ঢাকা, মঙ্গলবার   ২৮ মে ২০২৪

স্বাধীনতার রক্তিম প্রভাত, লাল সবুজ পতাকার অভিযাত্রার সূচনা

প্রকাশিত : ১০:৪৮, ২৩ জুন ২০১৯

‘এটাই হয়তো আমার শেষ বার্তা। আজ থেকে বাংলাদেশ স্বাধীন। সমগ্র বাংলাদেশের জনগণকে আমি আহবান জানাচ্ছি, যে যেখানেই থাকুন, যার যা কিছু আছে, তাই নিয়ে সর্বশক্তিতে দখলদার বাহিনীকে প্রতিরোধ করুন। পাকিস্তানী দখলদার বাহিনীর শেষ সৈন্যটি বাংলাদেশ থেকে বহিষ্কার হবার আগ পর্যন্ত আপনাদের যুদ্ধে লড়ে যেতে হবে। শেষে আমরাই জয়ী হবো।’

২৬ মার্চ ১৯৭১ রাতের দ্বিপ্রহরের অব্যবহিত পরেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষণা দিয়ে যান পাকিস্তানিদের হাতে বন্দী হওয়ার আগমুহূর্তে।

স্বাধীনতার এই ঘোষণা আসে যখন বাংলাদেশের জনগনের উপরে পাকিস্তান বাহিনী শুরু করেছিল ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর গণহত্যা। ঘুমন্ত, নিরীহ, নিরস্ত্র জনগণ কোনো কিছু বুঝে উঠবার আগেই বুলেট আর গোলাবর্ষণে ঝাঁঝড়া হয়ে যায়। তবে গুলির চাইতেও শক্তিশালী প্রতিপন্ন হয় বঙ্গবন্ধুর সেই ঘোষণা।

অতিসংক্ষিপ্ত কিন্তু অনলবর্ষী সেই বার্তা চট্টগ্রামের গুরুত্বপূর্ণ আওয়ামী লীগ নেতা এমএ হান্নানের কাছে তারবার্তায় পৌঁছানো হয়। বার্তাটি যখন মুখে বলে পাঠানো হচ্ছিল তখন দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীর জানোয়ারেরা ধানমণ্ডিতে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে হামলা চালায়।

বাসভবনের চারপাশে তারা ব্যাপক গোলাবর্ষণের মাধ্যমে ত্রাসের সৃষ্টি করে। এক পর্যায়ে জাতির পিতা বেরিয়ে এসে সৈন্যদের থামতে নির্দেশ দেন। মুহূর্তের মধ্যেই বাঙালি জাতির স্থপতিকে জীপে তুলে নেয়া হয়, প্রথমেই সেই নির্মাণাধীন ভবনে নিয়ে যাওয়া হয়, তারা বঙ্গবন্ধুর ভাগ্যে কী আছে সিদ্ধান্তে আসার আগ পর্যন্ত সেখানেই অবস্থান করে।

‘বড় পাখি খাঁচায় বন্দি, ছোট পাখিরা উড়ে গেছে’, সাংকেতিক ভাষায় একজন কর্মকর্তা বার্তা পাঠান জেনারেল টিক্কা খানকে। ‘আমরা কি মুজিবকে আপনার কাছে নিয়ে আসবো?’, অফিসারটি জিজ্ঞেস করে। ‘আমি তার চেহারা দেখতে চাই না’, অবজ্ঞা আর ঘৃণামিশ্রিত উত্তর টিক্কা খানের।

তখন বাঙালির সেই নেতাকে আদমজী ক্যান্টনমেন্ট কলেজে নিয়ে যাওয়া হয় এবং বেশ কয়েকদিন বন্দী করে রাখা হয়। সবশেষে বঙ্গবন্ধুকে বিমানে করে পশ্চিম পাকিস্তানে নিয়ে যাওয়া হয়।

২৫ মার্চের রাত পোহালে ২৬ মার্চের যে দিন আসে, ঢাকার সবখানে সে দিন আগুন জ্বলছিল। ইয়াহিয়া খান, টিক্কা খান আর খাদিম হুসেইন রাজার নির্দেশে ব্যারাক থেকে বের হওয়া পাক সেনারা ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে সব ধরনের বাঙালি নিধনে লিপ্ত হয়। ঢাকা এবং দেশের সর্বত্র তারা হত্যাযজ্ঞ চালাতে থাকে।

জগন্নাথ হলের ছাত্রদের নৃশংসভাবে যাকে যেখানে পাওয়া গেছে হত্যা করা হয়েছে। তেমনি সেখানের বরেণ্য শিক্ষকদেরও। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারকে চূর্ণবিচূর্ণ করে গুড়িয়ে দেয়া হয় গোলার আঘাতে। একই দশা করা হয়েছিল রেসকোর্স ময়দানের কালী মন্দিরকে।

শহরে কারফিউ জারি করা হয়, ফলে সেনারা নির্বিঘ্নে এলোপাতাড়ি গুলি করে হত্যা চালিয়ে যেতে থাকে। এই দৃশ্যই পরবর্তীতে সারাদেশ জুড়ে পুনরাবৃত হতে থাকে। নারকীয় মধ্যযুগ শুরু হয় সারাদেশে। কিন্তু ক্যান্টনমেন্টের বাতাসে স্পষ্ট উল্লাস ছিল প্রতীয়মান।

উচ্চপদস্থ সামরিক কর্মকর্তাবৃন্দ প্রাতরাশে বসেছিলেন যেখানে প্রধান ছিলেন টিক্কা খান। জেনারেল তাকে টেবিলে রাখা কমলা চেখে দেখতে বললেন। ‘এগুলো অনেক ভাল, এগুলো পশ্চিম পাকিস্তানের’, বললেন জেনারেল। প্রায় বছর দশেক পরে সেখানে উপস্থিত কর্মকর্তার মুখে এই তথ্য জানা যায়।

সন্ধ্যা নামলে, পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া রেডিও টেলিভিশনে জাতির উদ্দেশ্যে ভাষণ দেন। তার ভাষণে প্রেসিডেন্ট বলেন পূর্ব পাকিস্তানে সন্ত্রাস চলছিল তাই তারা দমন অভিযান করছেন এবং সেই সাথে আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণাও দেন। ষড়যন্ত্রের নীল নকশা অনুযায়ী তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে দেশদ্রোহী হিসেবে দায়ী করেন।

হাজার মাইল দূরে ঢাকার ক্যান্টনমেন্টে টিক্কা খান এবং অন্যান্য উচ্চপদস্থ সেনা কর্মকর্তাবৃন্দ এক সাথে বসে এই নাটেরগুরুর বক্তৃতা শোনেন। এর বাণী তাদেরকে উচ্ছ্বসিত করে। উল্লসিত কণ্ঠে পাকিস্তানের তথ্য সচিব পশ্চিম পাকিস্তানিদের উদ্দেশ্যে জানান, ‘ইয়ার, ইমান তো তাজা হো গিয়া’ (বন্ধুরা বিশ্বাস আরো দৃঢ় হলো)।

ক্যান্টনমেন্টের বাইরে, লাখে লাখে মানুষ মরছিল। সারা বাংলাদেশ জুড়ে স্বাধীনতা ও মুক্তিলাভের আকুতি দৃঢ় থেকে দৃঢ়তর হতে থাকে। বাতাসে প্রতিরোধ ধ্বনিত হতে থাকে।

সূত্র: বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের অফিসিয়াল ওয়েবসাইট।

এমএস/


Ekushey Television Ltd.





© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি