো নিয়ন্ত্রণ করতে পারি তাহলে আমরা অনেক রোগ থেকেই বাঁচতে পারবো। জীবন বাচাঁতে খাদ্যের প্রয়োজন তবে এমন অনেক খাবার আছে যা জীবন বাচাঁনোর পরিবর্তে জীবন ধীরে ধীরে কেড়ে নিতে পারে।

অনেক সময় এই অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো আমরা না জেনে বুঝেই খেয়ে থাকি। আবার অনেক সময় এই অস্বাস্থ্যকর খাবারগুলো এত আকর্ষণীয় ও মুখরোচক থাকে যে লোভ সামলানো দায়।

অস্বাস্থ্যকর খাবার তালিকায় প্রথমেই আসে তেলে ভাজা খাবারের কথা। তেলে ভাজা খাবারের মধ্যে আছে - চিকেন ফ্রাই, ফ্রেন্স ফ্রাই, ফুচকা,সিঙ্গারা,পুরি ইত্যাদি। যা খুবই মুখরোচক এবং আকর্ষণীয়। ছোট বড় সবার কছেই পছন্দের খাবারএগুলো। কিন্তু এ খাবার গুলো আমাদের শরীরের নানাধরণের মারাত্মক ক্ষতি করে যা আমরা কয়েক বছর পর বুঝতে পারি।

এ সমস্ত তেলে ভাজা খাবার এ থাকে ট্রান্সফেট যা আমাদেরই শরীরের ফ্রি রেডিকেলস্ এর পরিমাণ বাড়িয়ে দিয়ে আমার দেহে কোষ গুলো ক্ষতি সাধন করে। দেহে ক্ষতিকর পদার্থের পরিমাণ বেড়ে যায় এছাড়া রক্তের খারাপ চর্বির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় আর ভাল চর্বির পরিমান কমিয়ে দেয় ফলে নানাধরণের সমস্যা তৈরি করে যেমন - উচ্চ রক্তচাপ, হৃদরোগ, গ্যসট্রিক সমস্যা ইত্যাদি । এসমস্ত তেলে ভাজা খাবার গুলো হয় উচ্চ ক্যালরি সম্পন্ন ফলে এসব তেলে ভাজা খাবার প্রতিদিন খেতে থাকলে দেহে চর্বি জমে ওজন বৃদ্ধি সহ নানা ধরনের রোগ যেমন- টাইপ -২ ডায়াবেটিস দেখা দেয়।

আজকার প্রায় সাব স্কুল ও কলেজগামী ছেলেমেয়েরা ফাস্টফুড এবং জাংক ফুডে এ আসক্ত। এসমস্ত খাবার উচ্চ ক্যালরি,অতিরিক্ত চর্বি, চিনি ও মিষ্টি জাতীয় যা খেলে শুধু মাত্র শরীরের ক্যালরি যোগ হবে আর কোন পুষ্টি এই ধরনের খাবার থেকে পাবে না। ফলে দেখা যায় এসমস্ত ফাস্টফুডে বা জাংক ফুডে আসক্ত ছেলেমেয়েদের রক্তে চর্বির পরিমান বেড়ে যায়। সেই সাথে হৃদরোগ, ডায়াবেটিস,উচ্চ রক্তচাপ, মানসিক অবসাদ, ক্লান্তি ইত্যাদি দেখা দেয়।

পছন্দের খাবার কোমল পানিয়। ছোট বড় সবার খুব পছন্দের খাবার। যে কোন দাওয়াতে কোমল পানিয় থাকতেই হয়। এছাড়া গরমে শান্তির ছোঁয়া পেতে কোমল পানিয়ই যেন একমাত্র ভরসা । এই কোমল পানিয় আমাদের সাময়িক তৃপ্তি ছাড়া আর কোন কিছুই দেয় না। বরং এর মধ্যে থাকা চিনি,ঘন চিনি,আর্টিফিশিয়াল সুগার বা কৃত্রিম চিনি থাকে যা আমাদের দেহের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। ওজন বৃদ্ধি সহ নানা ধরনের রোগ তৈরি ছাড়াও রুচি নষ্ট করে দেয় এসমস্ত কোমল পানিও।

আজকাল প্রায় অনেক খাবারেই টেস্টিং সল্ট ব্যবহার করা হয় যা শরীরের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। যেমন-- চিপস্,সুপ,ফ্রাইড রাইস,ফ্রাইড চিকেন, নুডলস্ ইত্যাদি। এসব খাবার আমরা প্রায়ই খেয়ে থাকি এবং খুব মজা করে খাই। এসব খাবার দেহের বারোটা বাজিয়ে ছাড়ে। টেস্টিং সল্ট দেয়া খাবার শিশুদের জন্য মারাত্নক ক্ষতিকর। শিশুদের মেজাজী, অমনোযোগী, মার মুখো করে তোলে। এছাড়া গর্ভবতী মার গর্ভের সন্তানের উপর খারাপ প্রভাব পরে ফলে মানসিক প্রতিবপ্রতিবন্ধী শিশু জন্ম লাভ করতে পারে।

আমাদের দেশে স্কুলগামী প্রায় সব বাচ্চারাই স্কুল ছুরির পর বা টিফিন পিরিয়ডে যত খাবারগুলো খায় সেগুলো হচ্ছে - চটপটি, আচার,ভেলপুরি, ঝালমুড়ি, ইত্যাদি। এসমস্ত খাবার বড়দেরও খুব পছন্দের যা খুবই অস্বাস্থ্যকর। এসমস্ত খাবারে বাইরের ধুলোবালি, মশা-মাছি বসে নানাধরনের জীবানু ছড়াচ্ছে এছাড়া নোংরা হাতে এগুলো পরিবেশন করা হয় যা অস্বাস্থকর, চটপটি তে যে টক টা ব্যবহার করা হয় তা নোংরা জীবানু যুক্ত পানি দিয়ে তৈরি করা হয়। এসমস্ত খাবার খেলে ডায়রিয়া, টাইফয়েড ,আমাশয়,জন্ডিস ইত্যাদি রোগ হয়।

রাস্তায় প্রায়ই দেখা যায়, এলোভেরার জুস,বিভিন্ন গাছের শিকড়ের জুস, আখের রস,লেবু পানি ইত্যাদি নিয়ে বসে আাছে । খুব স্বাস্থ্য সচেতন যারা তারা ভোর বেলা জগিং করে বাড়ি ফেরার পথে এক গ্লাস খেয়ে নেন। কেউ আবার ক্লান্তি দূর করতে অথবা কেউ কেউ আবার খুবিই স্বাস্হ্যকর পানিয় ভেবে পান করেন। এসমস্ত পানিয় স্বাস্থ্যের জন্য অবশ্যই ভাল। তবে রাস্তায় যারা এগুলো নিয়ে বসে থাকে তা খুবই অস্বাস্থ্যকর কারণ এতে যে পানি ব্যবহার করা তা সাধারণ কল থেকে নেয়া জীবাণু যুক্ত পানি। এবং একই গ্লাস ভাল করে না ধুয়ে অন্য আরেক জন কে খেতে দিচ্ছে। এসব পানিয় খেলে ডায়রিয়া, আমাশয়, জন্ডিস, টাইফয়েড ইত্যাদি রোগ হওয়া স্বাভাবিক।

শুটকি মাছ। অনেকেরই ভীষন প্রিয় একটা খাবার। শুটকি মাছে যেন পোকামাকড় না ধরে সেজন্য এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের পোকামাকড় নিধনকারী ওষুধ দেয়া হয়। যা দেহে প্রবেশ করে নানা ধরনের স্বাস্থ্য সমস্যা তৈরি করতে পারে এমন কি নিয়মিত ভাবে এই বিষাক্ত পদার্থ দেহে প্রবেশ করলে কিডনি অকেজো হয়ে যেতে পারে।

সুতরাং এসমস্ত অস্বাস্থ্যকর খাবার গুলো যদি আমরা না খাই তাহলে এবং আমাদের দৈনিক খাবার তালিকা থেকে বাদ দেই তাহলে আমরা অনেক গুলো রোগ থেকে নিজেদের বাচাঁতে পারবো।

মাহফুজা নাসরীন (শম্পা)

ক্লিনিক্যাল ডায়টিশিয়ান, ইমপালস্ হসপিটাল, তেজগাঁও, ঢাকা।


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি