ঢাকা, শনিবার   ২৮ জুন ২০২৫

‘দুঃসময় থাকবে না, আবারও হবে আলোর পথে যাত্রা’

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ০০:৫৫, ২৮ এপ্রিল ২০২০

Ekushey Television Ltd.

করোনা মোকাবেলায় আশাবাদ ব্যক্ত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমি বিশ্বাস করি যে,এই দুঃসময় থাকবে না, এটি আমরা কাটিয়ে উঠবো। আমাদের কল-কারখানাসহ সবই আবার চালু হবে এবং দেশের অর্থনীতি আবার সচল হয়ে উঠবে। আমাদের আলোর পথের যাত্রা আবারো শুরু হবে।’

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সোমবার সকালে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধ ও সংকট মোকাবেলা সমন্বয়ে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবন থেকে রাজশাহী বিভাগের আট জেলার কর্মকর্তাদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে মতবিনিময়কালে এই আশাবাদ ব্যক্ত করেন। জেলাগুলো হচ্ছে- বগুড়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, পাবনা, রাজশাহী এবং সিরাজগঞ্জ।

ভিডিও কনফারেন্সে জেলা প্রশাসন,জনপ্রিতিনিধি,পুলিশ, র‌্যাব সহ আইনশৃংখলা রক্ষাকারি বাহিনীর সদস্য, সিভিল সার্জন-চিকিৎসক নার্স সহ স্বাস্থ্যকর্মী, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব, সশস্ত্র বাহিনীর প্রতিনিধি, মসজিদের ইমাম, শিক্ষকসহ বিভিন্ন পেশাজীবীর সঙ্গে প্রধানমন্ত্রী মতবিনিময় করেন। স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের সচিবের নেতৃত্বে মহাখালীস্থ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট বিভাগ-দপ্তর এবং আইইডিসিআর ও ভিডিও কনফারেন্সে যুক্ত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন। পিএমও সচিব তোফাজ্জেল হোসেনসহ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের উর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ গণভবন প্রান্তে উপস্থিত ছিলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাইকে রমজানের মোবারকবাদ জানিয়ে আমি এটুকুই বলবো, সকলে আল্লাহর দরবারে কায়মনো বাক্যে দোয়া করেন- করোনাভাইরাস থেকে বাংলাদেশসহ সমগ্র বিশ্বের মানুষ যাতে মুক্তি পায়।’

তিনি বলেন, দুর্যোগ আসে এবং সেই দুর্যোগকে মোকাবেলাও করতে হয়। আজ এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণে দেশের সবাইকে এক হয়ে কাজ করতে হবে।

শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের সবচেয়ে বড় কাজ হলো মানুষকে বাঁচিয়ে রাখা। আর আমাদের জীবন-জীবিকার পথটা উন্মুক্ত রাখা। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে পবিত্র ঈদুল ফিতরকে সামনে রেখেও সরকারের পক্ষ থেকে আরো সহযোগিতা প্রদানের আশ্বাস প্রদান করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ইতোমধ্যেই আমরা চাল এবং টাকা বিতরণ করছি। রমজানের মাঝামাঝি সময়ে ঈদকে সামনে রেখে আমরা আরেক দফায় খাদ্য বিতরণ করবো। যাতে রমজানে কেউ কষ্ট না পান, সেই বিষয়টা অবশ্যই আমরা দেখবো।’

প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘যেসব জায়গায় করোনাভাইরাস বেশি নয়, ধীরে ধীরে সেসব জায়গাগুলো শিথিল করে দিচ্ছি। যাতে মানুষ সাধারণ জীবন-যাপন করতে পারে।’

তিনি বলেন, ‘আপনারা যদি নিজেদের সুরক্ষিত রেখে এই সংক্রমনের হার কমাতে পারেন, যাতে মৃত্যুর হারও কমে, তাহলে আমরা আস্তে আস্তে আপনাদের যোগাযোগ, যাতায়াত, পণ্য পরিবহনসহ অন্যান্য কিছু উন্মুক্ত করে দেব।’ ইতোমধ্যেই পণ্য পরিবহনকে উন্মুক্ত করা হয়েছে বলেও তিনি উল্লেখ করেন।

দুর্ভিক্ষ এড়াতে সাধ্যমতো ফসল উৎপাদন এবং দেশে কোন জমি যেন পতিত না থাকে তা নিশ্চিত করার জন্যও দেশবাসীর প্রতি তাঁর উদাত্ত আহবান পুনর্ব্যক্ত করেন প্রধানমন্ত্রী।

পাশাপাশি একজমিতে একাধিক ফসল ফলানো সহ ঘরের পাশের এক চিলতে জায়গাটুকুও কাজে লাগানো, বাড়ির ছাদে টবে তরি-তরকারি, ফল-মূলের চাষ এবং মৎস্য ও গবাদিপশু প্রতিপালনের ওপর ও গুরুত্বারোপ করেন প্রধানমন্ত্রী।

করোনাভাইরাস পরবর্তী ব্যবসা-বাণিজ্য পরিচালনায় তাঁর সরকার ঘোষিত প্রায় এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদণার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মৎস চাষি থেকে শুরু করে, পোলট্রি, ডেইরি বা যারা কৃষিকাজ ও বিভিন্ন ধরনের ছোটখাটো ব্যবসা করেন তাঁদের প্রত্যেকের কথা চিন্তা করে এবং অন্যান্য দিকে খেয়াল রেখেই এই এক লাখ কোটি টাকার প্রণোদনা দেয়া হচ্ছে। যেখান থেকে মাত্র ২ শতাংশ সুদে টাকা দেয়া হবে, যাতে তাঁরা তাঁদের ব্যবসা চালু রাখতে পারেন।’

শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা ইতোমধ্যে ঋণ নিয়ে ব্যবসা করেছেন, কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে এই কয়মাস সবকিছু বন্ধ থাকায় ঋণের সুদ হয়ে গেছে, সেটার জন্য আপনারা চিন্তা করবেন না। কারণ এই সুদ এখনই নেয়ার কথা নয়। আর এ বিষয়ে আপনাদের সাথে মিটিংয়ের পর অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আবার বসবো। কাজেই এই সুদ যেন স্থগিত থাকে এবং পরবর্তীতে কতটুকু মওকুফ করা যায় এবং কতটুকু আপনারা নিয়মিত দিতে পারেন, সেটা বিবেচনা করা হবে। কজেই দুশ্চিন্তায় ভুগবেন না।’

প্রধানমন্ত্রী বলেন, মানুষের কাজ নেই। বিশেষ করে একেবারে নিম্ন আয়ের লোক, এমনকি ছোটখাটো কাজ করে যারা খায়, তাদের কষ্ট আমরা জানি। কৃষির জন্য পৃথক পাঁচ হাজার কোটি টাকার তহবিল গঠন, যেখানে ৯ হাজার ৫শ’ কোটি টাকা ভর্তুকি দেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি প্রায় ৫০ লাখ পরিবারকে ১০ টাকা কেজি দরে ওএমএস’র চাল বিতরণ কর্মসূচির কথাও উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি আরো বলেন, চলতি বোরো মওসুমে সরকারের পক্ষ থেকে ২১ লাখ মেট্রিক টন ধান-চালসহ খাদ্যশস্য সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করে সংগ্রহ শুরু করা হয়েছে। একইসঙ্গে করোনা মোকাবেলায় ৬৪ জেলায় ৯৫ হাজার মেট্রিক টন চাল ও ৪০ কোটি টাকা আর্থিক সাহায্য প্রদান এবং জেলার ত্রাণ ও করোনাপরিস্থিতি সমন্বয়ে ৬৪ জন সচিবকে ৬৪ জেলার দায়িত্ব প্রদানসহ সরকারের নানামুখি পদক্ষেপের কথাও উল্লেখ করেন।

তাঁর সরকারের সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের ৫০ লাখ সুবিধাভোগীর সঙ্গে আরো ৫০ লাখ যোগ করার জন্য রেশনকার্ড প্রদানের তালিকা প্রণয়নকালে যাদের প্রয়োজন তারা যেন কেউ বাদ না পড়ে তা নিশ্চিত করতে তাঁর নির্দেশের কথাও পুনরোল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘ভিজিডি, ভিজিএফ এবং সামাজিক নিরাপত্তাবলয়ের কর্মসূচির বাইরে যারা রয়েছেন, যারা করোনার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত কিন্তু হাত পেতে চাইতে পারছেন না তাদের প্রকৃত তালিকা করার জন্য আমি আমার দলের নেতা-কর্মীসহ প্রশাসনের সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিচ্ছি।’

করোনাভাইরাস চিকিৎসায় তাঁর সরকারের পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, ‘যারা করোনা রোগীদের দেখাশোনা করছেন তাঁদের প্রণোদনা দিয়েছি। যদি কেউ অসুস্থ হন তাদের বিনা পয়সায় চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছি। সেইসঙ্গে আমরা ৫ লাখ থেকে ৪৫ লাখ টাকা পর্যন্ত সহায়তা দেব। তাদের ভালো-মন্দ দেখছি এবং তারাও যেন সুরক্ষিত থাকে যা যা প্রয়োজন সেটা দিয়ে যাচ্ছি।’

তিনি বলেন, দেশে করোনাপরিস্থিতি মোকাবেলায় বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গাইড লাইন অনুসরণ করে ৩ হাজার ৪৬৪ জন চিকিৎসক অনলাইনে চিকিৎসা সেবা দিয়ে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, ‘যারা করোনাভাইরাস মোকাবেলায় দিন-রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন তাদেরকে আপনাদের সহযোগিতা করতে হবে। সবাই মিলেই আমরা এই পরিস্থিতির থেকে মুক্তি পাব, ইনশাল্লাহ।’

বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, বেসরকারী টিভি এবং রেডিও চ্যানেলে ভিডিও কনফারেন্স সরাসরি সম্প্রচার করা হয়। পাশাপাশি কয়েকটি ফেইসবুক পেইজেও লাইভ ষ্ট্রিমিং যায়।

এর আগে প্রধানমন্ত্রী করোনাভাইরাস পরিস্থিতি নিয়ে পাঁচ দফা পৃথক ভিডিও কনফারেন্সে ঢাকা, চট্টগ্রাম, খুলনা, সিলেট, বরিশাল এবং ময়মনসিংহ বিভাগের ৫১টি জেলার সঙ্গে মতবিনিময় করেন। করোনা সংক্রমন প্রতিরোধে সকলকে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার এবং ঘরে অবস্থান করার জন্য তিনি আহবান জানিয়েছিলেন।
 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি