ঢাকা, বুধবার   ০৯ জুলাই ২০২৫

জীবিত ফিরতে পারব কল্পনায়ও ছিল না

প্রকাশিত : ০৯:৩০, ২৯ মার্চ ২০১৯

Ekushey Television Ltd.

ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের পর এফ আর টাওয়ারের বিভিন্ন ফ্লোরে আটকেপড়া নারী-পুরুষ প্রত্যেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন। একদিকে আগুনের প্রচণ্ড তাপ, অন্যদিকে কালো ধোঁয়া, এ কারণে সিঁড়ি বেয়ে নামার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন তারা।

সুবিধাজনক স্থানে গিয়ে স্বজনের কাছে ফোন করে নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে বাঁচার আকুতি প্রকাশ করেন।

ধোঁয়ায় শ্বাস নিতেও তাদের ভীষণ কষ্ট হচ্ছিল। কীভাবে উদ্ধার হবেন এই বিপদ থেকে, জীবিত ফিরতে পারবেন তো! তাদের প্রতি মুহূর্ত কেটেছে মৃত্যু আতঙ্কে। মৃত্যুকূপ থেকে উদ্ধার হওয়া একাধিক নারী-পুরুষের কাছ থেকে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।
অন্তত ৫ জন অভিন্ন ভাষায় মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে আসার গল্প বলেন। অনেকেই বলেন জীবিত ফিরতে পারব এটা কল্পনায়ও ছিলো না।

কামাল আতাতুর্ক রোডের এফ আর টাওয়ারটি ২২ তলা। ভবনের সব ফ্লোরেই বিভিন্ন অফিস। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলছেন, দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ভবনের ছয়তলা থেকে আগুন শুরু হয়েছে, কেউ বলছেন সাততলা থেকে আগুনের সূত্রপাত। এ কারণে এর নিচতলার লোকজন খুব সহজেই দ্রুত বের হয়ে আসতে সক্ষম হন।

আটকে পড়েন ছয়-সাততলার ওপর তলার লোকজন। আটকেপড়াদের অনেকের স্বজন ঘটনাস্থলের আশপাশে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েন। মাঝে মধ্যে কেউ কেউ আটকেপড়া প্রিয়জনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেন।

রাজীব নামে এক যুবক জানান, তার চাচাতো ভাই আব্দুস সবুর খান চাকরি করেন ১১ তলার একটি অফিসে। দুপুর ১টার দিকে তিনি ফোন করে আগুনে আটকেপড়ার খবর জানান রাজীবের কাছে। এরপরই স্বজনরা ছুটে আসেন ঘটনাস্থলে। এক পর্যায়ে বিকেল ৪টার দিকে ফায়ার সার্ভিসের উদ্ধার দল ল্যাডার দিয়ে নামিয়ে আনে তাকে। দীর্ঘক্ষণ ধোঁয়ার মধ্যে থাকায় শ্বাস-প্রশ্বাসে সমস্যা হচ্ছে তার। ভর্তি করা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে।

ফায়ার সার্ভিসের সদর দপ্তরের নিয়ন্ত্রণ কক্ষ থেকে জানানো হয়- ৭০ জনকে আহত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে। তাদের কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শাহাবুদ্দিন মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ইউনাইটেড হাসপাতালসহ বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।

বিকেলে কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, আটকেপড়াদের স্বজনরা ভিড় করছেন সেখানে। অ্যাম্বুলেন্সে আহতদের নামানোর সঙ্গে সঙ্গে প্রিয়জনের খোঁজে ভিড় করছেন স্বজনরা। কান্নায় ভেঙে পড়েন তারা। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্ধার হওয়া ৪১ জনকে ভর্তি করা হয় কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে। এর মধ্যে আটজন নারী। সুস্থ হয়ে রাতে বেশ কয়েকজন হাসপাতাল ছেড়ে বাসায় ফেরেন। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয় কয়েকজনকে। এ ছাড়া নিরস চন্দ্র নামে এক শ্রীলংকানকে উদ্ধারের পর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে নেওয়া হলে চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন।

বিকেল ৫টায় কুর্মিটোলা হাসপাতালের চারতলায় দেখা যায়, তাহরিম বারবার কাশছিলেন। মুখ দিয়ে কালো কাশি বের হচ্ছিল তার। তিনি জানালেন, ভবনের ১২ তলায় ডার্ড গ্রুপের সিস্টেম ইঞ্জিনিয়ার হিসেবে কর্মরত তিনি। প্রতিদিনের মতো গতকালও অফিস করছিলেন। দুপুর ১২টা ৫২ মিনিটে তার অফিসের প্রশাসন শাখায় কেউ একজন আগুনের খবর জানায়। এরপরই প্রশাসন বিভাগ থেকে আগুনের খবর দেওয়া হয় ওই অফিসে থাকা ২০-২২ জনকে। দরজা খুলে সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন তারা। তবে নিচ থেকে প্রচণ্ড ধোঁয়া এবং তাপ আসার কারণে নামতে না পেরে আবার ফিরে যান ১২ তলার অফিসে।

তাহরিম বলেন, `আমরা দরজা খুলে সিঁড়িতে আসামাত্র প্রচণ্ড ধোঁয়ায় কাশতে থাকি। সেই সঙ্গে তাপ আসছিল। নামতে পারিনি। দম বন্ধ হয়ে আসছিল। দ্রুত অফিসে ফিরে যাই। চারদিকে কাচ। অফিসের মধ্যে কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যাই। আমরা সবাই একসঙ্গে।`

এক পর্যায়ে বিকেল ৩টার দিকে হাতে তোয়ালে পেঁচিয়ে কয়েকজন কাচ ভেঙে হাত দিয়ে ইশারা করেন। এরপরই ফায়ার সার্ভিসের ল্যাডার পৌঁছায় সেখানে। প্রথমে চারজন নেমে যায়, পরে নামের বাকি ছয়জন। তিনি বলেন, `এখনও কষ্ট হচ্ছে শ্বাস নিতে। মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে এসেছি।`

এফ আর টাওয়ারের নিরাপত্তাকর্মী জাহাঙ্গীর আলমও আটকা পড়েছিলেন আগুনে। তিনি ২২ তলা ভবনের ছাদে থাকেন। সেখানে নিরাপত্তাকর্মীদের থাকার জায়গা। গতকাল যখন আগুন লাগে, তখন তার ডিউটি ছিল না। তিনি ছাদের রুমে ছিলেন। আগুনের খবর শুনে তিনি সিঁড়ি দিয়ে নামার চেষ্টা করেন। তিনি জানালেন, ৯ তলা পর্যন্ত নামার পর প্রচণ্ড তাপ অনুভব করেন তিনি। পাশাপাশি ধোঁয়া ধেয়ে আসছিল ওপরের দিকে। অবস্থা দেখে তিনি ছাদে ফিরে যান। লাফ দিয়ে পাশের আহমেদ টাওয়ারে চলে যান। ওই ভবনের সিঁড়ি বেয়ে নেমে আসেন তিনি।


টিআর/

 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি