ঢাকা, শুক্রবার   ১৭ মে ২০২৪

সহসাই উঠছে না র‌্যাবে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা (ভিডিও)

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১১:২৩, ২১ মার্চ ২০২২

বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সংলাপে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটলিয়ানের (র‌্যাব) ওপর থেকে মার্কিন নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারে দেশটির সহযোগিতা চেয়েছে ঢাকা। আর ওয়াশিংটন বলছে, এটি একটি জটিল প্রক্রিয়া, এ বিষয়ে আরও কাজ করতে হবে। ফলে সহসাই উঠছে না র‌্যাবের উপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা। 

রোববার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় বাংলাদেশ ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে এক অংশীদারিত্ব সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সেখানেই জানান হয় বিষয়টি।

এদিকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএস) বলেছে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে মানবাধিকার ইস্যুগুলো সামলানোর ক্ষেত্রে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) কার্যক্রমে ‘অগ্রগতি’র ওপর লক্ষ্য করেছে। এদিকে ঢাকা বলেছে যে, গত ডিসেম্বরে র‌্যাবের বিরুদ্ধে ওয়াশিংটনের নেওয়া পদক্ষেপ সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলায় বাংলাদেশের প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে পারে।

ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশের মধ্যকার চলমান গুরুত্বপূর্ণ দ্বিপক্ষীয় ‘অংশীদারিত্ব সংলাপ’-এ যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতি বিষয়ক আন্ডার সেক্রেটারি ভিক্টোরিয়া নুল্যান্ড ‘আমরা এই (মানবাধিকার) বিষয়গুলোর প্রতিকারে গত তিন মাসে অগ্রগতি দেখেছি।’

নুল্যান্ড অবশ্য এই নিষেধাজ্ঞার কারণে ঢাকার উদ্বেগের কথা স্বীকার করেন। কিন্তু এটিকে একটি ‘জটিল এবং কঠিন’ বিষয় বলে অভিহিত করে তিনি বলেন, “আমাদের নিরাপত্তা এবং সন্ত্রাসবাদ প্রতিরোধে সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।”

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেনের সঙ্গে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় প্রায় ৯০ মিনিট স্থায়ী অষ্টম অংশীদারি সংলাপ থেকে বেরিয়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা এ মন্তব্য করেন। এসময় উভয় দেশের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা তাদের সাথে ছিলেন।

মানবাধিকার লঙ্ঘন ইস্যুতে বাংলাদেশের ‘জিরো টলারেন্স’ নীতির প্রশংসা করে নুল্যান্ড জানান, তিনি সংলাপে মানবাধিকার সংক্রান্ত সমস্যাগুলো সমাধানে ঢাকার পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনেছেন।

তিনি বলেন, “আমরা যখন মানবাধিকার লঙ্ঘন দেখি, মৌলিক আইন লঙ্ঘন দেখি, তখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনই নীরব থাকবে না, তাই আমরা এ সম্পর্কে কথা বলেছি।”

মাসুদ বলেন, “ঢাকা মার্কিন পক্ষকে র‌্যাবের সর্বশেষ উন্নয়ন এবং এর কর্মক্ষমতা এবং ‘চ্যালেঞ্জ’ মোকাবেলায় সরকারের কিছু উদ্যোগের বিষয়ে কিছু  দলিলপত্র দিয়েছে।”

তিনি বলেন, “তবে আলোচনাকালে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছে এবং ব্যাখ্যা করেছে যে এটি কীভাবে ‘সন্ত্রাসবাদ ও আন্তর্জাতিক অপরাধ মোকাবেলায় বাংলাদেশ সরকারের প্রচেষ্টাকে প্রভাবিত করতে পারে।”

তিনি আরও বলেন, “আমরা বিভিন্ন মাধ্যমে  আমাদের আলোচনা (মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাথে নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে) চালিয়ে যাব এবং আশা করি এই সমস্যাটির যথাযথ সমাধান করা হবে।” নুল্যান্ডও এ বিষয়ে সহমত পোষন করেন।

নুল্যান্ড বলেন, “সংলাপে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার বিষয়ে একটি ‘খসড়া চুক্তি’ অনুমোদন করেছে।” এর আগে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা জানান, ওয়াশিংটন চায় ঢাকা জেনারেল সিকিউরিটি অব মিলিটারি ইনফরমেশন এগ্রিমেন্ট (জিএসওএমআইএ) এবং অ্যাক্যুইজিশন ক্রস-সার্ভিসিং চুক্তি (এসিএসএ) শীর্ষক চুক্তি দুটি স্বাক্ষর করুক।

তিনি বলেন, “মুলত জিএসওএমআইএ হলো নিরাপত্তা বিষয়ে আরও কিছু করতে সক্ষম হওয়ার গেটওযয়ে। আজ আমরা একটি খসড়া চুক্তি অনুমোদন করেছি এবং আমরা অত্যন্ত আশাবাদী যে আমরা সমস্যাটি নিষ্পত্তি করতে সক্ষম হব, যাতে আমরা একসাথে সুরক্ষার লক্ষ্যে আরও কিছু করতে পারি এবং এর জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”

মাসুদ বলেন, “দুই দেশের মধ্যে একটি ব্যাপক অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার ক্ষেত্রে বাইডেন প্রশাসনের কাছ থেকে বাংলাদেশের উচ্চ প্রত্যাশা রয়েছে।”

পররাষ্ট্র সচিব বলেন, “রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং নিরাপত্তা ক্ষেত্রসহ আমাদের দুই দেশের মধ্যকার দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের পুরো বিষয় নিয়ে আজ আমাদের একটি খোলামেলা, বিস্তৃত এবং বেশ ফলপ্রসূ আলোচনা হয়েছে।”

তিনি বলেন, “উভয় পক্ষ উচ্চ-পর্যায়ের সফর বিনিময়, বিনিয়োগ, বাণিজ্য সুবিধা, সংযোগ, শক্তিশালী প্রতিরক্ষা এবং নিরাপত্তা সহযোগিতার মতো এখনও কাজে লাগানো হয়নি এমন সম্ভাবনার ক্ষেত্রেও মত বিনিময় করেছে।”

ইউক্রেন সংকট নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের অবস্থানকে কীভাবে দেখেছে এমন প্রশ্নের উত্তরে নুল্যান্ড বলেন, “আজকে উভয় পক্ষই এই ইস্যুতে একটি ‘কার্যকরী আলোচনা’ করেছে। তবে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল বিশ্বজুড়ে ‘স্বৈরাচার ও গণতন্ত্রের মধ্যে’ যুদ্ধের পক্ষে।”

তিনি বলেন, “ইউক্রেনে কী ঘটছে বাংলাদেশ তা জানে এবং বোঝে এবং এটি হলো একটি গণতান্ত্রিক দেশের ওপর একটি ‘প্ররোচনাহীন নৃশংস আক্রমণ’ এবং এর সার্বভৌমত্ব এবং আঞ্চলিক অখ-তা লঙ্ঘন’ যা রাশিয়া করেছে।”

নুল্যান্ড বলেন, “সব গণতান্ত্রিক দেশকে এখন একসাথে দাঁড়াতে হবে, এবং আমি নিশ্চিত যে আমরা এই (ইউক্রেন সংঘাত) সম্পর্কে সত্য কথা বলতে এবং এই যুদ্ধের অবসান ঘটাতে এবং শান্তি ও নিরাপত্তা পুনরুদ্ধারে চেষ্টায় একসাথে লড়বো।”

তিনি যোগ করেন, “আমরা সবাই যুদ্ধে যাওয়ার পরিবর্তে কূটনৈতিকভাবে এটি সমাধানের চেষ্টা করেছি।”

মাসুদ এই বছরের অংশীদারিত্ব সংলাপকে ‘বিশেষভাবে তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে অভিহিত করেন কেননা দুই দেশ শিগগির তাদের কূটনৈতিক সম্পর্কের ৫০তম বার্ষিকী উদযাপন করবে। এ উপলক্ষে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেনের আগামী ৪ এপ্রিল ওয়াশিংটনে যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনের সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

নুল্যান্ড বলেন, “এ বছরে দুই দেশ বেশ কিছু ধারাবাহিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত হবে এবং আজকের বৈঠক একটি খুব বড় কাজের সূচনা মাত্র যা আমরা এই বছর করতে যাচ্ছি।”

তিনি বলেন, “আগামী মাসে ওয়াশিংটনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের বৈঠকের পর উচ্চ পর্যায়ের অর্থনৈতিক সংলাপ, নিরাপত্তা সংলাপ, একটি পৃথক প্রতিরক্ষা সংলাপ এবং একটি নতুন ইউএস-বাংলাদেশ বিজনেস কাউন্সিল হবে।”

তিনি বলেন, “আমাদের পরিকল্পনা অনুযায়ী পুরো সুবিধা নিতে হবে। আমাদের ইতিমধ্যেই একটি অত্যন্ত শক্তিশালী ও গভীর পঞ্চাশ বছরের পুরানো অংশীদারিত্ব রয়েছে (এবং) আমরা একসাথে আরও অনেক কিছু করতে পারি এবং আমরা করব।”

তিনি আরও উল্লেখ করেন যে, মার্কিন যুক্তর্রাষ্ট্র বাংলাদেশে কোভিড-১৯ ভ্যাকসিনের প্রায় ৬১ মিলিয়ন ডোজ অবদান রাখতে পেরে গর্বিত। যা বিশ্বের যে কোনও জায়গার তুলনায় বৃহত্তম পরিমাণ। বাংলাদেশ তার জনসংখ্যার ৮৫ শতাংশকে টিকা দিয়েছে, যা বিশ্বের সর্বোচ্চ রেকর্ডগুলোর অন্যতম।

পরে নুল্যান্ড পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পররাষ্ট্রন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
সূত্র: বাসস
এসএ/
 


Ekushey Television Ltd.


Nagad Limted


© ২০২৪ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি